২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু : হাসপাতালে ভর্তি ৩৫৩

আগের সংবাদ

সমান সুযোগের রূপরেখা নেই : ইসির রোডম্যাপ

পরের সংবাদ

বৈরী আবহাওয়ায় থমকে গেছে জনজীবন, ডুবে গেছে বীজতলা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : বৈরি আবহাওয়ায় সমুদ্র উত্তাল। বিরামহীন গতিতে ঝরছে অঝোর বৃষ্টি। মাঠঘাট তলিয়ে গেছে। রোপা আমনের বীজতলা ডুবে আছে জলমগ্ন আবাদি জমিতে। যে দিকে চোখ যায় সেদিকেই যেনো মহাসাগর! এদিকে বর্ষণ আর নদীর জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার ২৫টি গ্রাম প্লাবিত এবং দুই সহ¯্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া উপজেলার পাঁচ শতাধিক পুকুর ও মাছের ঘের ভেসে গেছে। এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
পাথরঘাটা (বরগুনা) : কয়েক দিন ধরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি নি¤œচাপে পরিণত হয়ে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বরগুনার পাথরঘাটার দুই ট্রলার ডুবিসহ এক জেলে নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। তবে গতকাল বুধবার দুপুরে শেষ খবর পর্যন্ত নিখোঁজ জেলে মোশারেফ শরীফের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এর আগে জানা যায়, পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানি ইউনিয়নের মো. আউয়ালের মালিকানাধীন ও একই এলাকার শহিদ শরীফের মালিকানাধীন দুটি মাছধরা ট্রলার গত ১১ সেপ্টেম্বর বলেশ্বর নদের

পক্ষীদিয়া নামক স্থানে ডুবে গেলে ট্রলার দুটিতে থাকা ১২ জেলের মধ্যে ১১ জেলে বাড়ি ফিরে আসতে পারলেও চরদুয়ানি ইউনিয়নের তাফালবাড়িয়া গ্রামের মো. শহিদ শরীফের ছেলে মো. মোশারেফ শরীফ (৩২) বলেশ্বর নদে পড়ে নিখোঁজ রয়েছে। বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এদিকে সমুদ্রে কাক্সিক্ষত মাছের দেখা পাওয়া সত্ত্বেও উপকূলীয় অঞ্চলে ফিরে আসছে শত শত মাছধরা ট্রলার।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, স¤প্রতি নি¤œচাপে লোকসান দিয়ে ফিরে আসা ট্রলারগুলো নিয়ে ধার দেনা করে আবারো সমুদ্রে গিয়েছিল জেলেরা।
তিনি আরো জানান, পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানি ইউনিয়নের মো. শহিদ শরীফের মালিকানাধীন ট্রলারের মো. মোশারেফ শরীফ (৩২) বলেশ্বর নদে পড়ে এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
কোস্টগার্ডের পাথরঘাটা স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মমিনুল ইসলাম বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া দেখেই গত তিন দিন আগে থেকে সাগর ও নদনদী এলাকায় জেলেদের ফিরে আসতে মাইকিং করা হয়েছে।
বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বৃষ্টির পানিতে ডুবে থাকা রোপা আমন চাষিরা। দীর্ঘদিন জলমগ্ন থাকলে কৃষকরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলে তারা শঙ্কা প্রকাশ করেন।
মোরেলগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত : মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে গত চারদিন ধরে থেমে থেমে বর্ষণ আর নদীর জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার ২৫টি গ্রাম প্লাবিত এবং দুই সহ¯্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া উপজেলার পাঁচ শতাধিক পুকুর ও মাছের ঘের ভেসে গেছে। উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ তাদের দীর্ঘদিন ধরে বেড়িবাঁধের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে আসছেন।
এদিকে গত তিন দিনের বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীতে জোয়ারের পানির চাপ চতুর্থ দিন বুধবার কিছুটা কমেছে। ফলে অনেক মাছের ঘের তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে বেঁচে গেছে বলে বলছে মৎস্য বিভাগ। তবে এই বৃষ্টিতে চলতি রোপা আমন ধানের উপকার হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাজুড়ে রবিবার থেকে প্রবল বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি জমে সেখানে বেশকিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে শীতকালীন সবজিক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে। দ্রত এই পানি নেমে না গেলে চাষিদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ–-শরণখোলা) আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট আমিরুল আলম মিলন বলেন, মোরেলগঞ্জ উপজেলার পঞ্চকরণ, বহরবুনিয়া, ঝিউধারা ও চিংড়াখালীসহ মোরেলগঞ্জ সদর ও শরণখোলা উপজেলার দুই হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। এছাড়া জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়তে বলেছি। প্রয়োজনে তাদের খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, মোরেলগঞ্জের পৌরসভা অংশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রতিনিয়ত উচ্চ জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে। ওই অংশে নদীতীর প্রতিরক্ষার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। নদীতীর সংরক্ষণের কাজ চলতি অর্থ বছরে শুরু করা হবে। তিনি আরো বলেন, জোয়ারের পানি রোধ করতে মোরেলগঞ্জ উপজেলার জন্য ৯৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন। এরজন্য চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। তার সমীক্ষা খুব শিগগিরই শুরু হবে। ওই বাঁধ নির্মিত হলে রামপাল ও মোংলা উপজেলারয় জোয়ারের পানি প্রতিরোধ হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে জোয়ার ও বৃষ্টিতে মোরেলগঞ্জ উপজেলার নদী তীরবর্তী নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে কয়েকশ পরিবার সাময়িকভাবে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তালিকা তৈরির পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়