কাগজ প্রতিবেদক : যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পেছেন হোসাইন আহমেদ। আগামী সপ্তাহে দেশে ছেড়ে বাইডেনের দেশে পাড়ি জমাবেন এই শিক্ষার্থী। এজন্য দরকার নগদ ডলারের। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্টন ও পার্শ্ববর্তী এলাকার অন্তত ১৪টি মানি এক্সচেঞ্জে গিয়েও নগদ ডলারের খোঁজ পাননি হাসান। শেষে রাজধানীর মতিঝিলের একটি মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ৫০০ ডলার কিনতে পেরে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। যদিও তার চাহিদা ছিল ২ হাজার ডলার। তবে এতেই খুশি তিনি। তিনি বলেন, ডলার কিনতে অনেক ঘুরতে হয়েছে। এখানে এসে ১১৩ টাকা ৫০ পয়সা দরে ৫০০ ডলার কিনতে পেরেছি। আর বাকি ডলার কার্ডে নিয়ে যাব।
শুধু হাসান কিংবা রফিক নয়, রাজধানীর মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে ডলারে কিনতে আসা প্রায় সবাই খালি হাতে ফেরতে হয়েছে। নগদ ডলারের চরম সংকট খোলা বাজারে।বেশি মূল্যেও পাওয়া যাচ্ছে না মার্কিনি এই মুদ্রা। মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে গেলেই জিজ্ঞেস করছে কত ডলার বিক্রি করবেন। কেনার কথা শুনলেই শুরু হয়ে যাচ্ছে আফসোস। কোনো কোনো মানি চেঞ্জারের দরজা একেবারেই বন্ধ।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মানি চেঞ্জারগুলোতে সরজমিনে দেখা যায়, ডলার কেনার ক্ষেত্রে ১০৭ এবং বিক্রির ক্ষেত্রে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সার সাইনবোর্ড টানিয়ে রেখেছে অধিকাংশ এক্সচেঞ্জ হাউস। কিন্তু তাদের কাছে কোনো ডলার নেই। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ফকিরাপুলের মনডিয়াল মানি এক্সচেঞ্জের এক প্রতিনিধি জানান ডলার পাওয়া যাবে তবে অন্য হাউস থেকে এনে দিতে হবে। এর জন্য গুনতে হবে বাড়তি টাকা। সোহেল হোসেন নামে ওই প্রতিনিধি জানান, আজ আমরা ১১২ টাকা ৫০ পয়সাতে ডলার কিনছি এবং বিক্রি করছি ১১৩ টাকা ৪০ পয়সা দরে। পল্টনের বায়তুল মোকাররম মার্কেট এবং গুলশানসহ বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আজ ১১৪ থেকে ১৬ টাকা দরে ডলার বিক্রি করছে এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো। তবে তার পরিমাণও অতি নগণ্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মানি চেঞ্জার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা ১০৭ টাকায় কিনছি এবং ১০৮.৫০ টাকায় বিক্রি করছি। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ যাতায়াত কমে যাওয়ার কারণে খোলাবাজারে ডলার লেনদেন অবস্থা খুবই খারাপ। গত এক সপ্তাহ ধরে খোলাবাজারে ডলার কেনাবেচা নেই বললেই চলে। যেসব মানি এক্সচেঞ্জ নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি ধরে ডলার বিক্রি করছে তাদের বিষয়ে সংগঠনের পদক্ষেপ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমরা পাঁচটি মানি এক্সচেঞ্জকে সতর্ক করেছি। যারা নির্ধারিত রেট এর চেয়ে বেশি দামে ডলার বিক্রি করছিল। এবং একথাও জানিয়েছি এরকমটা চলতে থাকলে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংগঠনিকভাবে লিখিত অভিযোগ করব। পাশাপাশি সাংগঠনিক কোনো ধরনের সহযোগিতা পাবে না অবৈধ ডলার ব্যবসায়ীরা। বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে চলমান সংকট কাটাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তাতে সুফল মিলছে না। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশে ডলার কেনার সর্বোচ্চ দর নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলো। রেমিট্যান্সে সর্বোচ্চ ১০৮টাকা এবং রপ্তানি বিল নগদায়নে ৯৯ টাকা দর নির্ধারণ করা হয়। আর রপ্তানি বিল নগদায়ন ও রেমিট্যান্সের যে গড় দর দাঁড়াবে, তার সঙ্গে ১ টাকা যোগ করে আমদানি দায় নিষ্পত্তি করবে ব্যাংক। এক ব্যাংক আরেক ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করলে রপ্তানি বিল ও রেমিট্যান্সে দেয়া গড় দরের চেয়ে ৪০ থেকে ৫০ পয়সা বেশি নেবে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডলারের দরে ব্যাপক পার্থক্যের ফলে আমদানিকারকরা বিপাকে পড়েছেন। একই দরে পণ্য আমদানি করলেও শুধু ব্যাংক ভিন্ন হওয়ায় আমদানিকারকভেদে খরচের বড় তারতম্য হচ্ছে। এ ব্যবধানের ফলে বাজারে পণ্যমূল্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ব্যাংকগুলোর ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালি ব্যাংক গতকাল আমদানি দায় নিষ্পত্তিতে প্রতি ডলারে ১০৭ টাকা ৪৫ পয়সা নিয়েছে। অথচ অগ্রণী ব্যাংক নিয়েছে ১০৫ টাকা ৪০ পয়সা। আবার বেসরকারি খাতের সাউথইস্ট ব্যাংক নিয়েছে ১০১ টাকা ৩৭ পয়সা। সিটি ব্যাংকে যেখানে আমদানি দায় নিষ্পত্তিতে প্রতি ডলারের দর নেয়া হয়েছে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা, প্রাইম ব্যাংক নিয়েছে ১০২ টাকা ৪১ পয়সা। ইউসিবিএলের দর ছিল ১০৫ টাকা ৭৫ পয়সা। ইস্টার্ন ব্যাংক ১০৩ টাকা নিলেও ঢাকা ব্যাংক নিয়েছে ১০৫ টাকা ৭৮ পয়সা। ব্যাংকের ডলার কেনার গড় খরচের ভিত্তিতে এ দর ঠিক করা হয়েছে। গড় দরের ভিত্তিতে আন্তঃব্যাংকে ডলার কেনাবেচা হচ্ছে। গতকাল আন্তঃব্যাংকে সর্বনি¤œ ১০২ টাকা ৩৭ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১০৬ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়। আর বাংলাদেশ ব্যাংক গতকালও ব্যাংকগুলোর কাছে ৯৬ টাকা দরে ডলার বিক্রি করেছে। সাধারণভাবে ব্যাংক ভিন্ন হলেও প্রায় একই রকম দরে পণ্য আমদানির দায় নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। মাঝে কিছুদিন ধরে ব্যাংক ভেদে ডলারের দরে পার্থক্য ছিল। এখন রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের ডলারের দরে বড় পার্থক্যের কারণে তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। নতুন পদ্ধতির কারণে পণ্য আমদানিতে ভিন্ন ভিন্ন দর হবে। বিশেষ করে রপ্তানি আয় বেশি থাকা ব্যাংকে ডলারপ্রতি যে দর হবে, রেমিট্যান্স বেশি থাকা ব্যাংকে দর হবে তার চেয়ে অনেক বেশি। আবার আন্তঃব্যাংক থেকে কিনে চাহিদা মেটাতেও অনেক ব্যবধান তৈরি হবে। এসব কারণে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের ডলারের দর কাছাকাছি রাখা দরকার বলে ব্যাংকারদের অনেকেই মনে করছেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।