পল্টনে তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য-হকার সংঘর্ষে আহত ৬

আগের সংবাদ

জোয়ারের পানিতে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি : কলাপাড়ার ৬০ কিলোমিটার সড়কের অধিকাংশই কাঁচা

পরের সংবাদ

ক্ষতিকর সাকার ফিশে সয়লাব মেহেরপুরের নদী-জলাশয়

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মর্তুজা ফারুক রুপক, মেহেরপুর থেকে : দেখতে অবিকল দেশি মাছের মতো হলেও এটি আসলে বিদেশি মাছ। তবে এটা খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত নয়। গায়ে ডোরাকাটা দাগ, পাখাগুলো বেশ বড়। মুখ ও চোয়াল বেশ বড় ও শক্ত। মাছটির পুরো নাম সাকার মাউথ ক্যাটফিশ। তবে এটি সাকার মাছ নামেই বেশি পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম হিপোসটোমাস প্লেকোসটোমাস। অ্যাকুরিয়ামে চাষযোগ্য বিদেশি প্রজাতির এই ক্ষতিকর সাকার ফিশ এখন হরহামেশাই দেখা যাচ্ছে মেহেরপুরের ভৈরব নদসহ কাজলা, ছেউটিয়া এবং বিভিন্ন খাল-বিলে। এমনকি বদ্ধ জলাশয়েও দেখা মিলছে এই ক্ষতিকর সাকার ফিশের।
মেহেরপুর ছোট জেলা হলেও এখানে ছোট-বড় অসংখ্য উন্মুক্ত ও বদ্ধ জলাশয় আছে, যা মেহেরপুরের মানুষের মাছের ঘাটতি পূরণ করে বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয়। এ জেলার কাট মাছ বেশ সুস্বাদু। তবে মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সাকার ফিশ উন্মুক্ত জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ায় দেশীয় অনেক প্রজাতির মাছ খেয়ে শেষ করে দিচ্ছে। এটি চিংড়ি, কালি বাউস, মাগুর ও শিং মাছসহ ছোট শামুক জাতীয় শক্ত খোলের প্রাণী খেয়ে সাবাড় করে ফেলে। এরা খুব দ্রুত বংশ বিস্তার করতে পারে।
বর্ষার শুরুতেই মেহেরপুরের কয়েক জায়গায় মাছটি দেখা দিলেও এখন জাল ফেললেই মিলছে ক্ষতিকর সাকার ফিশ। ছোট বড় অনেক ধরনের সাকার ফিশে সয়লাভ জলাশয়গুলো। প্রথম প্রথম অনেকেই উৎসাহভরে মাছটি বাড়িতে আনলেও এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মৎস্য শিকারি ও চাষিদের। এখনই যদি এই মাছের বংশবিস্তার রোধ করা না যায় তবে অদূর ভবিষ্যতে সব প্রকার মাছের জন্য মারাত্মক হুমকি হবে বলে ধারণা করছেন চাষিরা। মেহেরপুর সদর উপজেলার রাধাকান্তপুর গ্রামের শৌখিন মৎস্য শিকারি আব্বাস আলী বলেন, ভৈরবে জাল ফেললেই এই রকম বিরল প্রজাতির মাছ উঠে আসছে। মাছটি সম্পর্কে জানার পর ধর পড়লেই আমরা মেরে ফেলি। তবে ভৈরবে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানান আব্বাস আলী। শুধু ভৈরবেই নয়, ছড়িয়ে পড়েছে তেরঘরিয়া বিল, চাদবিল, টুপলার বিল, পিরিনির খাল এমনকি বাড়ির পুকুরেও। বাংলাদেশ টেলিভিশনের মেহেরপুর প্রতিনিধি আল আমিন হোসেনের বাড়ির পুকুরে ধরা পড়ছে সাকার ফিশ। কোথা থেকে এলো- এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলেও পুকুরে কোনো মাছ চাষ করা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। মাছের ছোট পোনা পুকুর ছাড়লেই সেটা সাকার ফিশে খেয়ে ফেলছে বলে ধারণা করছেন তিনি। এমনি আশঙ্কা করছেন টুপলার বিলের মাছ চাষি ফরিদ উদ্দীন। তিনি জানান, প্রথম প্রথম এই মাছের বিচরণে খুব একটা গুরুত্ব দিইনি। পরে যখন এই মাছের ক্ষতিকর দিকগুলো জানতে পারলাম তখন থেকে ধরা পড়লেই মেরে ফেলছি। তবে এভাবে আর কত মারব। এর প্রতিকার জানতে চান তিনি। জানা গেছে, মাছটি ২০০১ বা ২০০২ সালের দিকে ইউরোপের এক কূটনীতিক মেয়াদ শেষে চলে যাওয়ার আগে ঢাকার গুলশান লেকে ছেড়ে দেন। এরপর সেখান থেকেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এটি। বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রজাতির সাকার ফিশ ১৬-১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। এটি পানি ছাড়াই প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বাঁচতে পারে। অনেকে এটিকে চিনেন অ্যাকুরিয়ামে মাছের ময়লাখেকো হিসেবে। কারণ শোভাবর্ধনের পাশাপাশি মাছের বর্জ্য এবং অ্যাকুরিয়ামের অন্যান্য ময়লা খেয়ে ফেলে এই সাকার ফিশ। অনেকেই শুরুর দিকে অ্যাকুরিয়াম ফিশ হিসেবে পালন করলেও পরবর্তী সময়ে এটি বড় হয়ে গেলে পুকুর বা ডোবায় ছেড়ে দেয়। সেখানে এটি নতুন পরিবেশে খাপ খেয়ে দ্রুত বংশবিস্তার শুরু করে। এটি খেতে সুস্বাদু না হওয়ায় সাধারণত কেউ খায় না এবং বাজারেও এর চাহিদা নেই। সাকার ফিশ রাক্ষুসে প্রজাতির না হলেও প্রচুর পরিমাণে খাবার ভক্ষণ করে। খাদ্যের জোগান নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা তৈরি হয় অন্য মাছের সঙ্গে। বেশিরভাগ সময়ই দেশীয় প্রজাতির মাছ সাকার ফিশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে জলাশয় থেকে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়। মেহেরপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান জানান, দেশে সাকার মাউথ ক্যাটফিশের বিস্তার নিয়ে এখনো কোনো গবেষণা হয়নি। জেলেদের জালে বা কোথাও মাছটি দেখা দিলে মেরে ফেলার পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়