মিতু হত্যাকাণ্ড : আদালতে চার্জশিট দাখিল, শুনানি ১০ অক্টোবর

আগের সংবাদ

নতুন ৮ নদীর পানিবণ্টনে নজর : আলোচনায় সম্মত বাংলাদেশ ও ভারত, আগামী মার্চ এপ্রিলে ঢাকা সফরের সম্ভাবনা ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রীর

পরের সংবাদ

জেল থেকে বেরিয়ে জঙ্গি গ্রুপে যোগ দেন শাকির : কুমিল্লাকে সদস্য সংগ্রহের হাব বানানোর টার্গেট

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে (২৯তম ব্যাচ) পড়ার সময় ছাত্র শিবিরে যোগ দেন শাকির বিন ওয়ালী। এরই মধ্যে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে দেড় মাস কারাগারে ছিলেন তিনি। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর চিন্তা ভাবনায় আমূল পরিবর্তন আসে তার। অনলাইনে জিহাদি ভিডিও দেখতে থাকেন। এরই মধ্যে টেলিগ্রাম অ্যাপসের মাধ্যমে আনসার আল ইসলামের ‘দাওয়া’ শাখার এক জঙ্গির সঙ্গে পরিচয় হয়। তার মাধ্যমেই আনসার আল ইসলামে যোগ দেন শাকির। সংগঠনে যোগ দেয়ার পর সিলেট, বান্দরবান ও বরিশালে সাংগঠনিক মিটিংয়ে অংশ নেন। এরপরই দায়িত্ব পড়ে মামুর বা সদস্য সংগ্রহের। রিমান্ডের প্রথমদিনের জিজ্ঞাসাবাদে শাকির এসব তথ্য জানিয়েছেন বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র আরো জানায়, কুমিল্লা জেলার মানুষ তুলনামূলক ধর্মপরায়ণ হওয়ায় জঙ্গি সংগঠনটি সদস্য বানানোর জন্য জেলাটিকে হাব হিসেবে ঘোষণা করে। সেখানে সদস্য সংগ্রহের দায়িত্ব পড়ে শাকির ও তার পরিচিত এক চিকিৎসকসহ ৫-৭ জনের ওপর। তারা একসঙ্গে ‘কাটআউট’ পদ্ধতিতে উঠতি বয়সি তরুণদের ইমান-আকিদার ওপরে বয়ান শুনিয়ে মগজ ধোলাইয়ের কাজ শুরু করেন। প্রাথমিকভাবে যেসব

সদস্য জিহাদের পথে আসার জন্য সম্মতি জানাতো, তাদের বিভিন্ন আলেমদের কাছে নিয়ে বয়ান শোনানো হতো। কুমিল্লা থেকে যে ৭ তরুণ কথিত হিজরত করেছে, তাদেরও বিভিন্ন বয়ান শোনানো হয়েছিল। সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের ঠিক করে দেয়া তারিখ অনুযায়ী তাদের হিজরতে পাঠানো হয়। তবে, ঠিক কী উদ্দেশ্যে ওই তরুণরা হিজরত করেছে, তাদের কোথায় পাঠানো হয়েছে, এমন বিষয়ে মুখ খোলেননি শাকির।
এদিকে রিমান্ডের প্রথমদিনের জিজ্ঞাসাবাদে আবরারুল পুলিশকে জানিয়েছেন, শাকিরের পরিচিত এক চিকিৎসকের কাছে প্রাইভেট পড়তেন তিনি। ওই চিকিৎসক ওয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে শাকিরের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। একপর্যায়ে শাকির তার সঙ্গে দেখাও করেন এবং একটি মাদ্রাসায় নিয়ে এক আলেমের মাধ্যমে বয়ান শোনান। পরে আবরারুলের সঙ্গে নিখোঁজ হওয়া ৭ তরুণের দুজন কুমিল্লা সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম ও একই কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী নিহাল আবদুল্লাহর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় এবং ওই তরুণদের কথামতো চলার নির্দেশ দেয়া হয়। যখন হিজরত করার কথা চলছিল, তখন ভয় পেয়ে যান আবরারুল। এরই মধ্যে হাসিব তার কাছে ৩০ হাজার টাকা চান। এত টাকা কেন দিতে হবে- জানতে চাইলে হাসিব আবরারুলকে জানায়, সংগঠনের কাজে দিতে হবে। সেই টাকা দিতে পারেননি আবরারুল। তবে, প্রতি মাসে সংগঠনের জন্য কিছু টাকা দিতেন। এরই মধ্যে ৭ তরুণ হিজরতে চলে গেলে ভয়ে ঢাকায় চলে আসেন আবরারুল।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) কর্মকর্তারা বলছেন, কারাগার থেকে বের হওয়ার পরেই কেন শাকিরের ভেতরে পরিবর্তন এলো সে বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। এমনও হতে পারে কারাগারেই আনসার আল ইসলামের কোনো জঙ্গির সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল তার। কর্মকর্তারা আরো বলেন, শাকিরের মূল দায়িত্ব ছিল সদস্য সংগ্রহ করে হিজরতের জন্য প্রস্তুত করা। এজন্য সদস্য সংগ্রহের পর বিভিন্ন শারীরিক ব্যায়াম করার নির্দেশ দিতেন শাকির। সবকিছু ‘কাটআউট’ পদ্ধতিতে করায় তার সঙ্গে আনসার আল ইসলামের কোনো কোনো জঙ্গির যোগাযোগ ছিল সেটি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে শাকির ও আবরারুলের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার তদারকি কর্মকর্তা ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের এডিসি শেখ ইমরান হোসেন বলেন, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তারা যে তথ্য দেবেন সেগুলো আদালতে উপস্থাপন করা হবে। এর বাইরে বলার মতো কিছু নেই।
উল্লেখ্য, আবরারুল হক নামে এক কলেজছাত্রকে গ্রেপ্তারের পর কুমিল্লার ৭ তরুণের কথিত হিজরতের নামে ঘর ছেড়ে যাওয়ার মূলহোতা চিকিৎসক শাকির বিন ওয়ালীকে রামপুরার হাজীপাড়া থেকে গ্রেপ্তার করে সিটিটিসি। তারা দুজনই আদালতের নির্দেশে ৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। যদিও ছেলেকে ফাঁসানো হচ্ছে বলে দাবি করে আসছেন শাকিরের বাবা চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. এ কে এম ওয়ালিউল্লাহ। তিনি (বাবা) জামায়াত-শিবির ও ডানপন্থি ঘরানার চিকিৎসকদের সংগঠন ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) সহসভাপতি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়