২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু : হাসপাতালে ভর্তি ৩৫৩

আগের সংবাদ

সমান সুযোগের রূপরেখা নেই : ইসির রোডম্যাপ

পরের সংবাদ

প্রকাশনা অনুষ্ঠান নয় যেন চিকিৎসকদের মিলনমেলা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : অভিজ্ঞতা বিনিময়, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক নিয়ে স্মৃতিচারণ এবং মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে প্রকাশনা অনুষ্ঠানটি হয়ে উঠেছিল ছাত্র-শিক্ষকের মিলনমেলা। যেখানে ৬২ বছর আগের সম্পর্কের আবেগমথিত স্মৃতিচারণ থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু কিছুই বাদ গেল না।
গতকাল বুধবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে আয়োজিত অর্থোপেডিক সার্জারিবিষয়ক গ্রন্থ ‘ট্রিটমেন্ট অব ফ্রাকচারস এন্ড ডিসলোকেশনস’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে দেশের ৩৫ বরেণ্য চিকিৎসকের উপস্থিতিতে এমন হৃদয়ছোঁয়া সম্মিলন ঘটল।
স্মৃতিচারণে বক্তারা বলেছেন, ডা. সালেক তালুকদার নীরবে নিভৃতে কাজ করে গেছেন। শ্রম আর একাগ্রতার কারণে বিকশিত হয়েছেন। স্বাধীনতা উত্তর সময় থেকেই তার শ্রম-মেধা দিয়ে চিকিৎসা জগৎকে করেছেন সমৃদ্ধ। এর মধ্য দিয়ে তিনি মূলত জনগণেরই পাশে ছিলেন। দেশে অর্থোপেডিক এবং প্লাস্টিক সার্জারির গোড়াপত্তন হয়েছে তারই হাত ধরে। জীবনের শুরু থেকেই তিনি ছিলেন খানিকটা ব্যতিক্রম। এখনো তিনি ব্যতিক্রম। তার গ্রন্থটি ছাত্র-শিক্ষক এবং পেশাজীবীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মাদকবিরোধী আন্দোলনের অনন্য যোদ্ধা এবং লেখক ডা. অরূপ রতন চৌধুরীর সঞ্চালনায় বিএমএ’র সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুবের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্সের অধ্যাপক এস এ আশরাফ।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন, অধ্যাপক ডা. শামসুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক আলতাফ হোসেন, অধ্যাপক কাজী শহীদুল আলম, অধ্যাপক আব্দুল হান্নান, অধ্যাপক এম আমজাদ হোসাইন, অধ্যাপক আব্দুল গনি মোল্লা এবং ড. শিরীণ জাহাঙ্গির প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. কাইয়ুম চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অধ্যাপক এস এ আশরাফ বলেন, অর্থোপেডিক সার্জারি বিষয়ক গ্রন্থটি ছাত্র-শিক্ষক পেশাজীবীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি গ্রন্থ। এখন আর বিদেশ থেকে বই আনতে হবে না।
তিনি বলেন, কলকাতা প্রেসিডেন্সি হাসপাতাল থেকে জওহরলাল নেহেরু হাসপাতালে কাজের সুযোগ হয়েছে। এরপর দেশভাগ, স্বাধীনতা যুদ্ধও দেখেছি। তখনকার দিনে চিকিৎসা কার্যক্রম অনেক অপ্রতুল এবং প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হয়েছে আমাদের।
সালেক তালুকদার প্রশাসনের বিরূপতার কারণে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নিজের কর্মকাণ্ড করেছেন। নীরবে নিভৃতে বই লিখেছেন এজন্য তাকে ধন্যবাদ।
তিনি বলেন, বর্তমান মেডিকেল শিক্ষা কারিকুলামে অনেক কিছু পরিপূর্ণ নেই। যা অন্তর্ভুক্ত করলে রোগীদের অনেক পঙ্গুত্ব কমবে। এসবের দিকে নজর দিতে হবে এবং বাস্তবায়ন করতে হবে। অবশ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আমাদের কোনো পরামর্শ নেয় না। এক্ষেত্রে ডাক্তারদেরও কি কর্তব্য তাও বিবেচনায় না নেয়া ভুল। প্রশাসনে যারা থাকেন তাদের অনেক কিছু বোঝাতে হয়। প্রয়োজনে গতিপথকে পরিবর্তন করতে হবে।
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, অর্থোপেডিক সার্জারি বিষয়ক এমন একটি গ্রন্থ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য। তাদের কাছে এর গুরুত্ব তুলে ধরার প্রয়োজন রয়েছে।
গ্রন্থের লেখক অধ্যাপক ডা. সালেক তালুকদার বলেন, সেই ১৯৬০ সাল থেকে আমি ঢাকা মেডিকেলে পড়াচ্ছি। সে সময় থেকে গত পঞ্চাশ বছরে যা শিখেছি তা সংগ্রহে রাখার চেষ্টা করেছি। যা আমার গ্রন্থে যুক্ত করার চেষ্টা করেছি। বইটি চিকিৎসক সমাজ ও সর্বস্তরের মানুষের উপকারে আসলে আমার লেখা সার্থক হবে।
তিনি বলেন, সে সময় ঢাকা মেডিকেলে অর্থোপেডিক বিভাগ ছিল না। অনেক কষ্টে রোগীদের সেবা দিতে হয়েছে। সে সময় আমরা মেঝেতেই রোগী দেখতাম। আমাদের ঘুমানো থেকে খাওয়া-দাওয়া হাসপাতালেই ছিল। এত বেশি চাপ ছিল।
তিনি বলেন, আজকের পঙ্গু হাসপাতাল ছিল সে সময় ধান ক্ষেত আর জলাধার। পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য হাসপাতাল বানাতে আমাকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল ওই জমি দখল করতে। অন্যরা বাধা দিলেও বঙ্গবন্ধুর কাছে গেলে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই অনুমতি দিয়েছিলেন। এটা স্মৃতি হয়ে আছে।
অর্থোপেডিক সার্জারি গ্রন্থটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, সেই বাষট্টি বছর আগের চেনা ব্যতিক্রমী মানুষটি এখনো ব্যতিক্রমী একজন মানুষই রয়ে গেলেন। শ্রম আর একাগ্রতার কারণে তিনি বিকশিত হয়েছেন এবং চূড়ায় উঠেছেন। তিনি চিকিৎসা জগতে জীবিত কিংবদন্তি। তিনি বেঁচে আছেন এটা আমাদের গৌরব। তার অবদানকে মূল্যায়ন করলে তিনি আরো অনেক কিছু দিতে পারবেন।
শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের সময়ে আমাদের অবস্থা ছিল নাতি-খাতি বেলা গেল শুতি পারলাম না। এখন বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষের যুগে বই লেখা সহজ হলেও অনেকে এই জরুরি কাজটি করেন না। কিন্তু কর্তব্যবোধের কথা হৃদয়ে গাথা ছিল বলেই তিনি গ্রন্থ রচনায় এগিয়ে এসেছেন। যদিও এই জ্ঞানের সঙ্গে আমাদের জ্ঞানের অনেক তফাৎ রয়েছে। তবুও তিনি অসাধ্য সাধন করেছেন।
কাজী শহীদুল আলম বলেন, তিনি বাংলাদেশের প্রাচীনতম শৈল্যবিদ। সবারই শ্রদ্ধার পাত্র। তিনি আমাদের আইকন। তাদের মতো ব্যক্তিত্বরা আমাদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে দিয়েছেন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সৌভাগ্য হচ্ছে তারা দেশের একজন বিখ্যাত বিশেষজ্ঞের গ্রন্থ পেয়েছে।
আব্দুল গনি মোল্লা বলেন, অর্থোপেডিক বিষয়ের একজন কিংবদন্তি ডা. সালেক তালুকদার। দেশে অর্থোপেডিক এবং প্লাস্টিক সার্জারির গোড়াপত্তন হয়েছে তারই হাত ধরে। এর মধ্য দিয়ে তিনি মূলত জনগণেরই পাশে ছিলেন। কেবল তাই নয়, স্বাধীনতা উত্তর সময় থেকেই তার শ্রম-মেধা দিয়ে চিকিৎসা জগৎকে করেছেন সমৃদ্ধ। দেশে অর্থোপেডিক চিকিৎসা বিকশিত করার ক্ষেত্রে তার অবদান অনিস্বীকার্য। তারা অর্থোপেডিক সার্জারির ‘রেভ্যুলেশন’ ঘটিয়েছেন। তারা আমাদের সেরা নায়ক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়