২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু : হাসপাতালে ভর্তি ৩৫৩

আগের সংবাদ

সমান সুযোগের রূপরেখা নেই : ইসির রোডম্যাপ

পরের সংবাদ

নদী শাসন ও খাল খননে উদ্যোগ নিতে হবে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বর্তমানে যথাযথ নদীশাসনের অভাবে নদীপথের পানির প্রবাহ যেমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, ঠিক তেমনি নদী ভরাট হয়ে বর্ষাকালীন সময়ে ভয়াবহ নদীভাঙনের তীব্রতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে নদীর দুধারের আবাদি জমি ও বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। এতে যেমন নদীপাড়ের শত শত জনগণ সহায়-সম্বল হারিয়ে ভূমিহীন হয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে, ঠিক তেমনি আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত তাদের কৃষিকাজে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে বন্যার পানি স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ, নদী শাসন ও খাল খননের প্রকল্প হাতে নিয়ে অদূর ভবিষ্যতে পানি সংকট মোকাবিলা করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু আমরা আমাদের মৃত নদীগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে এখন পর্যন্ত কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারিনি। যা দেশের ভয়াবহ প্রাকৃতিক পরিবেশের বিপর্যয়ের কারণ বলে মনে করি। তাই সমস্যা সমাধানে এ খাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেয়া জরুরি। দীর্ঘদিন এসব নদ-নদীর সঠিক পরিচর্যা, নীতি নির্ধারকদের উদাসীনতা, প্রয়োজনীয় উপকরণের স্বল্পতা, বৈদেশিক পানি বণ্টন চুক্তির সফল বাস্তবায়ন ও নদ-নদীর আগ্রাসন বন্ধ না হওয়াসহ এ খাত উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সরকারি অর্থ বরাদ্দ তেমন না থাকায় নদীগুলো শুকিয়ে এদেশ মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। গবেষকদের মতে, নদীভাঙন রোধের জন্য কখনোই ড্রেজিংই একমাত্র সমাধান নয়। ড্রেজিং পদ্ধতি অনেক ব্যয়বহুল। দ্বিতীয়ত, নদীগুলো বছরে যে পরিমাণ পলি ধারণ করে সেখানে ড্রেজিং পদ্ধতি কার্যকর নয়। আমাদের নদীর বৈশিষ্ট্য বুঝতে হবে। সব নদীর বৈশিষ্ট্য কিন্তু এক রকম নয়। কোনো নদী বেশি পলি ধারণ করে, আবার কোনোটা কম। কেউ বেশি খরস্রোতা, কেউ আবার সারা বছরই সমান তালে চলে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পলি ধারণ করে পদ্মা, যমুনা ও তিস্তা। এক কথায় বলতে দেশের বড় নদীগুলো সবারই একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো পলি ধারণ করা। তাই নদীর বৈশিষ্ট্যকে সমুন্নত রেখে তাকে ব্যবহারোপযোগী করতে হবে। এ জন্য নদীশাসন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিপুল পরিমাণ পলি ধারণ করার কারণে পাড় ভাঙে। তাই আমাদের নদীশাসনের প্রধান কাজ হওয়া উচিত নদীর পাড় সংরক্ষণ করা। পাড় বাঁধা। সেই পাড় বাঁধাটাও আবার তার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী করতে হবে। যে দিকটা বেশি ভাঙছে সে দিকটাকে বেশি শক্ত, মজবুত করতে হবে। লোকালয় থেকে একটা স্বাভাবিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং সর্বোপরি সেই কাজের সঙ্গে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। পাশাপাশি ড্রেজিং পদ্ধতিটাকে আমরা তখনই ব্যবহার করব, যখন নদীর গতিপথ পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের নদীগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী একে শাসন করার জন্য নদীর পাড় বাঁধতে হবে। যেন সে তার নিজস্ব আচরণ অব্যাহত রাখতে পারে। তার পলি ধারণ করে যেন সে পানিপ্রবাহ সচল রাখতে পারে।
যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতি বছর এত পরিকল্পনা করে, যার বাস্তবায়ন দেখা যায় বন্যা হলে যা বাস্তবে কোনো সুফল বয়ে আনে না। নদী সংরক্ষণে এটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করা, তাদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করা। স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে কাজ করলে তারাও বিষয়গুলো সম্পর্কে এক ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করে। তখন সে জরুরি মুহূর্তে সেবা দিতে পারে। সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। যথাযথ পরিচর্যা, নদী খনন, পানিদূষণ ও উপযুক্ত নদী শাসনের অভাবে এখন এদেশে প্রায় সব নদ-নদী মৃতপ্রায়। যা কৃষিসহ প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর বিরাট নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে। এই সংকট ও বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে অতিদ্রুত স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি নদী শাসন ও অধিক খাল খনন প্রকল্প গ্রহণ করতে সরকার তথা সংশ্লিষ্টদের সদিচ্ছা কামনা করছি।

মো. আতিকুর রহমান
লেখক ও সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা, বিইউএফটি।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়