২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু : হাসপাতালে ভর্তি ৩৫৩

আগের সংবাদ

সমান সুযোগের রূপরেখা নেই : ইসির রোডম্যাপ

পরের সংবাদ

শিশুর মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা পূরণ কেন গুরুত্বপূর্ণ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ , ৬:৩২ পূর্বাহ্ণ

সুষ্ঠু স্বাভাবিক বিকাশের জন্য শিশুর মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা পূরণ অপরিহার্য। অথচ বিষয়টি আমাদের দেশে এখনো অনেক বেশি অবহেলিত। এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা নেই। সিংহভাগ মানুষ তেমন একটা জানে না এবং এর গুরুত্বও বোঝে না। ফলে শিশুর মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা পূরণের প্রয়োজনও বোধ করে না। তো এবার চলুন জেনে নেয়া যাক শিশুর মনস্তাত্ত্বিক চাহিদাগুলো আসলে কী? কেনই বা এগুলো এত গুরুত্বপূর্ণ? এই মনস্তাত্ত্বিক চাহিদার অপূরণজনিত সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাবই বা কী কী? শিশুর মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা পূরণ বলতে বোঝায় শিশুকে আদর করা, স্নেহ ভালোবাসা দেয়া, প্রশংসা করা, সহানুভূতি-সহমর্মিতা দেখানো, পরিমিত মাত্রায় স্বাধীনতা দেয়া, মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শোনা, নতুন উদ্যোগে উৎসাহ ও সমর্থন জোগানো, গুরুত্ব দেয়া এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতের মাধ্যমে তাদের জন্য সুখময়, আনন্দদায়ক এবং নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করা। মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা পূরণ হলে শিশুরা মনমরা বা বিমর্ষ থাকে না। তাদের মধ্যে সুখকর অনুভূতির সৃৃষ্টি হয়; তারা হাসিখুশি ও উৎফুল্ল থাকে। মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা পূরণ হলে শিশুর মধ্যে ইতিবাচক আবেগের আধিক্য দেখা যায়। শিশুর সুখকর আবেগসমূহ হচ্ছে- কৌতূহল, হর্ষ, আনন্দ, স্নেহ, ভালোবাসা, আত্মবিশ্বাস ও নিরাপত্তাবোধ ইত্যাদি। মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা পূরণে প্রয়োজন অবজ্ঞা, অবহেলা, অতিশাসন ও সহিংসতা মুক্ত পরিবেশ।
শিশুর শরীরে পুষ্টি জোগানো ও বৃৃদ্ধি সাধনের জন্য যেমন খাদ্য, পানি, আলো, বাতাস ইত্যাদি দরকার, সুস্থ ধারার মানসিক বিকাশ ও আনন্দে-উচ্ছলতায় ভরপুর করে তোলার জন্যও তেমনি মিটানো চাই শিশুর মনের নানাবিধ চাহিদা। অভিভাবকদের তাই প্রথমেই শিশুর মনস্তত্ত্ব ভালোমতো বুঝতে হবে। বিকাশের ধারা অনুযায়ী কোনো বিষয়ে শিশু মন কী চায় তা ভালোমতো জানতে হবে এবং আবেগ প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে। ভয় দেখিয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে আবেগের প্রকাশকে রুদ্ধ করা যাবে না। আবেগের প্রকাশকে রুদ্ধ করা হলে শিশুর ওপর বিভিন্ন মেয়াদে এর বহুমাত্রিক প্রভাব পড়ে। তাদের মানসিক প্রশান্তি বিনষ্ট হয়। হতাশা, দুঃখ ও দুশ্চিন্তা তাদের মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। আবেগের তুষ্টি বিধান করতে না পারলে নিরুপায় হয়ে মনের স্বস্তি ও ভারসাম্য অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সেই আবেগকে তারা অবদমন করে অবচেতন মনে ঠেলে দেয়। যা পরবর্তীতে বিশাল আকারে আগ্নেয়গিরির মতো বিস্ফোরিত হয়। এজন্য শিশুর আবেগকে পরিণত অভিভাবকের দৃষ্টিতে না দেখে শিশুর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। পিতামাতার নিঃশর্ত স্নেহ ভালোবাসার কোনো বিকল্প নেই। ভালোবাসা কিংবা আন্তরিকতার কমতি শিশুরা টের পায়। এতে তাদের মনোকষ্ট হয়। শিশুরা খেলাধুলা করতে বা অবসর সময় পার করতে চায়। সুষ্ঠু সুন্দর মানসিক বিকাশের জন্য তা প্রয়োজনীয়ও বটে। খেলাধুলায় তাদের শরীরচর্চা হয়, সামাজিকীকরণ ঘটে এবং নেতৃত্বের গুণাবলিও তৈরি হয়। সেজন্য অভিভাবকদের অবশ্যই শিশুর জন্য পর্যাপ্ত চিত্তবিনোদন ও খেলাধুলার সুযোগ রাখতে হবে। শিশুদের ধারণক্ষমতার বিষয়টি অভিভাবকদের অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। শিশুর থেকে অতিরিক্ত প্রত্যাশা করা বা তথাকথিত আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলে সাধ্যাতিরিক্ত কাজ চাপিয়ে দেয়া, অতিনিয়ন্ত্রণ কিংবা অতিশাসন কোনোক্রমেই কাম্য নয়। অথচ সমাজে হরহামেশাই আমরা এর বিপরীত চিত্রই দেখি। গাদাগাদা বইয়ের বোঝা বহন আর সকালে ক্লাস থেকে বিকালে কোচিংয়ে দৌড়ানো, সন্ধ্যায় আবার বাসায় টিউটর, ঘনঘন পরীক্ষা- কোথায় যেন তাদের দমফেলার একটুও ফুরসত নেই। এত দায়িত্ব! এত চাপ! যার কোনোটার ভারই এই কচি মন ও অপরিণত দেহ নিতে পারে না। এগুলো শিশুর প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ। এতে তাদের মনের চাহিদা মনেই মারা যায়। শিশুদের কৌতূহল বা জানার ইচ্ছা প্রবল। তারা বিভিন্ন জিনিস দেখে বিস্মিত হয়, কৌতূহলীবোধ করে এবং বারবার করে জানতে চায়। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটলে চলবে না, রূঢ় আচরণ করা যাবে না। ধৈর্য সহকারে তাদের জিজ্ঞাসার জবাব দিয়ে কৌতূহল নিবারণ করতে হবে। অভিভাবক হিসেবে বুঝতে হবে শিশুরা বয়সে অপরিণত। তাদের অভিজ্ঞতা কম। তারা বিভিন্নভাবে ভুল করতে পারে অথবা তাদের নেয়া উদ্যোগ ব্যর্থ হতে পারে। এ সময় তারা মনোকষ্ট পায়, অসহায় বোধ করে এবং সহানুভূতি-সহমর্মিতার জন্য তাদের অন্তর ব্যাকুল হয়ে ওঠে। ঠিক তখনই তাদের অভয় দেয়া, সহানুভূতি-সহমর্মিতার হাত বাড়ানো অভিভাবকদের জন্য একান্ত কর্তব্য। এজন্য কোনোক্রমেই তাদের দোষ দেয়া, তাদের নিয়ে অতিরিক্ত সমালোচনা করা, ঠাট্টা তামাশা করা উচিত নয়।
মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা পূরণে ব্যত্যয় ঘটে শিশুর ওপর চালানো সহিংসতা, অতিশাসন, অবজ্ঞা ও অবহেলা প্রদর্শনের মাত্রার ওপর। এই ধরনের চাহিদা পূরণের অভাবজনিত কারণে শিশুর সুষ্ঠু বিকাশ ব্যাহত হয়। তাদের আচরণ সমাজসম্মত হয় না। তারা সমাজে সঠিকভাবে খাপ খাওয়াতে পারে না, অস্বাভাবিক আচরণ করে। তাদের ত্রæটিপূর্ণ ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে। অন্যদের সামনে তারা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখায়। অসহযোগিতা ও বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পোষণ করে। একাকী থাকতে চায়। কোনো কিছুতে বিরক্ত হলে আগ্রাসী মনোভাব প্রদর্শন করে। তীব্র হতাশা ও সিজোফ্রেনিয়া ইত্যাদি মানসিক রোগ দেখা দেয়। তাই সুষ্ঠু মানসিকতার বিকাশ এবং ভারসাম্যপূর্ণ ব্যক্তিত্ব গঠনে শিশুর মনস্তাত্ত্বিক চাহিদা পূরণের বিকল্প নেই। এই বাস্তবতা আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।

নিয়ামুল কারিম
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়