মিতু হত্যাকাণ্ড : আদালতে চার্জশিট দাখিল, শুনানি ১০ অক্টোবর

আগের সংবাদ

নতুন ৮ নদীর পানিবণ্টনে নজর : আলোচনায় সম্মত বাংলাদেশ ও ভারত, আগামী মার্চ এপ্রিলে ঢাকা সফরের সম্ভাবনা ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রীর

পরের সংবাদ

দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি : সহসাই সংসদ সদস্য পদ হারাচ্ছেন না রাঙ্গা-পঙ্কজ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এস এম মিজান : রংপুর-১ আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গা ও বরিশাল-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথকে দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। দলীয় পদ হারানোর পর তাদের সংসদ সদস্য (এমপি) পদ থাকবে কিনা? তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠলেও এর উত্তর পাওয়া বেশ জটিল। কারণ সব পদ থেকে অব্যাহতির হিসাবে দলের প্রাথমিক সদস্য পদও থেকেও অব্যাহতির বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। এ অবস্থায় তাদের এমপি পদ থাকা-না থাকার সঙ্গে আইনি বিষয় ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জড়িত। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হলেও তাদের এমপি পদে এর কোনো প্রভাব পড়বে কিনা, এ বিষয়ে দল দুটির চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের সংসদ সদস্য পদ কেড়ে নেয়া বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি নির্বাচনে কোনো দলের বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন। একটি দল থেকে নির্বাচিত হওয়ার পর ওই দল থেকে পদত্যাগ করলে সংবিধান অনুযায়ী তার সংসদ সদস্য পদ থাকবে না। এই দুই এমপির ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়। কারণ তারা পদত্যাগ করেননি।
এছাড়া সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়ে কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে যদি ওই দল থেকে পদত্যাগ করেন অথবা সংসদে ওই দলের বিপক্ষে ভোট দেন, তাহলে সংসদে তার আসন শূন্য হবে। কিন্তু দল কাউকে বহিষ্কার কিংবা অব্যাহতি দিলে সে ক্ষেত্রে কী হবে, সংবিধানে তার উল্লেখ নেই।
সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুসারে ‘কোনো সংসদ সদস্যের আসন শূন্য হইবে কিনা’, সে সম্পর্কে কোনো বিতর্ক দেখা দিলে শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য প্রশ্নটি নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রেরিত হইবে এবং অনুরূপ ক্ষেত্রে কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হইবে। এর বাইরে কোনো ব্যক্তি কোনো আদালত কর্তৃক অপ্রকৃতিস্থ ও দেউলিয়া ঘোষিত হলে, বিদেশি রাষ্ট্রের আনুগত্য স্বীকার করলে, ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হয়ে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিত হলে, প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদে থাকলেও সংসদ সদস্য পদ হারাবেন।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, সংবিধানে বলা

হয়েছে, যে দল থেকে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন, সে দল থেকে যদি পদত্যাগ করেন, তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ শূন্য হবে। অথবা তিনি যদি সংসদে তার দলের বিপক্ষে ভোট দেন, তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ চলে যাবে।
তিনি বলেন, তাদের তো দল থেকে বের করে দেয়া হয়নি। শুধু দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা সংসদে দলের বিরুদ্ধে ভোটও দেননি। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, তাদের সংসদ সদস্য পদ যাবে না।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, দল কোনো সংসদ সদস্যকে বহিষ্কার করলে তার সদস্য পদ কি হবে এটার উত্তর সরাসরি আমাদের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে নেই। ৭০ অনুচ্ছেদে দল থেকে পদত্যাগ অথবা দলের বিরুদ্ধে ভোট দেয়ার কথা বলা আছে। বহিষ্কারের বিষয়টি নিয়ে মামলা হলে তখন উচ্চ আদালত এ বিষয়ে নির্দেশনা দিতে পারেন। তবে আমার ধারণা, শেষ পর্যন্ত প্রশ্নটা দাঁড়াবে পদত্যাগ ও বহিষ্কার শব্দটা সমর্থক কিনা। ফলে আইনি প্রক্রিয়ায় গড়ালে তখন হয়তো বিষয়টা পরিষ্কার হবে। সেই পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
আরেক আইন বিশেষজ্ঞ খুরশিদ আলম খান বলেন, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংসদ সদস্য পদ থাকবে না। আমরা জানতে পেরেছি সব পদ থেকে দুজনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তাদের অব্যাহতি দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কাছ থেকে একটা ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তারা ১৫ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দেবেন। ব্যাখ্যা দেয়ার পর দলীয় ফোরাম চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। এগুলো সব পার্টিরই গঠনতন্ত্রের আওতাধীন। বর্তমানে তাদের যে ইস্যু, তা এখনো সংবিধানের আওতায় আসবে না। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যদি ফাইনালি তাদের অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তখন একটি প্রশ্ন উঠবে যে, তাদের সংসদ সদস্য পদ থাকবে কিনা। আমি এ মুহূর্তে যতটা বুঝতে পারছি, বিষয়টি এখনো সে পর্যন্ত গড়ায়নি। এটি প্রাথমিক স্টেজ। দল ফাইনালি তাদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়, তার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, দশম সংসদে ২০১৪-১৫ সালে ধর্ম নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন এবং দলের সব পদ হারান। তার সংসদ সদস্য পদ বাতিলের সুপারিশ করে জাতীয় সংসদের স্পিকারকে চিঠি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। স্পিকার পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) চিঠি দেন। শেষ পর্যন্ত জটিলতার সুরাহা না হলে রাজনৈতিক চাপে নিজ থেকে পদত্যাগ করেন লতিফ সিদ্দিকী।
গত বুধবার জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদ থেকে মশিউর রহমান রাঙ্গাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। জাপার যুগ্ম-দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম জানান, জাপা চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের দলীয় গঠনতন্ত্র প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদ থেকে মশিউর রহমান রাঙ্গাকে অব্যাহতি দিয়েছেন। ইতোমধ্যে এ আদেশ কার্যকর হয়েছে। রাঙ্গা ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ২৬ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় পার্টির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এদিকে গত ১২ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের বরিশাল জেলা শাখার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদসহ দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথকে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে তার লিখিত বক্তব্য দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দিতে বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার সই করা ১২ সেপ্টেম্বরের চিঠিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ সংগঠনের গঠনতন্ত্রে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আপনাকে (পঙ্কজ নাথ) বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যপদসহ দলীয় অন্যান্য সব পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার লিখিত বক্তব্য আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেয়ার জন্য সাংগঠনিক নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। পঙ্কজ দেবনাথ বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য। তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়