পল্টনে তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য-হকার সংঘর্ষে আহত ৬

আগের সংবাদ

জোয়ারের পানিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি : কলাপাড়ার ৬০ কিলোমিটার সড়কের অধিকাংশই কাঁচা

পরের সংবাদ

শেয়ার দরে দাপট জুট স্পিনার্সের

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : গত সপ্তাহজুড়ে শেয়ারবাজারে দরপতন চললেও দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে জুট স্পিনার্স। যদিও লোকসানে পতিত হয়ে বছরের পর বছর বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি। এই কোম্পানিটির শেয়ার এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের পছন্দের শীর্ষে থাকায় সপ্তাহজুড়েই দাম বেড়েছে। ফলে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার শীর্ষস্থান দখল করেছে কোম্পানিটি।
সবশেষ সপ্তাহজুড়ে জুট স্পিনার্সের শেয়ারের দাম বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ। টাকার অঙ্কে বেড়েছে ৬৩ টাকা ১০ পয়সা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ২২৭ টাকা ৭০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ১৬৪ টাকা ৬০ পয়সা। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসেই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ডিএসইর মাধ্যমে ঘোষণা দেয়া হয় জুট স্পিনার্স পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছে। নানা সমস্যায় পড়ে ২০১৬ সালের জুনে এই কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর ঘোষণা আসার পর কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ার পালে আরও হাওয়া লাগে। বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ১৮ টাকা ৩০ পয়সা বা ৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ বাড়ে। পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর ঘোষণায় শেয়ারের এমন দাম বাড়লেও কোম্পানিটি সর্বশেষ কবে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছে তার কোনো তথ্য ডিএসইর ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়নি। তবে ডিএসইর মাধ্যমে সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটি ২০২১ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি ৩২ টাকা ৫০ পয়সা লোকসান করেছে। তার আগে ২০১৬ সালে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ৪২ টাকা ১০ পয়সা। এছাড়া ২০১৫ সালে ১৯ টাকা ৬৯ পয়সা, ২০১৪ সালে ৪৩ টাকা ৬৪ পয়সা এবং ২০১৩ সালে ৪৮ টাকা ১৪ পয়সা শেয়ারপ্রতি লোকসান করে প্রতিষ্ঠানটি। লোকসানে নিমজ্জিত হওয়ায় বছরের পর বছর বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দিতে পারেনি কোম্পানিটি। ফলে শেয়ারবাজারে ‘জেড’ গ্রুপ বা পচা কোম্পানির তালিকায় স্থান হয়েছে কোম্পানিটির। মাত্র এক কোটি ৭০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এই কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ১৭ লাখ। এর মধ্যে ৩৯ দশমিক ৮২ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে।
বাকি শেয়ারের মধ্যে ৩৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ শেয়ার আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ২৩ দশমিক ২০ শতাংশ। সীমিত সংখ্যক শেয়ার হওয়ার কারণে কোনো বিশেষ চক্র এমন লোকসানি কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ডিএসইর একাধিক সদস্য বলেন, ভালো লভ্যাংশ দেয়ার পরাও অনেক কোম্পানির শেয়ারের দাম তলানিতে পড়ে রয়েছে। অথচ জুট স্পিনার্সের মতো লোকসানি কোম্পানির শেয়ারের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। যে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয় না, তার শেয়ারের দাম দুইশ টাকার ওপরে। এটা কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারে না। কোনো বিশেষ চক্র কোম্পানিটির শেয়ারের দাম পরিকল্পিতভাবে বাড়াচ্ছে কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখা উচিত। তারা আরও বলেন, উৎপাদন বন্ধ হওয়ার আগে জুট স্পিনার্স খুব ভালোভাবে চলেছে তা নয়। ২০১৬ সালে উৎপাদন বন্ধের আগে ২০১৫, ২০১৪ এবং ২০১৩ সালেও কোম্পানিটি বড় লোকসান করেছে। সুতরাং এখন পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর সংবাদেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম হু হু করে বাড়ার লক্ষণ ভালো না। এমন শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এদিকে, দাম হু হু করে বাড়লেও কোম্পানিটির শেয়ার খুব একটা লেনদেন হয়নি। গত সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। আর প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৯৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। গত সপ্তাহে দাম বাড়ার শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা জেএমআই হসপিটাল অ্যান্ড রিকুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের শেয়ারের দাম বেড়েছে ২৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। ২৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ দাম বাড়ার মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্টে। এছাড়া দাম বাড়ার শীর্ষ দশে স্থান করে নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে জেএমআই সিরিঞ্জ অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইসের দাম বেড়েছে ২৩ দশমিক ২৯ শতাংশ। সোনালী আঁশের দাম বেড়েছে ১৯ দশমিক ৬০ শতাংশ, নর্দান জুট ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ১৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ, এমবি ফার্মার ১৮ দশমিক ২৭ শতাংশ, ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ১৭ দশমিক ৭১ শতাংশ, মুন্নু অ্যাগ্রোর ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং বিডি থাই ফুডের ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশ দাম বেড়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়