মিতু হত্যাকাণ্ড : আদালতে চার্জশিট দাখিল, শুনানি ১০ অক্টোবর

আগের সংবাদ

নতুন ৮ নদীর পানিবণ্টনে নজর : আলোচনায় সম্মত বাংলাদেশ ও ভারত, আগামী মার্চ এপ্রিলে ঢাকা সফরের সম্ভাবনা ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রীর

পরের সংবাদ

বিনা ভোটে জয়ের হিড়িক! : জেলা পরিষদ নির্বাচন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিজয়ী হওয়ার পথে ২৩ প্রার্থী, বাড়তে পারে আরো ** প্রতিদ্ব›িদ্বতা উন্মুক্ত করার চিন্তা আওয়ামী লীগের

মুহাম্মদ রুহুল আমিন : আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত যাচ্ছে (তিন পার্বত্য জেলা বাদে) দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের নির্বাচন। এ নির্বাচনে অন্য কোনো রাজনৈতিক দল অংশ না নেয়ায় চেয়ারম্যান পদে এককভাবে মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। বেশকিছু এলাকায় আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও। এরইমধ্যে মনোনয়ন দাখিল করেছেন চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীরা। তফসিল অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন। এতে ২৩টি জেলায় একমাত্র আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরাই মনোনয়ন দাখিল করেছেন। ফলে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিজয়ী হতে চলেছেন তারা। আর ৩৮টি জেলা পরিষদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে। এসব প্রতিদ্ব›িদ্বর মধ্যে বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের নেতারাই আছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই মাঠ পর্যায়ে জনপ্রিয়। দলের সমর্থন চেয়ে না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন তারা। তবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৫ সেপ্টেম্বর আরো কিছু জেলায় দলের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে সমঝোতা করে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে পারেন কেউ কেউ। সেক্ষেত্রে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিজয়ী হতে পারেন আরো কয়েকজন চেয়ারম্যান।
এদিকে স্থানীয় সরকারের বড় এই নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হতে পেরে চেয়ারম্যানরা স্বস্তি প্রকাশ করলেও অস্বস্তিতে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। কেননা প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিসহ জাতীয় পার্টি ও অন্য রাজনৈতিক দলগুলো এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। ফলে মাঠ সম্পূর্ণ ফাঁকা। আর এই ফাঁকা মাঠে দলের মনোনয়ন না পেয়ে প্রার্থী হয়েছেন অনেকেই, যাদের বেশিরভাগই স্ব স্ব জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা। কেউ কেউ আবার জনপ্রিয়তার দিক থেকেও এগিয়ে আছেন। এসব প্রার্থীর কেউ কেউ বিদ্রোহী কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতেও শঙ্কা প্রকাশ করছেন, কারণ দলের হাইকমান্ড তাদের বিরুদ্ধে আবার সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থা নেয় কিনা। তবে রাজশাহী বিভাগের বগুড়া জেলার একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেন, যেহেতু এই নির্বাচনে অন্য কোনো রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে না, তাই আমরা দাবি করব জেলা পরিষদের

এই নির্বাচনটি সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হোক। যাতে প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ নির্বাচন হয়। কেননা আমরাও দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেই আছি। দলের বাইরে তো আর যেতে পারব না। কাজেই আমরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করলে এককভাবে বিজয়ী হলে সেই বিজয়ের কোনো আনন্দ থাকে না।
একদিকে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অনুপস্থিতি, অন্যদিকে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে গিয়ে দলের হাইকমান্ডের বহিষ্কারের মতো শাস্তির ভয়। তখন কী হবে নির্বাচনের? প্রতিদ্ব›িদ্বতা ছাড়াই কী বিজয়ী হওয়ার পথে বেশিরভাগ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান? এই যদি হয়- তাহলে এই নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকছে বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের। সেক্ষেত্রে কী করবে আওয়ামী লীগ- জানতে চাইলে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং দলের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান ভোরের কাগজকে জানান, গতকাল মনোনয়ন দাখিলের শেষদিন ছিল। কতটি জেলায় একক প্রার্থী মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন, সেই তথ্য এখনো আমাদের কাছে আসেনি। সব তথ্য আসার পরেই আমরা বলতে পারব, কী অবস্থা। মাঠের পরিস্থিতি বুঝেই হয়তো আরো নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাদের দলের সিদ্ধান্ত আগে থেকেই যা আছে, সেটাই বহাল আছে। সেক্ষেত্রে অন্য জেলা পরিষদগুলোতে সবার জন্য উন্মুক্ত থাকছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ফারুক খান বলেন, আগে আমরা মাঠের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করি। তারপর দেখা যাবে। পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যারা যাবেন, তাদের বিষয়ে আমাদের অবস্থান আগের মতোই আছে। নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হলে তো অবশ্যই আপনারা জানতে পারবেন।
যারা বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিজয়ী হওয়ার পথে : এদিকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত জানা গেছে ৬১টি জেলা পরিষদের মধ্যে ২৩টি জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরাই মনোনয়ন দাখিল করেছেন। যাছাই-বাছাইয়ে যদি কেউ বাদ না যান, সেক্ষেত্রে এই ২৩ জনকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। তবে একক প্রার্থী হিসেবে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, তারা হলেন- রংপুর বিভাগের লালমনির হাটে এডভোকেট মতিয়ার রহমান, কুড়িগ্রামে মো. জাফর আলী, ঠাকুরগাঁওয়ে সাদেক কুরাইশী।
রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, নওগাঁয় একে এম ফজলে রাব্বী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে মো. রুহুল আমিন খান। ঢাকা বিভাগের নারায়নগঞ্জে চন্দন শীল, গাজীপুরে মোতাহার হোসেন মোল্লা, মুন্সীগঞ্জে মো. মহিউদ্দিন, নরসিংদীতে আলহাজ আব্দুল মতিন ভূঁইয়া, টাঙ্গাইলে ফজলুর রহমান ফারুক, শরীয়তপুরে ছাবেদুর রহমান খোকা, মাদারীপুরে মুনির চৌধুরী, গোপালগঞ্জে মুন্সী আতিয়ার রহমান। সিলেট বিভাগের সিলেট জেলা পরিষদে এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান ও মৌলভীবাজারে মিছবাহুর রহমান। বরিশাল বিভাগের বরগুনায় এডভোকেট একে এম জাহাঙ্গীর, ঝালকাঠিতে এডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির। ময়মনসিংহে ইউসুফ খান পাঠান। আর খুলনা বিভাগের বাগেরহাটে শেখ কামরুজ্জামান টুকু। চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লায় মফিজুর রহমান বাবুল, ফেনীতে খায়রুল বশর মজুমদার ও ল²ীপুরে মো. শাহজাহান।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৬১টি জেলা পরিষদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১৯টি জেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনাপ্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়