মর্টার শেল নিক্ষেপ,: রোহিঙ্গা নিহত, আহত ছয়জন

আগের সংবাদ

মাঠে মারমুখী আওয়ামী লীগ

পরের সংবাদ

এডিটরস গিল্ডের গোলটেবিল বৈঠক : ইভিএমে স্বচ্ছ নির্বাচন সম্ভব প্রয়োজন ভোটারদের আস্থা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ব্যালটের চেয়েও স্বচ্ছ নির্বাচন সম্ভব। এর মাধ্যমে কারচুপি করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তবে ভোটারদের আস্থা না থাকলে ইভিএমে যত ভালো নির্বাচনই হোক, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অবান্তর নয়। এ অবস্থায় অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য ইভিএম ব্যবহারে ভোটারদের আস্থা ফেরানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশ্লেষকরা। অবশ্য এক্ষেত্রে ভিন্নমতও রয়েছে। গতকাল শনিবার এডিটরস গিল্ড বাংলাদেশের আয়োজনে ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও ইভিএম’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা। রাজধানীর বনানীতে ঢাকা গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত বৈঠক সঞ্চালনা করেন এডিটরস গিল্ড সভাপতি মোজাম্মেল বাবু।
বৈঠকে সূচনা বক্তব্য দেন সিনিয়র সাংবাদিক ও এডিটরস গিল্ডের প্রেসিডিয়াম সদস্য নাঈমুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, সবকিছু নিয়েই পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক হয়। তবে ইভিএম নিয়ে ‘কমন গ্রাউন্ডে’ আলোচনা হতে পারে। সঠিক-বেঠিকের বিষয় নয়, এর কতটা ইতিবাচক ও কতটা নেতিবাচক দিক আছে, তা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে বরং ইভিএম অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে কতটা যুক্তিযুক্ত, সেটাই আলোচনার বিষয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে শিক্ষাবিদ, লেখক ও প্রযুক্তিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, আমি ইভিএমের বিভিন্ন অংশ দেখতে যন্ত্রটি খুলে রাখতে বলেছিলাম। আমাকে যেটি দেখানো হয়েছে, তার হার্ডওয়্যার থেকে শুরু করে সবকিছু আমি দেখেছি, তারা খুব সুন্দরভাবে এটি করেছেন। ক্যাবলসহ সবকিছু স্পেশালি কাস্টমাইজড (বিশেষায়িত) করে তৈরি করা। অন্য কোনো যন্ত্রাংশ বা ডিভাইস এতে যুক্ত করার সুযোগ নেই। এজন্য আমি তাদের (উদ্ভাবকদের) অভিনন্দিত করতে চাই।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন বলেন, সব ইভিএম মেশিনের স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ওপর সবাইকে আস্থা রাখতে হবে। আগের ইভিএমের চেয়ে এখনকার মেশিনগুলো অনেক উন্নত। সব ধরনের অনিয়ম বন্ধে এটি আনা হয়েছে। কারো সন্দেহ থাকলে নিজেই পরীক্ষা করে দেখে আসেন। একটিতে না হলে ৫০টি মেশিন পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে কিছু সমস্যা হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিমানবন্দরেও এরকম সমস্যায় পড়তে হয়। ইভিএমে এটি অনেকের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে, সময় লাগতে পারে। এটি ভোটারদের জন্য বড় অন্তরায়। তিনি বলেন, ভারতেও ভিভিপ্যাটের বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। এখন ভোটারদের আস্থা না থাকলে ইভিএমে যত ভালো নির্বাচনই হোক, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
বুয়েটের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান বলেন,

ইভিএমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সবকিছু ‘লকড’। তারপরও কথা রয়েছে। এই মেশিন সম্পর্কে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে না। ইভিএম নিয়ে অনীহার এটিও একটি কারণ হতে পারে। মাঠপর্যায়ের মানুষের কাছে ইভিএম নিয়ে যেতে হবে।
ইভিএম উদ্ভাবন কমিটির সদস্য ও বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ভোটকেন্দ্র দখল, একজনের ভোট আরেকজনের দেয়া, আগের রাতেই ভোট দেয়া, ভোটের পর ফল পরিবর্তন হয়ে যাওয়া, এসব বন্ধ করতেই ইভিএম আনা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে এগুলোর কোনোটিই সম্ভব নয়। ইভিএমে ভোটের স্বচ্ছতার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, ইন্টারনেটসহ কোনো ধরনের সংযোগ নেই। এক্সটার্নাল (বাহ্যিক) ডিভাইসও যুক্ত করার সুযোগ নেই। ফলে ইভিএমে স্বচ্ছভাবে ভোট নেয়া সম্ভব, কোনো ধরনের কারচুপির সুযোগ নেই।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও ইভিএম মেশিনে নির্বাচন নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তখনই হবে, যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার আস্থা আসবে। নির্বাচন কমিশনের ওপর সেই আস্থা আছে কিনা, সেটি মূল প্রশ্ন। এক্ষেত্রে ইভিএমে ভোট হওয়ার পরও আমরা সীমাবদ্ধতাগুলো দেখেছি। এর মধ্যে ভোটকেন্দ্রের বুথ ক্যাপচারও (দখল) আছে। তিনি বলেন, ইভিএমে আঙুলের ছাপ ওভাররাইটের ক্ষমতা ১ শতাংশ না ৫০ শতাংশ দেয়া হলো, তা তো বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। এই একটা বিষয়ই নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দিতে পারে। এজন্য সন্দেহ আছে। ব্যালটের চেয়ে ইভিএমে ভোট কম পড়ার ঘটনাও আমরা দেখেছি, আরো অনেক বিষয় নিয়ে বিতর্ক আছে। এখন নির্বাচন কমিশনকে আস্থা ফেরাতে হবে।
বৈঠকে ভিভিপ্যাটের (ভোটার ভেরিফায়েড পেপার অডিট ট্রেইলিং) বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন আলোচকরা। ভিভিপ্যাট মূলত ইভিএমের সঙ্গে যুক্ত করা একটি যন্ত্র। এর মাধ্যমে ভোট ঠিকমতো দেয়া হয়েছে কিনা, তা জানা যায়। ভিভিপ্যাট থেকে একটি কাগজের স্লিপ বের হয়, কেউ ইভিএমের বোতামে চাপ দিলে সঙ্গে সঙ্গে একটি স্লিপ বের হয়ে পাশের বাক্সে জমা হয়।
মানবাধিকার ও উন্নয়নকর্মী খুশি কবীর বলেন, গত ২০ বছর ধরে যত মেশিনে আমি ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়েছি, এক্ষেত্রে আমার সমস্যা হয়ে আসছে। এখন ইভিএম সম্পর্কে মানুষের ধারণা খুবই কম। অনেক দেশে এটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মূল বিষয় হলো- অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। এজন্য সবার আস্থা ফেরাতে হবে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক মনিরা খান বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে এত হাজার কোটি টাকা দিয়ে কেনো ইভিএম কেনার কথা হচ্ছে, দেশবাসীর পক্ষ থেকে আমি সেই প্রশ্নটি রাখতে চাই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়