২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু : হাসপাতালে ভর্তি ৩৫৩

আগের সংবাদ

সমান সুযোগের রূপরেখা নেই : ইসির রোডম্যাপ

পরের সংবাদ

পরীক্ষা থাকায় হিজরত করেননি আবরারুল : চিকিৎসক শাকিরসহ দুজন রিমান্ডে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : কুমিল্লার সাত তরুণের কথিত হিজরতের নামে ঘর ছেড়ে যাওয়ার নেপথ্য নায়ক রাজধানীর রামপুরা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া চিকিৎসক শাকির বিন ওয়ালী। তিনি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের জন্য সদস্য সংগ্রহ, সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও কথিত হিজরতে যেতে সহায়তা করতেন। এরই ধারাবাহিকতায় ঘর ছাড়া সাত তরুণের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে তাদেরকে হিজরতে উদ্বুদ্ধ করেন। শাকির বিন ওয়ালীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে সদস্য সংগ্রহে কাজ করতেন আরো এক চিকিৎসক। তাকে নজরদারিতে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পাশাপাশি শাকির ও অপর চিকিৎকের সঙ্গে আনসার আল ইসলামের শীর্ষ কয়েকজন নেতার যোগসূত্র রয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তাদের বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে সিটিটিসির একটি সূত্র।
এদিকে, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কুমিল্লা ইস্পাহানি স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র আবরারুল হক পুলিশকে জানিয়েছেন, ওই সাত তরুণের সঙ্গে তারও হিজরত করার কথা ছিল। কিন্তু হিজরতে যাওয়ার সময় তার পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। এজন্য ওই ৭ তরুণের সঙ্গে তিনি যেতে পারেননি। তবে, পরবর্তী হিজরতের সময় তার

যাওয়ার কথা ছিল। এজন্য প্রস্তুতিও

নিচ্ছিলেন। জঙ্গি সংগঠনটির সদস্য হওয়ার বিষয়ে আবরারুল জানিয়েছেন, নিখোঁজ ৭ তরুণের মধ্যে থাকা কুমিল্লা সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী হাসিবুল ইসলামও একই কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী নিহাল আবদুল্লাহর মাধ্যমে শাকিরের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। এরপর একাধিক মিটিংয়ে অংশ নিয়ে জঙ্গি সংগঠনটিতে নাম লেখান আবরারুল।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কুমিল্লার ৭ তরুণ হিজরতে যাওয়ার পর থেকেই নেপথ্যের হোতাদের খোঁজে মাঠে নামে সিটিটিসি (কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট)। একপর্যায়ে বড় মগবাজার থেকে আবরারুলকে গ্রেপ্তারের পরে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চিকিৎসক শাকিরের নাম। পরে তাকে পূর্ব হাজিপাড়ার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে নতুনভাবে সক্রিয় জঙ্গি নেটওয়ার্ক সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। আনসার আল ইসলামের শীর্ষ কয়েকজনের সঙ্গে শাকিরের যোগাযোগ থাকার প্রমাণও মিলেছে। সিটিটিসির একাধিক সূত্র জানায়, কুমিল্লা থেকে যে তরুণরা হিজরতের জন্য ঘর ছাড়ে, তাদের ২০২১ সালের শেষ সময়ে টার্গেট করা হয়। ধর্মীয় জ্ঞান ও ফতোয়ার ব্যাপারে বিশদ ব্যাখ্যার প্রয়োজন হলে কুমিল্লার একজন মুফতির কাছে তাদের নেয়া হতো। প্রতি দফায় দুই-তিনজনকে নেয়া হত। জিহাদের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নেয়ার পর সপ্তাহ তিনেক আগে একে একে ঘর ছাড়ে ৭ তরুণ। কুমিল্লা জেলা পুলিশ জানায়, গত ২৩ আগস্ট ঘর ছেড়ে তারা প্রথমে চাঁদপুরে যায়। চাঁদপুর রেলস্টেশন এলাকার একটি হোটেলে রাত্রিযাপন করে। পরদিন সকাল সাড়ে ৬টায় তারা ওই হোটেল থেকে চলে যায়।
সিটিটিসি সূত্র জানায়, ঘর ছাড়ার পর তরুণরা বেশ কয়েকটি জেলায় গেছে। এর মধ্যে রয়েছে চাঁদপুর ও বরিশাল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শাকির ও তার সহযোগীরা এসব ঠিকঠাক করে দিয়েছে। কারণ শাকিরের এক আত্মীয়ের বাড়ি চাঁদপুরে। আর স্ত্রীর সুবাদে বরিশালে কিছুদিন বাস করে সে। দুই জায়গায় নিখোঁজ তরুণদের আস্তানা খুঁজে দেয়ার ঘটনায় তার ভূমিকা থাকতে পারে।
সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা জানান, ঘর ছাড়ার পর তরুণরা বেশ কয়েকটি জেলায় গেছে। এর মধ্যে রয়েছে চাঁদপুর ও বরিশাল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শাকির ও তার সহযোগীরা এসব ঠিকঠাক করে দিয়েছে। কারণ শাকিরের এক আত্মীয়ের বাড়ি চাঁদপুরে। আর স্ত্রীর সুবাদে বরিশালে কিছুদিন বাস করে সে। দুই জায়গায় নিখোঁজ তরুণদের আস্তানা খুঁজে দেয়ার ঘটনায় তার ভূমিকা থাকতে পারে। এদিকে, উগ্রবাদী আদর্শে বিশ্বাসী শাকিরের স্ত্রী আয়েশা বিনতে মুস্তাফিজকে রাখা হয়েছে পুলিশি নজরদারিতে। তিনি বরিশাল মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। স্বামীর সঙ্গে জঙ্গি নেটওয়ার্কে তার যোগসূত্র পাওয়ার পর আয়েশার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসেট পুলিশ জব্দ করেছে।
ওই ফোনে জঙ্গি মতবাদবিষয়ক বিভিন্ন লেখা পাওয়া গেছে। আয়েশা ছাড়াও তার স্বামীর দুটি ও আবরারুলের একটি ফোনসেট জব্দ করে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এতে তাদের সঙ্গে আনসার আল ইসলামের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। এসব ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডির ল্যাবে পাঠানো হবে।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, দেশের প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে শাকিরের কোনো বিশ্বাস নেই। শরিয়াভিত্তিক চিকিৎসা নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করে সে। ‘র‌্যামফিট’ নামে একটি পদ্ধতিতে সে বিশ্বাস করে। ২০১৮ সালে সে একবার গ্রেপ্তার হলেও পরে ছাড়া পায়। খুব কম সময় সে মোবাইল ফোনে কথা বলে। যদি কোনো প্রয়োজন হয়, অ্যাপস ব্যবহার করতো। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অ্যাপস ছাড়া কথা বলে না। বর্তমানে মা-বাবা ও স্ত্রীর সঙ্গে পূর্ব হাজীপাড়ার বাসায় থাকলেও নতুন রিক্রুট করা জঙ্গিদের উদ্দেশ্যে বয়ান দিতে মাঝেমধ্যে কুমিল্লা যেতেন।
এছাড়াও শাকির তার এক আত্মীয়ের ছেলেকেও উগ্রপন্থায় নিতে প্রলুব্ধ করে। ওই ছেলের বাবা সরকারি কর্মকর্তা। বিষয়টি ওই ছেলের বাবা টের পাওয়ার পর শাকিরকে শাসান। দ্রুত শাকিরকে ওই পথ থেকে সরে আসার তাগিদ দেন। তবে শাকির তা কানে তোলেনি। আত্মীয়ের ছেলেকে জঙ্গিবাদে নিতে না পারলেও অন্য তরুণদের ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন।
এ ব্যাপারে সিটিটিসির প্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কুমিল্লা থেকে যারা নিখোঁজ হয়েছিল, তাদের ইমান, তাওহিদ ও জিহাদ সম্পর্কে দীক্ষা দেয় শাকিরসহ আরো একজন। তাদের ওপরে অন্য কেউ থাকতে পারে। সর্বশেষ যে সাত তরুণ নিখোঁজ হয়েছে, তাদের খোঁজে বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। সিটিটিসির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) শেখ ইমরান হোসেন বলেন, বড় প্রস্তুতি নিয়ে তরুণদের ভুল পথে নিয়েছিল চক্রটি। শাকির মূলত রিক্রুটকারী। এর পেছনে আর কারা রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
শাকির ও আবরারুল রিমান্ডে : রাজধানীর রামপুরা থানায় করা সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় চিকিৎসক শাকির বিন ওয়ালী ও আবরারুলের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বুধবার তাদেরকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের ১০ দিন করে রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিটিটিসির পুলিশ পরিদর্শক এস এম মিজানুর রহমান। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ হুমায়ুন কবির তাদের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে রামপুরা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন পুলিশ পরিদর্শক কাজী মিজানুর রহমান।
অভিযোগ কাল্পনিক বলছেন শাকিরের বাবা : সাকিরের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার সবটাই মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক বলে দাবি করেছেন তার বাবা চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক একেএম ওয়ালিউল্লাহ। গতকাল বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছে এমন দাবি করেন তিনি। এসময় তিনি চিকিৎসক সাকির বিন ওয়ালীর বিরুদ্ধে আনা মিথ্যা অভিযোগের প্রতিকার ও তার উপর জুলুমের বিচার দাবি করেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। পাশাপাশি দেশবাসীকে সিটিটিসির আনা এমন মিথ্যা অভিযোগ বিশ্বাস না করার জন্যও অনুরোধ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, শাকির বিন ওয়ালী কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ থেকে ২০২০ সালে এমবিবিএস পাস করেন। বর্তমানে তিনি এফসিপিএস-এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। শাকির ছাত্রজীবনে রেটিনা কোচিং সেন্টারে পড়াতেন। এমবিবিএস পড়ার সময় জঙ্গিবাদের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে দেড় মাস কারাগারে ছিলেন। তার বাবা চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ওয়ালী উল্লাহ ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) সহ-সভাপতি। সংগঠনটি জামায়াত-শিবির সমর্থিত ও ডানপন্থি ঘরানার চিকিৎসকদের।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়