পল্টনে তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য-হকার সংঘর্ষে আহত ৬

আগের সংবাদ

জোয়ারের পানিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি : কলাপাড়ার ৬০ কিলোমিটার সড়কের অধিকাংশই কাঁচা

পরের সংবাদ

থিয়েটার : দ্য লক্ষণ দাস সার্কাস

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মুক্তি পেতে যাচ্ছে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘দ্য লক্ষণ দাস সার্কাস’। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকারি অনুদানে নির্মিত সিনেমাটি প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন ঝুমুর আসমা জুঁই। সার্কাস শিল্পীদের জীবনের কঠিন লড়াইয়ের বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে এই চলচ্চিত্রে। ষাটের দশকের শুরুতে ‘দি রয়েল পাকিস্তান সার্কাস’ নামে একটি সার্কাসের দল গঠন করেন বরিশালের গৌরনদীর লক্ষণ দাস। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাকে এবং তার সার্কাসের হাতিটিকে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। স্বর্ণ, গহনা, টাকা-পয়সা লুট করা হয় এবং আহত হন লক্ষণ দাসের স্ত্রী। দেশ স্বাধীনের পর আবার শুরু হয় সার্কাস। নাম রাখা হয় ‘দি রয়েল বেঙ্গল সার্কাস’ ও ‘দি লক্ষণ দাস সার্কাস’। ৬০ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মানুষকে সার্কাসের মাধ্যমে বিনোদন দিয়ে আসছে দলটি। লক্ষণ দাসের ছেলে শ্রী অরুণ দাস ও শ্রী বিরেণ দাস এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। মূলত লক্ষণ দাসের হাতে যে সার্কাস দলটি গড়ে উঠেছিল, সেই দিলটির বিভিন্ন পালাবদল এই চলচ্চিত্রের মূল উপজীব্য। ২১ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৫টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে চলচ্চিত্রটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হবে। প্রধান অতিথি থাকবেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সিনেমাটির উদ্বোধন ঘোষণা করবেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মিজ কৃষ্ণা দেবনাথ। পরিচালক জুমুর আসমা জুঁই বলেন, ‘সামান্য প্রাপ্তি আর নির্মম বাস্তবতা। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। তারপরও প্রদর্শনী শেষে বিশ্বজয় করার অনাবিল প্রশান্তি। একজন সত্যিকারের শিল্পীর পক্ষেই সম্ভব নিজেকে বিলিয়ে অন্যকে আনন্দ দেয়া। সার্কাস শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে আজীবন সংগ্রাম করে যাওয়া মানুষগুলোর পাশে থাকা এই প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটির মূল উদ্দেশ্য।’ বিশ্বজুড়েই সার্কাস একটি জনপ্রিয় গণমুখী শিল্প ও বিনোদন মাধ্যম উল্লেখ করে ঝুমুর আসমা জুঁই বলেন, ‘এক সময় আমাদের দেশেও বিভিন্ন জায়গায় সার্কাস ছিল খুব জনপ্রিয়। লক্ষণ দাসকে এই অঞ্চলের সার্কাস শিল্পের জনকও বলা হয়ে থাকে। এই শিল্পকে জনপ্রিয় করে তুলতে লক্ষণ দাস তার সারাজীবন কঠোর পরিশ্রম করেছেন। এই দল গঠনের আগেই লক্ষণ দাস বিভিন্ন সার্কাসের দলে কাজ করেছেন, খেলা শিখেছেন। নিজেকে তৈরি করেছেন। পাকিস্তান আমলে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল তার সার্কাস পার্টি। এই গুণী শিল্পী আমাদের বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন।’ লক্ষণ দাসের সার্কাস দল প্রসঙ্গে জুঁই বলেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এই সার্কাস কোম্পানি তাদের সার্কাস প্রদর্শন করতে যেত। সঙ্গে থাকত সার্কাস শিল্পী, প্যান্ডেল, সার্কাসের বিভিন্ন সরঞ্জাম, হাতি, বাঘ, সিংহসহ অন্যান্য প্রাণী। তাদের প্রধান বাহন ছিল নৌকা। সার্কাস কোম্পানির মানুষ এবং জীব-জন্তু সবাই সার্কাসের শো চলাকালীন এক-দেড় মাস প্যান্ডেল আর নৌকায় জীবনযাপন করত। প্রদর্শনী শেষে সার্কাসের পুরো প্যান্ডেল ভেঙে পুনরায় লোকজন পশু-পাখিদের নিয়ে অন্য জায়গায় যাওয়ার যে প্রক্রিয়া, সেটি ছিল জীবন যুদ্ধের আরেক লড়াই।’ লক্ষণ দাসের সার্কাসের দলটিতে সব সময় ৭০/৮০ জন কাজ করেছে। তাদের পরিবারের জীবিকা এই কাজের ওপর নির্ভর করেছে। কিন্তু বিলুপ্ত প্রায় এই শিল্পের প্রদর্শনীর পরিমাণ দিন দিন কমে আসছে। সার্কাসের গুণী শিল্পীরা বেকার হয়ে পড়েছেন। একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সার্কাসের দলগুলো। এই দলে অনেক এতিম শিশুদের লালন পালন করে তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। বিয়ের ব্যবস্থাও করা হয়। জুঁই আরো বলেন, ‘এখন সার্কাস করার জন্য সহজে অনুমতি পাওয়া যায় না। তাই সার্কাসের মতো বড় আয়োজনের খেলা প্রদর্শন করা সম্ভব হচ্ছে না। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের ও জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়