২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু : হাসপাতালে ভর্তি ৩৫৩

আগের সংবাদ

সমান সুযোগের রূপরেখা নেই : ইসির রোডম্যাপ

পরের সংবাদ

রোহিঙ্গা ফেরাতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের জোরাল ভূমিকা চাইছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে ফেরত পাঠাতে আবারো বিশ্ব সম্প্রদায়ের জোরালো ভূমিকা চাইছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের আসন্ন ৭৭তম অধিবেশনে যোগদানের সময় আগামী ২২ সেপ্টেম্বর এক সাইডলাইন ইভেন্টে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ওআইসি সেক্রেটারিয়েট, কানাডা, সৌদি আরব, তুরস্ক, গাম্বিয়া, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার, জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত, এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালককে রোহিঙ্গা বিষয়ে ব্রিফ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা ছাড়বেন। প্রথমে তিনি যুক্তরাজ্যে যাবেন এবং সেখানে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করে পরের দিন ২০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন। লন্ডনে অবস্থানকালে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর এই সফর উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, নিউইয়র্ক সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থান করবেন। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে বক্তব্য রাখবেন। প্রতিবারের মতো এবারো প্রধানমন্ত্রী বাংলায় বক্তৃতা দেবেন।
বাংলাদেশের অগ্রাধিকার : বর্তমানে বিশ্ব কোভিড মহামারিসহ একটি বহুমাত্রিক সংকটময় পরিস্থিতি পার করছে। বহুমাত্রিক বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় কার্যকর ও উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে বের করা একান্ত প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, করোনা মহামারি ও বিশ্বে চলমান বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে খাদ্য ও জ্বালানি সংকট তৈরি হয়েছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন দেশে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি হয়েছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে করোনা মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সংকটের

পাশাপাশি খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা, বহুপাক্ষিকতাবাদ, টেকসই আবাসন, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল অবকাঠামো গঠনের বিষয়গুলো আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল গুরুত্বপূর্ণ এসব ইস্যুতে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কিত অগ্রাধিকার বিষয়গুলো তুলে ধরবে বলে তিনি জানান।
উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক : ২০ সেপ্টেম্বর নারী নেতৃত্বের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সংকট মোকাবিলায় নারী নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা, গৃহীত উত্তমপন্থা এবং সংকট মোকাবিলায় তাদের সাফল্য বৈশ্বিক বিভিন্ন সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গেøাবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপের সভা অনুষ্ঠিত হবে ২১ সেপ্টেম্বর এবং ওই গ্রুপে ছয় জন চ্যাম্পিয়নের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যতম। এ সভায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী তার সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করবেন বলে তিনি জানান।
জাতিসংঘে যা বলতে পারেন প্রধানমন্ত্রী : কোভিড মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক খাদ্য ও জ্বালানি সংকটের প্রেক্ষাপটে এবছরের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বসতে যাচ্ছে। বরাবরের মতো এবারো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিবেশনে যোগ দেবেন এবং আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি বাংলায় বক্তব্য রাখবেন। করোনা মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই ইউক্রেন সংঘাত বিশ্বকে সামষ্টিক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে যে প্রতিকূলতার

মুখোমুখি হতে হবে, সে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে তুলে ধরতে পারেন বলে জানান মন্ত্রী। এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, সংকট মোকাবিলায় একতরফা জবরদস্তিমূলক পদক্ষেপ, কিংবা নিষেধাজ্ঞার মতো সিদ্ধান্ত না নিয়ে, সংকট সমাধানে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান এবং বহুপাক্ষিকতাবাদকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে গুরুত্বারোপ করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বাংলাদেশের অভাবনীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং প্রযুক্তি খাত বিকাশে সরকারের কার্যক্রম তুলে ধরা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, করোনার মতো ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে টিকা এবং প্রতিষেধকের ন্যায্য ও আরো ন্যায়সঙ্গত বণ্টনের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে উপায় খুঁজে বের করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাবেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শান্তি রক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, সন্ত্রাস ও সহিংস উগ্রপন্থার বিষয়ে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি, সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ অভিবাসন অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু সংক্রান্ত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ফিলিস্তিন সম্পর্কিত বিষয়গুলো তার বক্তব্যে উঠে আসবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, নতুন কোনো রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হবে না। এছাড়া জাতিসংঘ অধিবেশনে রোহিঙ্গা ইস্যু তুলে ধরা হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে ড. মোমেন বলেন, এখন মিয়ানমারে কিছুটা সংঘাত হচ্ছে। আরাকান বাহিনী ও মিয়ানমারের আর্মিদের মধ্যে সংঘাত চলছে। সেটা নিয়ে তারা ঝামেলায় আছে। মিয়ানমার সীমান্ত সিল করে দেয়া হয়েছে, যেন কোনো রোহিঙ্গা ঢুকতে না পারে। তিনি আরো বলেন, বহুমাত্রিক বিশ্ব সংকট মোকাবিলায় কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করা একান্ত প্রয়োজন। এর প্রেক্ষিতে এ বছর সাধারণ বিতর্কের প্রতিপাদ্য হিসেবে ওয়াটার সেট মুভমেন্ট ট্রান্সফরম্যাটিভ সল্যুশন টু ইন্টারলগিং চ্যালেঞ্জেসর ওপরই দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারি ও বিশ্বে চলমান বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির কারণে খাদ্য ও জ্বালানির সংকট তৈরি হয়েছে। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন দেশে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এসব কারণে জাতিসংঘের এই সাধারণ অধিবেশনে করোনা মারামারি, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সংকটের পাশাপাশি খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা, বহুপাক্ষিকতাবাদ, টেকসই আবাসন, নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল অবকাঠামো গঠনের বিষয়সমূহ আলোচনা প্রাধান্য পাবে। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল গুরুত্বপূর্ণ এসব বিষয়ে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ সম্পর্কিত অগ্রাধিকার বিষয়গুলো তুলে ধরবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়