মর্টার শেল নিক্ষেপ,: রোহিঙ্গা নিহত, আহত ছয়জন

আগের সংবাদ

মাঠে মারমুখী আওয়ামী লীগ

পরের সংবাদ

ক্ষুব্ধ সিলেটের সংস্কৃতি কর্মীরা : ঐতিহ্যবাহী সারদা ভবন এখন সিসিকের ভাগাড়!

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ফারুক আহমদ ও জাহিদুল ইসলাম, সিলেট ব্যুরো : সিলেটের এতিহ্যবাহী সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র, সাংস্কৃতিক মিলনায়তন ‘সারদা স্মৃতি ভবন’-এর হলে আবারো প্রাণ চাঞ্চল্য ফেরাতে এবার মাঠে নেমেছেন ক্ষুব্ধ সংস্কৃতি কর্মীরা। সংস্কৃতি কর্মীদের মতে ঐতিহ্যবাহী এই সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রকে ভাগাড়ে পরিণত করেছে সিটি করপোরেশন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ডিও লেটার আর সংস্কৃতি কর্মীদের দাবির পরও সংস্কার হচ্ছে না ভবনটি। এ কারণে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর সারদা হল ভবন খুলে দেয়ার দাবিতে এক সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট।
সিলেট শহরের সুরমা নদীর তীরে চাঁদনীঘাট এলাকায় ১৯৩৬ সালে নির্মাণ করা হয় ‘সারদা স্মৃতি ভবন’। সংস্কৃতি চর্চার বিকাশে সিলেটের এক ব্যবসায়ী পরিবার ৩৯ শতক জমিতে কলকাতা ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটের আদলে মিলনায়তনটি নির্মাণ করে। এরপর থেকে সিলেটের প্রথম এ মিলনায়তনে গান, নাটকসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। পর্যায়ক্রমে সিলেট পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়ে আসছে ভবনটি। তবে কয়েক বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী এ ভবনকে ভাগাড়ে পরিণত করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। সারদা হল প্রাঙ্গণে ফেলে রাখা হয়েছে সিসিকের বিকল গাড়িসহ

যন্ত্রাংশ। মিলনায়তনের ভেতরে ফেলে রাখা হয়েছে বইয়ের স্তূপ। এর ফলে সারদা হলে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। ঐতিহ্যবাহী এই ভবনটি অযতেœ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর পীর হাবিবুর রহমান পাঠাগারের বই দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় বেশির ভাগ বই নষ্ট হয়ে গেছে। মূল ভবনটিও নষ্ট হয়ে গেছে। সারদা হলের পাশেই সিলেটের আরো দুই ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা কিনব্রিজ ও আলী আমজাদের ঘড়ি। এসব স্থাপনার আশপাশ দখল করে গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান হিসেবে ব্যবহার করছে সিটি করপোরেশন। এতে সেখানে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকরাও পড়েন বিপাকে।
এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে। বিভিন্ন স্থানে ধরনা দিয়েও কোনো সুফল পাচ্ছেন না তারা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সাংসদ ড. এ কে আব্দুল মোমেন সারদা হল চত্বরের জঞ্জাল সরিয়ে দেয়ার জন্য সিসিক মেয়রের কাছে ডিও লেটার পাঠিয়েছেন গত বছর। কিন্তু কাজের কাজ কিছু না হওয়ায় সম্প্রতি সংস্কৃতি কর্মীরা আবারো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শরণাপন্ন হলে এবার তিনি সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহীকে এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন।
জানা যায়, সিলেট নগরীর বন্দরবাজার এলাকার পুরনো নগরভবন ভেঙে নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। এ সময় সুরমা নদীর তীরের তোপখানা এলাকায় সিটি করপোরেশন পরিচালিত ‘পীর হাবিবুর রহমান পাঠাগারে’ সিসিকের অফিস অস্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা হয়। সে সময় সিসিকের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, নতুন নগর ভবনের কাজ শেষ হওয়ার পর পুনরায় পীর হাবিবুর রহমান পাঠাগার চালু হবে এবং সারদা হল সংস্কৃতি চর্চার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। এরপর ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে সিসিকের নবনির্মিতের ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর স্থায়ী ভবনে নিয়ে আসা হয় সিসিকের কার্যক্রম। তবে স্থায়ী ভবনে আসার প্রায় আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত চালু হয়নি পীর হাবিবুর রহমান পাঠাগার। সারদা হলও সংস্কৃতি চর্চার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়নি। উল্টো এ ভবনটিতে সিসিকের পরিত্যক্ত গাড়ি, যন্ত্রাংশ রেখে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, সারদা হল কমপ্লেক্সের ভেতরে এবড়ো-থেবড়োভাবে সিসিকের বিকল হয়ে যাওয়া গাড়িগুলো ফেলে রাখা হয়েছে। পানির গাড়ি, বুলডোজারের যন্ত্রাংশও ফেলে রাখা হয়েছে আঙিনাজুড়ে। সিসিকের কয়েকজন কর্মচারীর আবাসন ব্যবস্থাও করা হয়েছে এই চত্বরে। আর পীর হাবিবুর রহমান পাঠাগার থেকে আনা বই দীর্ঘদিন থেকে হল রুমে স্তূপ করে ফেলে রাখার কারণে বেশির ভাগ বই-ই ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। মূল ভবনটিও অবহেলায় নষ্ট হয়ে পড়ছে।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, সিসিকের নিজস্ব কোনো পার্কিং এলাকা নেই। ফলে আমাদের গাড়িও নদী তীরবর্তী এলাকায় পার্কিং করা হয়। পার্কিং প্লেসের জন্য একটি জায়গা অধিগ্রহণের পরিকল্পনা আমাদের আছে। যেখানে গাড়ি মেরামতের ব্যবস্থাও থাকবে। শিগগিরই এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি পাঠানো হবে। নিজস্ব পার্কিং প্লেস হয়ে গেলে নদী তীরবর্তী জঞ্জাল আর থাকবে না। সারদা হল সংস্কার এবং সংস্কৃতি চর্চার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়টি মেয়র দেখভাল করছেন। তিনিই এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন। সিলেট সিটি মেয়র আরিফল হক চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে হোম আইসোলেশনে আছেন। মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশু বলেন, এই ভবনটি সংস্কার করে পুরো এলাকা নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স করার দাবি আমরা জানিয়ে আসছি। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের কাছেও এ দাবি জানিয়েছি। তারা সরজমিন পরিদর্শন করে আমাদের দাবির সঙ্গে একমতও হয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সিসিকের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে ডিও লেটারও প্রদান করেছেন। মিশু বলেন, সিসিক মেয়রও আমাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ঐতিহ্যবাহী এ ভবন থেকে সিসিকের জঞ্জাল সরিয়ে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু তিনি কেবল সময়ক্ষেপণ করেই চলছেন।
সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত ভোরের কাগজকে বলেন, সারদা হল নিয়ে দীর্ঘদিনের দাবি আমারে। কিন্তু সিটি করপোরেশন এ ব্যাপারে কর্ণপাত করছে না। নগর ভবন নির্মাণের সময় কথা ছিল ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হলে পীর হবিবুর রহমান পাঠাগার তার আগের অবস্থানে চলে যাবে এবং সারদা ভবন আগের মতোই সংস্কৃতিচর্চার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। দুঃখজনক হলেও সত্যি, নগর ভবন নির্মাণের চার বছর পেরুলেও সারদা ভবন আর উন্মুক্ত হয়নি। তিনি বলেন, এখন রাস্তায় নেমে আন্দোলন করা ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ খোলা নেই। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর থেকে আমরা সিলেটের সর্বস্তরের সংস্কৃতি কর্মীরা সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ নিয়ে মাঠে নামছি। শুধু সংস্কৃতি কর্মীরাই নন, অবিলম্বে সারদা স্মৃতিভবন থেকে সিসিকের জিনিসপত্র সরিয়ে আবারো তা উন্মুক্ত করার দাবি সিলেটের বিশিষ্টজনদের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়