মর্টার শেল নিক্ষেপ,: রোহিঙ্গা নিহত, আহত ছয়জন

আগের সংবাদ

মাঠে মারমুখী আওয়ামী লীগ

পরের সংবাদ

পণ্যে ৫-১০ শতাংশ ছাড় দিয়ে বিক্রির দাবি সুপারশপগুলোর

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশের সুপারশপগুলো প্রতিদিন দেড় শতাধিকেরও বেশি পণ্যে ৫-১০ শতাংশ ছাড় দিয়ে বিক্রি করছে। এমন প্রেক্ষাপটে দেশের সুপারশপগুলো সাধারণ বাজারের তুলনায় বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছে- এমন অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দেশের মোট বাজারের সর্বোচ্চ দুই শতাংশ অবদান রাখছে সুপারশপগুলো। সেখানে দেশের মোট বাজারের পণ্যমূল্যের ওপর সুপারশপগুলো কোনোভাবেই প্রভাব বিস্তার করে না। এছাড়া সুপারশপগুলো উৎপাদকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে প্যাকেটজাত পণ্যের দাম নির্ধারণ করে- এমন অভিযোগও শতভাগ ভিত্তিহীন। উৎপাদকের ওপর প্রভাব বিস্তার করার সক্ষমতা সুপারশপগুলোর নেই বলেও জানিয়েছেন তারা।
সুপারশপ কর্তৃপক্ষ বলছে, সাধারণ বাজারের তুলনায় সুপারশপে মূল্য বেশি- এমন অভিযোগ ঠিক নয়। সাধারণ বাজারের পণ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও সুপারশপের পণ্যের মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। সুপারশপগুলো সবসময়ই পণ্য ও সেবার মান নিশ্চিত করে। তবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শফিকুজ্জামানের মত ভিন্ন। তার মতে, সুপারশপগুলো উৎপাদনকারীর সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে নানা জাতের চালের প্যাকেটের গায়ে বাজারের তুলনায় বেশি দাম নির্ধারণ করে এমআরপি (সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য) লিখে বিক্রি করে। তবে গত মঙ্গলবার এ নিয়ে উৎপাদনকারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার মতামতে ভিন্নতা এসেছে।
বিষয়গুলো সরকারের নজরে আনতে বাংলাদেশ সুপারশপ ওনার্স এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর সংগঠনের পক্ষ থেকে সভাপতি কাজী ইনাম আহমেদের সই করা চিঠিতে জানানো হয়েছে, ৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত দ্রব্যমূল্য নিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বক্তব্য একপাক্ষিক ও ভিত্তিহীন। সুপারশপগুলো পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে প্রভাবিত করে এমআরপি নির্ধারণ করে না। উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোই পণ্যের এমআরপি নির্ধারণ করে দেয়। সেক্ষেত্রে পণ্যের মোড়কে লেখা মূল্যের সঙ্গে বাড়তি দাম সংযোজন বা বিয়োজন করার কোনো সুযোগ নাই। চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, সুপারশপগুলো ইরি ২৮ চাল মিনিকেট নামে বিক্রি করছে- মহাপরিচালকের এমন বক্তব্যও সঠিক নয়। কারণ দেশের চালকল মালিকেরা বা চাল উৎপাদনকারীরা মিনিকেট নামে চাল সারাদেশে বাজারজাত করছেন। কাজেই সুপারশপ কর্তৃপক্ষ মিনিকেট চালের নামকরণের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, সুপারশপগুলো প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজেদের টিকেয়ে রাখতে বাজারের তুলনায় কম দামে পণ্য বিক্রি করে ব্যবসা করছে। এখানে ক্রেতাদের পদে পদে প্রতারিত করার কোনো সুযোগ নেই।
চিঠি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, আমরা একটা সমাধানে যাচ্ছি। আমরা বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের চিঠি দিয়েছি। তারা আমাদের প্রতিবেদন দেবেন। খাদ্যমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রী তো চালের দাম নিয়ে কথা বলেছেন। এখন সুপারশপ কর্তৃপক্ষ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কথা বলতেই পারে। কিন্তু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিটি যেহেতু আমি এখনো পাইনি, সেহেতু এটি নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারি না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুপারশপ স্বপ এর নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির জানান, সুপারশপগুলো প্রতিদিন ১৫০টিরও বেশি পণ্যে ১০ শতাংশ ছাড় দিয়ে বিক্রি করছে।
ফলে সুপারশপ থেকে ক্রেতারা কাঁচাবাজারের তুলনায় কম দামে পণ্য কেনার সুযোগ পাচ্ছে। একটা জায়গা আমরা ভাড়া নিচ্ছি, যেখানে এসি থাকে। স্বাস্থ্যগত বিষয় মাথায় রেখে আমাদের চিলারগুলোতে মাছ-মাংস ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয়। তার জন্য ইলেক্ট্রিসিটি চার্জ আছে। সবকিছু যদি যোগ করা হয় তাহলে আমাদের পরিচালন ব্যয় ২২ শতাংশের বেশি, কিন্তু আমাদের পরিচালন মুনাফা ০.৫ শতাংশেরও নিচে। একইসঙ্গে তিনি জানান, উৎপাদকদের প্রভাবিত করার মতো শক্তি বা ক্ষমতা দেশের সুপারশপগুলোর নেই। কারণ তাদের পণ্য বিক্রির পরিমাণ বাজারে প্রভাব ফেলার মতো নয়। দেশের মোট বাজারের ২ শতাংশ মার্কেট শেয়ার রয়েছে সুপারশপগুলোর। এই শেয়ার নিয়ে মোট বাজারের পণ্যের মূল্যে প্রভাব ফেলা সম্ভব নয়।
এ প্রসঙ্গে মিনা বাজারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহীন খান বলেন, সুপারশপগুলোতে বিক্রি হওয়া পণ্যের মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। দেশি ডাল মানে দেশি ডাল, নদীর মাছ মানে নদীর মাছ। দেশির সঙ্গে বিদেশি বা নদীর সঙ্গে সাগর মিশিয়ে পণ্য বিক্রি করার প্রশ্নই ওঠে না। কাজেই সুপারশপগুলো দেশি ডালের দামই রাখবে। নদীর মাছের দামই রাখবে। তিনি বলেন, সুপারশপগুলো ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করে না। পাইকারি ও খুচরা বাজারে মিনিকেট নামে হাজার হাজার বস্তা চাল বিক্রি হচ্ছে। এটি আমাদের দেয়া নাম নয়। সরকার যদি কাল এ চালের নাম পরিবর্তন করে অন্য নাম দেয়, তাহলে আমরা অন্য নামেই বিক্রি করব। কোনো আপত্তি নাই। একইভাবে চালের উৎপাদক কোম্পানিগুলোকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা আমাদের নেই। কাজেই তাদের প্রভাবিত করে এমআরপি নির্ধারণ করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। শাহীন খান বলেন, প্রতিযোগিতার এ বাজারে আমরা অনেক স্থানেই ক্রেতাদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় না করে নিজেরাই দিয়ে দিচ্ছি। এতে সুপারশপগুলো মুনাফা হারাচ্ছে। এভাবেই আমরা ব্যবসা চালিয়ে আসছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়