পল্টনে তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য-হকার সংঘর্ষে আহত ৬

আগের সংবাদ

জোয়ারের পানিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি : কলাপাড়ার ৬০ কিলোমিটার সড়কের অধিকাংশই কাঁচা

পরের সংবাদ

তোমরা নিজেদের হত্যা করো না

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শিরোনামে প্রদত্ত নির্দেশনাটি মহান আল্লাহপাকের। সমুদয় সৃষ্টির প্রতি সবচেয়ে দরদি তিনিই যিনি তাঁর সূ² পরিকল্পনার ভিত্তিতে সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেই দায়িত্ব শেষ করেননি, প্রতিটা সৃষ্টির ভালো-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ, করণীয়-বর্জনীয় সম্বন্ধেও সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছেন। সমুদয় সৃষ্টির মাঝে মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা হিসেবে মর্যাদা দিয়েছেন এবং মানুষকে তার প্রতিনিধিত্বের সম্মাননা প্রদান করেছেন। ইহকালীন ও পারলৌকিক সব বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আদেশ-নিষেধ বাতলে দিয়েছেন। নিজেকে পরম ‘রব’ তথা প্রতিপালক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন এবং সমগ্র সৃষ্টির মহান প্রভু হিসেবে সীমাহীন করুণায় গোটা বিশ্বকে বরকতমণ্ডিত করে রেখেছেন। মানবমণ্ডলী তথা পুরো সৃষ্টিজগতের জন্যই সবচেয়ে দামি জিনিস হলো সেই সৃষ্টির জীবন; যার একচ্ছত্র মালিকানা মহান রবের এবং তিনি নিজে বান্দার কাছ থেকে সেই মালিকানা ক্রয় করে নিয়েছেন। সুরা তওবার ১১১ নম্বর আয়াতে সেই ঘোষণা রয়েছে- ‘মহান আল্লাহ জান্নাতের বিনিময়ে ইমানদারের জীবন ও সম্পদ কিনে নিয়েছেন।’ সুতরাং মানুষের জীবনের মালিকানা সেই ব্যক্তির নয়, বরং যিনি এই জীবন উপহার দিয়েছেন তিনিই এর মালিক।
আমাদের সমাজে নানা কারণে আত্মহত্যা বেড়েছে। এ যেন আরেক মহামারি হিসেবে দেখা যাচ্ছে। সামাজিক অস্থিরতা, পারিবারিক কলহ, সাংসারিক দ্ব›দ্ব, পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতিসহ বিভিন্ন কারণে ক্রমান্বয়ে এই আত্মহত্যার ব্যাধি বেড়েই চলেছে। অথচ মহান আল্লাহর আদেশ- ‘ওয়ালা তাকতুলু আনফুসাকুম ইন্নাল্লাহা কানা বিকুম রাহিমা’ অর্থাৎ তোমরা নিজেদের হত্যা করো না, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তোমাদের প্রতি অত্যন্ত রহমশীল। মানুষের প্রতি আল্লাহপাকের এই রহমতের কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। মানুষ যতই অপরাধ করুক, যতই নিজেকে অন্যায়ের সঙ্গে জড়িয়ে নিক, যতই নিজেকে কলুষিত করুক তারপরও মহান আল্লাহ কখনোই তাকে তাঁর অফুরান রহমতের ভাণ্ডার থেকে নিরাশ করেন না। মহান আল্লাহর বাণী- ‘লা তাকনাতু মির রাহমাতিল্লাহ’ অর্থাৎ তোমরা কখনোই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হবে না। তাই প্রতিটি মানুষের উচিত, তার প্রতি আল্লাহপাকের মমত্ববোধকে আমলে নেয়া, মহান স্রষ্টার প্রতি বিশ্বস্ত থাকা এবং কোনোমতেই আত্মহত্যার মতো ভয়ানক পরিণতির দিকে নিজেকে ঠেলে না দেয়া।
মানবতার মুক্তির অগ্রদূত মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মান কাতালা নাফসাহু বিশাইয়িন ফিদ্দুনইয়া আয্যাবাহুল্লাহু বিহি ফি নারে জাহান্নামা’ অর্থাৎ যে ব্যক্তি পার্থিব জীবনে কোনো কিছুর মাধ্যমে নিজেকে হত্যা করবে, আল্লাহপাক এ কারণে সেই বস্তু দিয়েই জাহান্নামের কঠিন আজাবে তাকে শাস্তি দেবেন। পবিত্র বুখারি শরিফের অপর একটি হাদিসে মহানবী (সা.) আত্মহত্যাকারী ব্যক্তি সম্বন্ধে মহান আল্লাহর কঠোর অবস্থানের দুঃসংবাদ দিয়ে ইরশাদ করেছেন- ‘আমার বান্দা স্বীয় জীবনের ব্যাপারে তড়িঘড়ি করেছে; এ কারণে আমি তার ওপর জান্নাতকে হারাম করে দিয়েছি। বুখারি ও মুসলিমের এক বর্ণনায় রয়েছে- ‘কোনো ব্যক্তি যদি লোহা দ্বারা আত্মহত্যা করে তবে সেই বস্তুটি তার হাতেই থাকবে এবং এটি দিয়েই সে জাহান্নামে তার পেটে আঘাত করে নিজেকে শাস্তি দিতে থাকবে। বিষপানে আত্মহত্যাকারী জাহান্নামে শুধু অবিরাম বিষপানই করতে থাকবে এবং কষ্ট-ভোগ করবে। উঁচু স্থান বা পাহাড় থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যাকারী জাহান্নামের আগুনে বিরতিহীন লাফাতে থাকবে এবং শাস্তি-ভোগ করেই যাবে। গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যাকারী চিরদিনের তরে এ কাজই করে যেতে থাকবে এবং একইভাবে ধারালো অস্ত্র বা অন্য কিছু দিয়ে আত্মহত্যাকারী ঠিক তেমন কাজই করতে থাকবে, যা সে নিজেকে হত্যা করার বেলায় ব্যবহার করেছে। তাই আত্মহত্যার মতো ভয়ংকর এ সামাজিক ব্যাধির অবসানকল্পে মানুষের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধের বিকাশ ঘটাবার কোনো বিকল্প নেই। পরম স্রষ্টার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতাবোধ হৃদয়ে সবসময় ধারণ করতে হবে, স্রষ্টা-প্রদত্ত জীবনের প্রতি যতœশীল ও দায়িত্বশীলতার চর্চা বাড়াতে হবে। সৃষ্টি ও স্রষ্টার প্রতি প্রতিটি মানুষের যে কর্তব্য রয়েছে সে সম্বন্ধে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক করারও প্রয়োজন রয়েছে। সুরা বাকারার ১৯৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ মানুষের জীবন সম্পর্কে সতর্ক করেছেন; ইরশাদ হচ্ছে- তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করো না। আত্মহত্যার প্রবণতা যাদের পেয়ে বসে তাদের উচিত পবিত্র কুরআন-হাদিসের এসব নির্দেশনার প্রতি অধিকতর মনোনিবেশ করা; শয়তানি প্ররোচনার ব্যাপারে ধারণা লাভ করা এবং মহামূল্যবান জীবনকে ভালোবাসতে শেখা। মানুষের জীবন হলো মহান স্রষ্টার এক পবিত্র আমানত। মানুষের উচিত সেই আমানতের সুরক্ষা করা। এমন কোনো কর্মপন্থা গ্রহণ না করা যাতে মহান স্রষ্টার সেই আমানতের অবমাননা হয়। হতাশা, ক্ষোভ, রাগ এবং জেদের বশবতী হয়ে আত্মহত্যার মতো জঘন্য কাজে জড়িয়ে গেলে তার ইহকাল ও পরকাল দুটোই শেষ হয়ে যায়। রাহমাতুল্লিল আলামিন দয়াল নবীও সেই ব্যক্তির প্রতি নারাজ হয়ে যান; এমনকি আত্মহত্যাকারী কোনো ব্যক্তির জানাজায়ও তিনি অংশ নেননি। এ থেকেই অনুমেয় যে, আত্মহত্যা কতটা ভয়ানক অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।
আমাদের দেশে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৩০ জনের মতো মানুষ আত্মহত্যা করছে। সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আত্মহত্যা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে। বিভ্রান্ত, হতাশ ও জীবন সম্বন্ধে উদাসীন মানুষরাও এই রাষ্ট্রেরই অনিবার্য অংশ। সে মানুষগুলোকেও বাঁচানো আমাদেরই দায়িত্ব। আমরা যদি বুঝতে পারি যে কেউ এ ধরনের প্রবণতার দিকে ক্রম-অগ্রসর হচ্ছে, তখনই সঙ্গে সঙ্গে তাকে কাউন্সিলিং করা, সদুপদেশ ও উপযুক্ত পরিচর্যা ও পরিসেবার মাধ্যমে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভবপর হয়ে ওঠবে। মানুষ মানুষের জন্য আর জীবন যে জীবনেরই জন্য- তাই আমাদের প্রমাণ করতে হবে।

ড. মোহাম্মদ বাহাউদ্দিন : চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক; ফরাসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়