মিতু হত্যাকাণ্ড : আদালতে চার্জশিট দাখিল, শুনানি ১০ অক্টোবর

আগের সংবাদ

নতুন ৮ নদীর পানিবণ্টনে নজর : আলোচনায় সম্মত বাংলাদেশ ও ভারত, আগামী মার্চ এপ্রিলে ঢাকা সফরের সম্ভাবনা ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রীর

পরের সংবাদ

মতিলাল ডোমের ব্যানার্জী হয়ে ওঠার গল্প

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বুকের ভেতর গোপন আর্তনাদের চক্র থেকে কিছুতেই বের হতে পারে না মতিলাল ডোম। কষ্টের বিরাণভূমি খুঁড়ে খুঁড়ে যেটুকু সুখের স্মৃতি খুঁজে পায়, সেও ক্ষণিক মোহ ছাড়া কিছুই নয়। অপার্থিব জ্যোৎস্নার দেমাগী রূপ দেখতে দেখতে মতিলালের চোখের সামনে ঝলমলিয়ে ওঠে ফুলবানুর স্বপ্নময় মুখ। সুখের মোহনা খুঁজে পেলে কেউ কি দুঃখের স্রোতে ভাসতে চায়! ফুলবানুও রঙিন স্বপ্নের ঠিকানা খুঁজে পেয়ে একদিন মতিলালের ঘর ছেড়ে চলে যায়। ফুলবানুর চলে যাবার পেছনে অভাবটা বড় কারণ হলেও মতিলালের শারীরিক অক্ষমতাও কম দায়ী ছিল না। কারণ ভালোবেসে অভাবকে বরণ করে নেয়া যতটা সহজ, ততটাই কঠিন ছিল ফুলবানুর শরীরের গোপন চাওয়ার হিসাবটা মতিলাল যখন মিলিয়ে দিতে পারে না।
বেওয়ারিশ কুকুরের মতো রাস্তাঘাটে পড়েছিল ফুলবানু। নিজের পরিচয়টাও তার জানা ছিল না। কখনো ইউনিয়ন পরিষদের নারী শ্রমিকের খাতায় নাম লিখিয়েছে কখনো আবার ডালের মিলে কাজ করেছে। মতিলাল তাকে আশ্রয় দেয়। হাসপাতালে ঝাড়–দারের চাকরির ব্যবস্থা করে। সেই থেকেই ভালোবাসার সূত্রপাত। কাছে পাবার ব্যাকুলতা। মতিলাল একদিন ফুলবানুকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে সে আপত্তি করে না। বরং মতিলালের মতো একজন মানবিক মানুষ পেয়ে ফুলবানু নিজেকে ধন্যই মনে করে। তবে মতিলাল যখন তাকে পিরোজপুর শহরের কালী মন্দিরে বিয়ে করার জন্য নিয়ে আসে, তখন ফুলবানু ঘোর আপত্তি জানায়-
‘ওই মতিবাবু, তুই কী কইলিরে, মুসলমান হয়ে মন্দিরে বিয়ে করব কোন দুঃখে?’
‘আরে তুই যে মুসলমানের মেয়ে তারই বা কি প্রমাণ আছে বল তো ফুলবানু!’ মতিলাল মৃদু হেসে বলে।
ফুলবানুর মনের আকাশটা যেন অজস্র কালো মেঘে ছেয়ে যায়। তার কিঞ্চিৎ বিষণ্নতা ফুটে ওঠে চোখে-মুখে। ফুলবানুর মনের বিরুদ্ধে না গিয়ে অবশেষে মতিলাল কোর্টে বিয়ে করে। হাসপাতালের কাছে একটা টিনশেড ঘর ভাড়া নিয়ে সংসার পেতে বসে। নিজস্ব ধর্ম পালনে কেউ কারো প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায়নি কখনো।

কিন্তু মতিলালের বুঝতে বেশি সময় লাগেনি যে ভালোবাসা আর অভাব একসাথে চলতে পারে না। একটাকে বুকে ধারণ করলে অন্যটি তিরস্কার করে। তাছাড়া ডোমের কাজ ফুলবানুর অপছন্দ। এই চাকরি ছেড়ে স্বামীকে অন্য কাজ করার তাগিদ দেয়। এমনিতেই ডোমরা অস্পৃশ্য। হাসপাতালের মর্গে লাশ কাটা-ছেঁড়া করাই তাদের কাজ। প্রতিদিন কত পচাগলা লাশের পেট কেটে নাড়ি-ভুঁড়ি বের করে ডাক্তারের পরীক্ষার জন্য দিতে হয়। ফুলবানু নিজে দেখেছে মতিলালকে নিয়ে ঘুরতে বের হলে মানুষ নিরাপদ দূরত্বে সরে যায়। নাক ঢেকে ঘেন্নায় থুতু ফেলে। সমাজের মানুষ ডোমেদের হীন চোখে দেখে। ফুলবানু ভাবতে পারে না মতিলাল ডোমের মতো সমাজের একজন নিকৃষ্টতম ব্যক্তি তার স্বামী।
হাসপাতালের ডাক্তার থেকে নার্সরা আজকাল ফুলবানুর রূপ-যৌবনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ফুলবানু নিজেও আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তার অকাল কুষ্মাণ্ড স্বামীর সাথে নিজের তফাৎ খুঁজে পায়।
ফুলবানুকে আজকাল অদ্ভুত নারী মনে হয় মতিলালের। কাছে থেকেও যেন কত অচেনা। নিত্য নতুন শাড়ি-গহনা তার শরীরে উঠেছে। মতিলালের আফসোস বাড়ে এই ভেবে ফুলবানুর পছন্দের হলুদ শাড়িটাও কিনে দিতে পারেনি কোনোদিন। বিয়ের পর থেকে একটা পছন্দের হলুদ শাড়ি ফুলবানুকে সে দিতে পারেনি। আজ ফুলবানুর আলমারি খুললে গাদায় গাদায় শাড়ি। সালাম পুলিশের সাথে ফুলবানুর ভারি পিরিত। মাঝে মাঝেই সে বাড়ি এসে ফুলবানুকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে। দুজনে একসাথে বসে ভাত খায়। মতিলালের কোনোকিছুই অজানা নয়। সে যে নিরুপায়। স্ত্রীকে বশে রাখতে একজন স্বামীর করণীয় বিষয়গুলোও সত্যিই তার জানা ছিল না।
মতিলাল আজকাল মর্গেই রাত কাটায়। ফুলবানুর কাছ থেকে পালিয়ে সে বাঁচতে চায়। সেদিন ফুলবানুর অনুরোধে মতিলাল বাড়ি আসে। ফুলবানু স্বামীকে মাঝরাতে জাগিয়ে তোলে বলে-
‘আমারে তুই মুক্তি দে মতিবাবু! তোরে আমি অনেক টাকা দেব। আমার জীবনটা নষ্ট করিস না দোহাই তোর।’
মতিলাল এতটুকু অবাক হয় না। কিছুটা হাসির অভিনয় করতে গিয়ে গলা আটকে আসে।
‘আমি তো তোকে ধরে রাখিনি বউ!’
‘ধরে রেখেছিস মনের রশি দিয়ে। আমি ছটফট করে মরছি কিন্তু ছুটতে পারছি না।’
‘মনের রশি দিয়ে বেঁধে রাখলেই কি মানুষটারে ধরে রাখা যায়!’ তাছাড়া সে মায়ার রশিটা যে কবেই ছিঁড়ে ফেলেছিস বউ!’ মতিলাল বলে।
‘তাহলে কাল কোর্টে চল, আমাকে ছেড়ে দিবি।’
‘কোর্টে আমি যাব না বউ। মন থেকেই যখন সোয়ামিকে ছেড়ে যাচ্ছিস, আইনের সুতা দিয়ে তোরে বাঁধতি যাব কেন?’
শেষ রাতে একটা রিকশার টুনটুন মতিলালের কানে আসে। মতিলাল উঠে বসে দেখে ফুলবানু বিদায় নেবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যাবার আগে মতিলালের পা ছুঁয়ে শ্রদ্ধা জানাতে ভুল করে না।
‘আমারে বরদোয়া দিস না মতিবাবু। আর পারলে চাকরিটা তুই ছেড়ে দিস, তা না হলে কোনোদিন লাশ হয়ে তুইও মর্গে পড়ে থাকবি!’ বিচ্ছেদের নিষ্ঠুর সীমারেখা টেনে ফুলবানু মতিলালের ঘর ছেড়ে চলে গেল।
মতিলাল আজকাল মর্গেই রাত কাটায়। একজন পুরুষের জীবন থেকে বউ চলে যাওয়া যে কতটা দুর্ভাগ্যের, মতিলাল তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। লাশকাটা ঘরটাই তার আপন ঠিকানা। লাশের সাথেই তার বসবাস। মতিলাল নিজেই যেন একটা জ্যান্ত লাশ হয়ে মর্গে পড়ে থাকে। মন চাইলে জ্যোৎস্নারাতে দক্ষিণপাশের জানালা খুলে দেয়। আলোতে ঘর ঝলমলিয়ে ওঠে মর্গ। মৃত লাশগুলো কবরে যাবার আগে শেষবারের মতো জ্যোৎস্নাস্নান করে যায়। কিন্তু মতিলালের মনের ভেতর যে রাজ্যের অন্ধকার, সামান্য জ্যোৎস্নার আলো সে অন্ধকার ঘুচাতে পারে না। মতিলাল দুঃখ ভুলতে বিড়ি ধরায়- বেসুরো গলায় শ্যামাসংগীত গান ধরে।
‘চাই না মাগো রাজা হতে, রাজা হবার সাধ নাই মাগো
দুবেলা যেন পাই মা খেতে।’
বিড়িতে সুখটান দিয়ে ধোঁয়া গিলে খায়, কখনো বুকের দীর্ঘশ্বাসের সাথে সে ধোঁয়া নাক দিয়ে বেরিয়ে আসে। গান গাইতে গাইতে মতিলাল কোথায় হারিয়ে যায়। মনের অজান্তে লাশের সাথে কথা কয়।
‘কিরে মিয়াভাই, গলায় দড়ি দিয়ে মরতে গেলা কেনো?’
হোগলায় মোড়ানো লাশের গলা থেকে বেরিয়ে আসে-
‘মৃত্যুর যে কত শান্তি, তুই বুঝবি না মতিলাল ডোম। তুই তো নিজেই মরে বেঁচে আছিস, মৃত্যু থেকেও যা যন্ত্রণার।’
অস্থিরভাবে মোচড় খায় মতিলালের হৃৎপিণ্ড। কে কথা বলে উঠল! একটি লাশ ছাড়া তো মর্গে কেউ নেই। তাহলে কি মৃত মানুষটা…। মতিলালের মাথা চক্কর খায়। বেসামাল হয়ে পড়ে। কী ভয়ংকর। মতিলাল চৌকি থেকে নেমে লাইট ধরায়। চোখের সামনে দেখে রহমত মিয়ার লাশটি যথাস্থানে হোগলায় মোড়ানো রয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত লাশ মতিলালের হেফাজতেই থাকে। মতিলাল ভীষণ সাহসী মানুষ। সাহস ছাড়া কি আর কেউ ডোমের চাকরি করতে আসে। কিন্তু আজ সে সত্যিই ঘাবড়ে যায়। মৃত মানুষ তার কথার উত্তর দিল! তবে এমন আজব ঘটনার মুখোমুখি সে আগেও হয়েছে।

ফুলবানু এখন সালাম পুলিশের বউ। এসব চাঞ্চল্যকর ঘটনা সমাজে ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগে না। মতিলাল সব জেনেও নিশ্চুপ। ঘটনাচক্রে মাঝে মধ্যেই বউয়ের সাথে দেখা হয়। আকার-ইঙ্গিতেও সংক্ষিপ্ত কথা হয়, তবে মতিলাল তার গোপন ভালোবাসাটাকে দমন করার কৌশল বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করেছে। মনের দুঃখে মতিলাল একদিন ডোমের চাকরি ছেড়ে দেয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনুরোধ করেও মতিলালকে ধরে রাখতে পারেনি। এ শহর ছেড়ে মতিলাল কোথায় গেছে কেউ বলতে পারে না। চলে যাবার আগে মতিলাল কিছুদিন উন্মাদের মতো ঘুরে বেড়াত। তার স্বাভাবিক আচরণটা ছিল না। একদিন মদ খেয়ে সারারাত গোরস্তানেও পড়ে থাকতে দেখা গেছে। বন্ধুরা বলেছে মতিলাল টাকার নেশায় পাগলের মতো ঘুরে বেড়াত। বড়লোক হবার স্বপ্নে সে বিভোর ছিল। বলত, দেখিস আজ যারা রাস্তায় আমাকে দেখে ঘৃণায় পাশ কাটিয়ে চলে, একদিন তারাই আমার সঙ্গ পেতে ছুটে আসবে।
ঘটনার নতুন বাঁক নিতেও সময় লাগেনি। একদিন মতিলাল ব্যানার্জীর মোবাইলে পিরোজপুর থানার ওসি সাহেবের ফোন বেজে ওঠে। থানায় মতিলালের জরুরি তলব পড়েছে। তা না হলে ঘোর বিপদ। কাল বিলম্ব না করে মতিলাল সেদিনই থানায় ছুটে আসে। মতিলাল থানায় এলে পরিচিত জনেরা ছুটে আসে। তারা একঝলক মতিলাল ডোমকে দেখার জন্য থানার বারান্দায় ভিড় করে। সবার সে কী উৎসাহ! তাদের সেই মতিলাল ডোম এলাকায় ফিরে এসেছে। ওসি সাহেব তার রুম থেকে সবাইকে সরিয়ে মতিলালকে কাছে ডাকে।
‘কেমন আছ মতিলাল?’
‘আজ্ঞে হুজুর, ভগবানের কৃপায় ভালোই আছি।’
‘তোমার ভগবান সম্ভবত বেশিদিন তোমাকে ভালো রাখতে পারবে না!’
মতিলাল হা করে ওসি সাহেবের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
‘তুমি অপরাধ জগতে পা দিলে কী করে মতিলাল। আমার তো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে!’
‘আমি অপরাধ করেছি!’
‘তুমি তো দেশের বড় শত্রæ। জানি না তোমার শাস্তি কী হবে!’
মতিলাল ওসির কথায় তালগোল পাকিয়ে ফেলে।
‘শোনো মতিলাল, মর্গে একটি লাশ এসেছে। আমরা সবাই জানি লাশটি কার? তুমিও চিনবে। কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডাক্তারি পরীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত লাশটির কাছে তোমাকে থাকতে হবে। তাছাড়া এই লাশটি নিজ হাতে তোমাকেই দাফন করতে হবে। এটা আমার নির্দেশ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে আমার কথা হয়েছে। লাশ দাফন শেষ করে তুমি কিন্তু আমার সাথে অবশ্যই দেখা করবে।’
মতিলাল স্তম্ভিত হয়ে যায়। তাহলে কি ওসি সাহেব তার অপরাধের কথা জেনে গেছে।
মতিলাল মর্গে এসে লাশ মোড়ানো পাটি খুলে বিস্ময়ে বিমূঢ়। তার বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়। কান্নার হাহাকার বেজে ওঠে। এ যে তার ভালোবাসার ফুলবানু। ফুলবানুর বুকের উপর মাথা ঠুকতে থাকে মতিলাল। ‘তুই শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করলি বউ!’
মর্গে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। মতিলাল বুঝে পায় না কি করে তার ভালোবাসার মানুষটির বুকে অস্ত্র ধরবে। ডাক্তারের কাছে কিছুটা সময় চেয়ে সে একটা বিড়ি ধরায়। ডাক্তারও চা খেতে পাশের রুমে যায়।
মোবাইলে কথা বলতে বলতে মতিলাল সজনে তলায় যায়। মাথা উঁচু করে মগডালে তাকায়। শকুনটা আজ আর নেই। অন্য পাখিরাও হয়তো পথ ভুলে গেছে। গাছটি কেমন শুকিয়ে গেছে। গাছতলায় সেই শীতল হাওয়াটাও নেই। কিছুক্ষণ পর সবাই মর্গে এসে দেখে ফুলবানুর লাশটি নেই। এর আগেও মর্গ থেকে লাশ চুরি হবার ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে মতিলালের তিন মাস জেলও হয়। হাসপাতালের মর্গে মানুষে মানুষে সয়লাব। থানা থেকে পুলিশ এসেছে। সাংবাদিক এসেছে। লাশ খোঁজার তদন্তে নামে ডিবি পুলিশ। ঘটনা আরো রহস্যের দিকে যায় মতিলালকেও যখন খুঁজে পাওয়া গেল না। এবার পুলিশ মতিলালকে হন্যে হয়ে খোঁজে। দীর্ঘ সাত মাস পর ঢাকার মিরপুরে নিজস্ব ফ্ল্যাট থেকে ডিবি পুলিশ মতিলালকে গ্রেপ্তার করে। নিয়ে আসা হয় পিরোজপুর থানায়। মতিলালের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে ধার্য তারিখে আদালতে তোলা হয়। এজলাস কক্ষে মতিলাল একেবারেই নিশ্চুপ। তবে এতটুকু অনুশোচনা নেই। শপথ বাক্য পাঠ শেষে রাষ্ট্রপক্ষের বিজ্ঞ কৌঁসুলি মতিলালকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। মতিলাল এতটুকু মিথ্যের আশ্রয় না নিয়ে নিজের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়।
‘সত্য করে বলো মতিলাল, তুমি কি বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কবর থেকে সদ্য দাফন করা লাশ তুলতে?’
‘আজ্ঞে হুজুর!’
‘পচাগলা এই লাশ দিয়ে তুমি কী করতে?’
‘সেই লাশ কিছুদিন চুনের চৌবাচ্চায় ভিজিয়ে রাখতাম। শরীর থেকে পচা মাংস খসিয়ে গ্যামাক্সিন মেখে বাজারজাতের উপযোগী করে তুলতাম। পরে এই চক্রের বসের কাছে বিক্রি করে দিতাম।’
‘কে সেই বস? কী নাম তার? এই কঙ্কাল দিয়ে সে কী করত?’
‘তার নাম আমি বলতে পারব না হুজুর। তবে সে ক্ষমতাসীন দলের একজন তুখোড় নেতা। শুনেছি একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর ছত্রছায়ায় সে থাকে। আমার বস কঙ্কালগুলো বিদেশে পাচার করে। বিদেশে কঙ্কালের ভারি চাহিদা। আবার দেশের স্কুল-কলেজের বায়োলজির ল্যাবরেটরিতে কখনো গবেষণাগারে বিক্রি করে।
বিজ্ঞ কৌঁসুলি রাগে গদগদ করে-
‘গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী তোমার বউয়ের লাশ চুরি হবার পেছনেও তোমার হাত রয়েছে। কোথায় সেই ফুলবানুর লাশ। তাকেও কি কঙ্কাল করে বিক্রি করে দিয়েছ?’
কান্নায় ভেঙে পড়ে মতিলাল। তার কণ্ঠ যেন একেবারেই রুদ্ধ। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে-
‘আজ্ঞে হুজুর, আমার ইশারাতেই মর্গ থেকে ফুলবানুর লাশ চুরি করা হয়েছে। তার লাশ দাফন না করে কঙ্কাল বানিয়ে নিজের চোখের সামনেই রেখে দিয়েছি। নিজেকে এই ভেবে চিরকাল সান্ত¡না দিতে পারব, ফুলবানু আমাকে ছেড়ে কোথাও চলে যায়নি।’
মতিলাল ডুকরে কেঁদে ওঠে। সে কান্নার কোনো শব্দ ছিল না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়