মিতু হত্যাকাণ্ড : আদালতে চার্জশিট দাখিল, শুনানি ১০ অক্টোবর

আগের সংবাদ

নতুন ৮ নদীর পানিবণ্টনে নজর : আলোচনায় সম্মত বাংলাদেশ ও ভারত, আগামী মার্চ এপ্রিলে ঢাকা সফরের সম্ভাবনা ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রীর

পরের সংবাদ

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জবাবদিহিতা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জবাবদিহিতা সুশাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সুশাসনে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি নাগরিক সেবাদানকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতাকেও অন্তর্ভুক্ত করে। জবাবদিহিতা বলতে বোঝায় দায়বদ্ধতার প্রতিশ্রæতি ও দায়-দায়িত্বের স্বীকারোক্তি। জবাবদিহিতার সঙ্গে মানবাধিকার যুক্ত। জবাবদিহিতার মাধ্যমে গড়ে ওঠে রাষ্ট্র, প্রশাসন ও জনগণের মধ্যে নিবিড় আন্তঃসম্পর্ক। বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জবাবদিহিতার অভাবের জন্য দায়ী কিছু বিষয় আছে। এগুলো হলো প্রশাসনিক জটিলতা, দুর্বল সংসদ, অনুন্নত রাজনৈতিক দল, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অভাব এবং দুর্বল নির্বাচন ব্যবস্থা। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে এ পর্যন্ত কয়েকটি সংসদে কোনো শক্তিশালী বিরোধী দল ছিল না। এ কারণে সংসদ জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারছে না। স্বৈরশাসনও জবাবদিহিতার সংস্কৃতিতে আঘাত হেনেছে। তাছাড়া আমলারা অনেক সময় জনগণের সামনে সত্য তথ্য প্রচার করতে চায় না। শাসকশ্রেণিরও একটি অংশ তথ্য গোপনের মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে চায়। এই অস্বচ্ছতা দুর্নীতির জন্ম দেয় এবং সুশাসনের অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। রাজনৈতিক জবাবদিহিতা দুর্বল হলে তা সামাজিক ও অর্থনৈতিক উভয় খাতকে প্রভাবিত করে।
সামাজিক জবাবদিহিতা হলো নাগরিক, সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ এবং পরিষেবা সরবরাহকারীদের আচরণ ও কার্যকারিতার মধ্যে সুদৃঢ় মিথস্ক্রিয়া। যেখানে সরকার, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা সবাই ন্যায়-নৈতিকতা ও সুশাসনের ভিত্তিতে সম্প্রদায়ের কল্যাণ এবং জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করে। সামাজিক জবাবদিহিতা নাগরিক সমাজ ও রাষ্ট্রীয় সংস্থার ক্রিয়াকলাপের মধ্যে সংযোগ সাধন করে থাকে। এতে প্রতিটি কর্মপরিকল্পনা ও সিদ্ধান্তের জন্য নাগরিকদের কাছে রাষ্ট্রকে জবাবদিহি করতে হয়। সামাজিক জবাবদিহিতা স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সরকারি নীতির বিকাশ এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াগুলোর গুণমান বৃদ্ধি করে। আর এতে নাগরিকদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ও জনকল্যাণে সরকার ও প্রশাসন আত্মনিয়োগ করে।
প্রশাসনে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহিতা সুনিশ্চিত করার জন্য জবাবদিহিতার ক্ষেত্রকে উন্মুক্ত করা জরুরি। অভ্যন্তরীণ বা বিভাগীয় জবাবদিহিতার মাধ্যমে যথাযথ শুদ্ধাচারের আচরণ পরিলক্ষিত হয় না। কারণ এতে কর্মকর্তার কর্তব্যে অবহেলা, অর্পিত দায়িত্ব প্রতিপালনে ব্যত্যয় হলে কিংবা দোষ-ত্রæটির জন্য আইনানুগ সাজার পরিবর্তে যোগসাজশে রফাদফা করার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। আবার অনেক ক্ষেত্রে একজনের দোষ অন্যজনের ওপর চাপানোসহ গুরুদোষে লঘুদণ্ড দেয়ার ঘটনাও ঘটতে পারে। ঘটতে পারে ক্ষমতার অপব্যবহারও। তাছাড়া মনে রাখতে হবে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রদেয় কর ও বিভিন্ন ফি-অর্থ থেকে বেতনসহ প্রদেয় সুযোগ-সুবিধাদি ভোগ করে থাকেন। তাই তাদের জবাবদিহিতাও জনগণের কাছে হওয়া উচিত। জবাবদিহিতার মাধ্যমেই সুশাসন প্রতিষ্ঠা পায়। শুধু সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেই নয় বরং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সুশীল সমাজের জবাবদিহিতাও আবশ্যক। দুর্নীতি কমাতে ও রাজনৈতিক উন্নয়নে জবাবদিহিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুশাসন ও জবাবদিহিতা ছাড়া যেমন গণতন্ত্রকে পূর্ণাঙ্গভাবে রক্ষা করা যায় না, তেমনি গণতন্ত্র না থাকলে সুশাসন ও জবাবদিহিতাকেও প্রতিষ্ঠা করা যায় না। জবাবদিহিতা সুনিশ্চিত করা গেলে সরকারি অর্থ সাশ্রয় হবে; দুর্নীতি কমবে; ক্ষমতার অপব্যবহার কমবে; রাষ্ট্রীয় সম্পদের সদ্ব্যবহার হবে; সুষ্ঠু উন্নয়ন পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন ফলপ্রসূ হবে এবং জাতীয় উন্নতি বেগবান হবে। দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে জবাবদিহিতার বিকল্প নেই।

অমল বড়ুয়া : লেখক, চট্টগ্রাম।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়