পল্টনে তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য-হকার সংঘর্ষে আহত ৬

আগের সংবাদ

জোয়ারের পানিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি : কলাপাড়ার ৬০ কিলোমিটার সড়কের অধিকাংশই কাঁচা

পরের সংবাদ

বিশেষ সুযোগ দেয়া হবে : রেলমন্ত্রী > রেলে আউটসোর্সিং বাতিলের দাবি টিএলআর শ্রমিকের

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : যত ঘণ্টা কাজ তত ঘণ্টা মজুরিতে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রায় ৬-৭ হাজার টিএলআর শ্রমিক। অস্থায়ী ভিত্তিতে রেলওয়ের বিভিন্ন দপ্তরে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন তারা। তবে ২০২০ সালে এক নিয়োগ বিধিতে রেলের বিভিন্ন দপ্তরে স্থায়ী শূন্যপদের বিপরীতে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কর্মরত এসব অস্থায়ী শ্রমিককে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করে রেলের আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে শ্রমিক নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।
যদিও টেম্পোরারি লেবার রিক্রুটমেন্ট (টিএলআর) শ্রমিকদের ব্যাপক আন্দোলনের ফলে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত শ্রমিকদের সরকারের রাজস্ব খাত থেকে বেতন দিতে বাধ্য হয়। তবে গত ১ জুলাই থেকে আর কোনো বাজেট বরাদ্দ বা চাকরির মঞ্জুরি না থাকায় প্রায় ৪ মাস ধরে শ্রমিকরা পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে চলেছেন। এর সঙ্গে চলছে বিক্ষোভ কর্মসূচি। নিয়োগ বিধিতে তাদের বাদ দিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে চাকরি হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন রেলওয়ের প্রায় ৬-৭ হাজার টিএলআর শ্রমিক। সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সব টিএলআর শ্রমিকরা কর্মবিরতিসহ নানা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন। এজন্য গতকাল শুক্রবার মালবাহী ট্রেন চলাচলে বিঘœ ঘটে।
রেলের পূর্বাঞ্চলের মহাপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, আজ (শুক্রবার) সকালে হঠাৎ করে এসব অস্থায়ী শ্রমিকরা ধর্মঘট শুরু করে। বেশ কিছুক্ষণ মালবাহী ট্রেন চলাচলে বিঘœ ঘটে। পরে তাদের বিগত ৩ মাসসহ নিয়মিত বেতন দেয়ার আশ্বাসে তারা ধর্মঘট তুলে নেয়।
তিনি বলেন, সারাদেশে ৫-৬ হাজার এ ধরনের অস্থায়ী শ্রমিক আছেন যারা প্রতিদিন কাজের বিনিময়ে বেতন পান। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে আছেন প্রায় ৩ হাজারের মতো। তবে তারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছেন। এখন চাকরি স্থায়ী করার জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছেন।
রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, রেলের নিয়োগের বিরুদ্ধে মামলা থাকায় কোনো নিয়োগ না দিতে পেরে অস্থায়ী ভিত্তিতে এসব (টিএলআর) শ্রমিককে কাজে নিই, তারা প্রতিদিন কাজের জন্য দিন হিসাবে মজুরি পান। ২০২০ সালের একটা নিয়োগ বিধিমালা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে প্রতিদিন কাজের জন্য মজুরিভিত্তিক এসব পদে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কর্মী নিতে হবে। এটা শুধু রেলে নয়, স্বাস্থ্যসহ প্রায় সব মন্ত্রণালয়েই তা কার্যকর করার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। তবে আমাদের প্রায় সাড়ে ৪ হাজারের মতো দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক রয়েছে। তাদের বিগত ৩ মাসের বেতন-ভাতা বাকি ছিল। তাই তারা আন্দোলন করে। তবে যতদিন আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কর্মী নিতে না পারি ততদিন এদের মজুরি দেয়ার জন্য আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। আর যে সাড়ে ৪ হাজারের মতো কর্মী দৈনিক মজুরিতে কাজ করছে, তাদের অনেক দিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ কারণে এদের আউটসোর্সিংয়ের নিয়োগে বাড়তি সুযোগ দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এদিকে রেলওয়ে ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর এক চিঠির মাধ্যমে পূর্ব/পশ্চিম অঞ্চলকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে ৩ বছরের অধিক সময় কর্মরত অস্থায়ী শ্রমিকদের স্থায়ী করা প্রসঙ্গে একটি কমিটি তৈরির নির্দেশনা দেন। এরপর রেলওয়ে পশ্চিম অঞ্চলে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি পরবর্তীতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অস্থায়ী শ্রমিকদের বেশির ভাগই রেলওয়ের গেটকিপার, পয়েন্টস ম্যান, পোর্টার, বিদ্যুৎ, ক্যারেজ ও অন্য অপারেশনাল কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
বাংলাদেশ রেলওয়ে অস্থায়ী টিএলআর শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় শ্রমিক নেতা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, গত ৩০ জুন এক চিঠির মাধ্যমে চট্টগ্রাম সিআরবিতে হিসাব বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত ৮০ জন অস্থায়ী শ্রমিক, কারখানায় বিদ্যুৎ ও বিভিন্ন দপ্তরের ১৩০ জনকে এবং লালমনিরহাট ডিভিশনের ক্যারেজ শাখা, চট্টগ্রাম ডিভিশনের সিজিপিওয়াই লোকো শাখাসহ সারাদেশে অস্থায়ী শ্রমিকদের অব্যাহতি দেয়া হয়, যা অমানবিক। এতে শ্রমিক অসন্তোষ তীব্র হয়। তিনি বলেন, রেলওয়ের নতুন নিয়োগ বিধিতে আউটসোর্সিং প্রক্রিয়া এনে রেলকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে একটি মহল। প্রায় ৬-৭ হাজার দক্ষ শ্রমিককে ছাঁটাই করার পাঁয়তারা চলছে। এর ফলে রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন, গুরুত্বপূর্ণ লেভেল ক্রসিং বন্ধ হয়ে যাবে। অদক্ষ শ্রমিক নিয়োগের কারণে বাড়তে পারে রেল দুর্ঘটনা। পাশাপাশি অপারেশনাল কর্যক্রমেও ব্যাঘাত ঘটবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে টিএলআর শ্রমিক পরিষদের নেতা শফিকুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অস্থায়ী টিএলআর হিসেবে রাজস্ব খাতের অনুকূলে কর্মরত হাজারো শ্রমিককে অব্যাহতি দিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতিবাদে সারাদেশে রেলওয়ের ৪টি ডিভিশনাল কার্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে। সব বিভাগীয় ব্যবস্থাপককে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।
টিএলআর শ্রমিকদের দাবি- দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ে রাজস্ব খাতে কর্মরত সব টিএলআর শ্রমিকের চাকরি স্থায়ী করতে হবে। আউটসোর্সিংয়ের নামে রেলকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া যাবে না। প্রচলিত টিএলআর প্রথা বহাল রাখতে হবে। রেলওয়ে নিয়োগবিধি ২০২০ সংশোধন করতে হবে। স্থায়ী নিয়োগ কিংবা অস্থায়ী নিয়োগ- সর্বক্ষেত্রে রেল পোষ্যদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, রেলওয়ে একটি বিশেষায়িত জাতীয় প্রতিষ্ঠান। রেলওয়ের স্বার্থ ও মানবিক বিবেচনায় টিএলআর শ্রমিকদের স্থায়ী করতে হবে। আমরা আউটসোর্সিং চাই না। রেলের নতুন আইনে এটা বাতিল করতেও বলা হয়েছে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা। এছাড়া রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালকের কাছেও আবেদন পাঠানো হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়