পল্টনে তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য-হকার সংঘর্ষে আহত ৬

আগের সংবাদ

জোয়ারের পানিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি : কলাপাড়ার ৬০ কিলোমিটার সড়কের অধিকাংশই কাঁচা

পরের সংবাদ

প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা : দুর্গোৎসব সমাগত

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির প্রভাব প্রতিমা তৈরিতেও ** কারিগরের মজুরি বাড়েনি **
সেবিকা দেবনাথ : শরৎকালেও প্রকৃতিতে চলছে বর্ষার আমেজ। কখনো ঝুম বৃষ্টি, কখনো বা থেমে থেমে। মেঘ বৃষ্টির এই খেলার মধ্যেও আকাশজুড়ে ভেসে বেড়াচ্ছে সাদা মেঘের ভেলা। দিগন্তজুড়ে কাঁশফুলের সারি দিন দিনই ঘন হচ্ছে। এই সময়ও কোথাও কোথাও ফুটছে শরতের শিউলি। বাঙালির কাছে শরতের এই বৈচিত্র্য জানান দেয় দুর্গোৎসব সমাগত।
কয়েক সপ্তাহ পরই শুরু হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এই আনন্দ উৎসবকে ঘিরে চারদিকে চলছে আয়োজন। ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা তৈরির কারিগররা। কে কত ভালো প্রতিমা তৈরি করে ভক্তদের হৃদয় ছুঁতে পারেন তারই প্রতিযোগিতা চলছে মণ্ডপে মণ্ডপে। সামর্থ্য অনুযায়ী স্থানীয় ও অন্য জেলা থেকে কারিগর এনে প্রতিমা তৈরি করছেন পূজার আয়োজকরা।
রাজধানীর রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশন, পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, তাঁতিবাজার, বাংলাবাজার নর্থব্রুক হল রোডের জমিদার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে প্রতিমার কাজ প্রায় অধিকাংশই শেষ। কারিগররা জানান, বেনার (খড় দিয়ে কাঠামো) কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। কোথাও কোথাও বেনায় মাটির প্রলেপ দেয়াও শেষ। এখন শুকানোর অপেক্ষা। এর পরই রঙ আর তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হবে দেবীর প্রতিচ্ছবি। প্রতিমা তৈরির প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
তারা জানান, মূলত প্রতি বছর রথযাত্রার পর থেকেই প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেন কারিগররা। বিভিন্ন ধরনের প্রতিমার ক্যাটালগ দেখে আয়োজকরা তাদের বায়না করেন। সেই অনুযায়ী চলে প্রতিমা তৈরির কাজ। দুর্গা প্রতিমার পাশাপাশি গণেশ, কার্তিক, ল²ী ও সরস্বতীর প্রতিমাকে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলতে হয়। মহিষাসুর, সিংহসহ সবার বাহনও কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই সেগুলোকেও দিতে হয় সমান গুরুত্ব। আর এসব মিলিয়েই পরিপূর্ণ হয় একটি প্রতিমা। এই পুরো কাজটি কোনো একক কারিগরের পক্ষে করা সম্ভব নয়। কাঠামোতে বেনা বাঁধা, প্রতিমার চোখ, হাতের আঙুল, মুখমণ্ডল তৈরিসহ প্রতিটি কাজের জন্য ভিন্ন কারিগর। এই একটি প্রতিমার কাজ সম্পূর্ণ করতে ৫/৬ জন করিগরের সময় লাগে ১৫ দিন।
৩ পুরুষ ধরে রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন হরিপদ পাল ও কালীপদ পালের পরিবার। হরিপদ পাল অসুস্থ থাকায় এখন আর আগের মতো প্রতিমা তৈরির কাজ করতে পারেন না বলে জানান ছোট ভাই কালীপদ পাল। মিশনের প্রতিমা ছাড়া কেরানীগঞ্জের আরো দুটি প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন কালীপদ। তিনি বলেন, প্রতি বছরই একই কথা বলতে হয়। জিনিসপত্রের দামের তুলনায় আমাদের মজুরি বাড়ে না। যুগের পর যুগ ধরে এই কাজ করে

এসেছি, এখন না করেও পারি না। একচালার মূর্তির শুধুমাত্র কাঠামো তৈরিতেই খরচ হয় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। নকশাভেদে কাঠামো তৈরিতে ১০ হাজার টাকাও খরচ হয়েছে। প্রতিমা তৈরিতে এঁটেল ও বেলে মাটি ছাড়াও বাঁশ-খড়, দড়ি, লোহা, ধানের কুড়া, পাট, কাঠ, রং, বিভিন্ন রঙের ছিট কাপড় ও শাড়ির প্রয়োজন হয়। এ বছর বন্যায় ধান তলিয়ে গেছে। খড়ের সংকট। দামও বেশি। সুতলি ২শ টাকা কেজি, বাঁশের দামও বেড়েছে। প্রতিটি বাঁশ ৩শ থেকে ৪শ টাকা করে কিনতে হচ্ছে।
জমিদার বাড়ির প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন বলাই পাল। প্রতিবারের মতো এবারো তার তৈরি প্রতিমায় শাঁখারীবাজারসহ বিভিন্ন মণ্ডপে পূজা হবে। তবে হতাশাও প্রকাশ করলেন এই কারিগর। বলেন, পূজা উৎসবে যেমন করোনার প্রভাব পড়েছে তেমনি প্রভাব পড়েছে প্রতিমা কারিগরদের ওপরও। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে তবে মজুরি বাড়েনি।
অস্থায়ী মণ্ডপের পূজার জন্য শিংটোলা এলাকায় প্রতিবছরই তৈরি করা হয়ছে ছোট আকারে বেশ কয়েকটি প্রতিমা। এবারো সেই চিত্র দেখা গেছে। তবে বৃষ্টি থাকায় প্রতিমা শুকাতে সমস্যা হচ্ছে। রাস্তার পাশে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে প্রতিমা। কারিগর তপন পাল বলেন, মাটির প্রলেপ দেয়ার কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এখন শুকানোর অপেক্ষা করছি। তবে গত কয়েকদিন যাবত বৃষ্টি হওয়ায় প্রতিমা রোদে শুকানো যাচ্ছে না।
বংশ পরম্পরায় এই কাজের সঙ্গে যুক্ত শাঁখারী বাজারের প্রতিমার কারিগর সুদীপ পাল। মজুরি কম পাওয়ার অভিযোগ তারও। তিনি বলেন, এ বছর প্রতিটি প্রতিমা তৈরির খরচ ৮০ হাজার টাকা নিলেও আমাদের পোষাবে না।
পঞ্জিকা অনুযায়ী- ২৫ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে মর্তলোকে আহ্বান জানানো হবে দেবী দুর্গাকে। ১ অক্টোবর ষষ্ঠীর মাধ্যমে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। ৫ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়