২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু : হাসপাতালে ভর্তি ৩৫৩

আগের সংবাদ

সমান সুযোগের রূপরেখা নেই : ইসির রোডম্যাপ

পরের সংবাদ

ঘাটতি বাড়ছে এনবিআরের রাজস্ব আয়ে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আলী ইব্রাহিম : বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থবিরতার বিরূপ প্রভাব পড়ছে রাজস্ব আয়ে। দিনে দিনে বেড়েই চলেছে রাজস্ব ঘাটতি। ডলারের দাম বাড়া এবং বৈশ্বিক পণ্যের উচ্চ মূল্যের কারণে আমদানি-রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি হলেও বেহাল অবস্থা আয়কর এবং ভ্যাট আদায়ে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) গড় প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের কোটা ছাড়ালেও আয়কর ও ভ্যাটে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি দুই শতাংশের কোটায় ঘুরপাক খাচ্ছে। বিশাল অঙ্কের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসেবে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (সাময়িক হিসেবে) এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৩ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে এনবিআর রাজস্ব আদায় করেছে ৩৮ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে রাজস্ব আয়ের গড় প্রবৃদ্ধি ১১ দশমিক ০৬ শতাংশ হলেও এই অর্জন সম্ভব হয়েছে আমদানি-রপ্তানি খাতের ওপর ভর করে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি প্রকল্প থেকে বিশাল পরিমাণে রাজস্ব আদায় হয়ে থাকে। বিশেষ করে সরকারি প্রকল্পে উৎসে কর থেকে বিশাল পরিমাণে রাজস্ব আসে। বৈশ্বিক সংকটের কারণে প্রকল্প কমে যাওয়ার একটা প্রভাব পড়েছে সার্বিক রাজস্ব আয়ে। এছাড়া পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় একদিকে যেমন ভ্যাট আদায় কমেছে, অন্যদিকে আমদানি-রপ্তানিতে রাজস্ব আহরণ বেড়েছে। এই কারণে রাজস্ব আয়ে আমদানি-রপ্তানি খাতে ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। অর্থনৈতিক এমন পরিস্থিতিতে এনবিআরের পক্ষে বিশাল পরিমাণে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব। তবে একটা যৌক্তিক পর্যায়ে রাজস্ব আহরণ হবে বলেও আশাবাদ এনবিআরের কর্মকর্তাদের। সূত্র আরো জানায়, এনবিআরের রাজস্ব আয়ের প্রধান খাত হিসেবে বিবেচিত ভ্যাট আদায়ে স্থবিরতা লক্ষ্য করা গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ১৩ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। অর্থাৎ দুই মাসে ভ্যাট আদায়ে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। আয়কর ও ভ্রমণকর খাতে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ১০ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ দুই মাসে আয়কর খাতে এনবিআরের রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। তবে ভালো রাজস্ব আদায় হয়েছে আমদানি-রপ্তানি খাতে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে আমদানি-রপ্তানি খাতে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ হাজার ১৭২ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ১৪ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ আমদানি-রপ্তানি খাতে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪২৫ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে আমদানি-রপ্তানি খাতে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ছিল ২৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি-রপ্তানিতে ভালো রাজস্ব আয় হচ্ছে। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এই খাতে এত ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। তবে উল্টো চিত্র ভ্যাট আদায়ে। কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দাম বাড়ার কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আগের তুলনায় কমে গেছে। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট আদায়ে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণে ভ্যাট আহরণ কমলেও আমদানি-রপ্তানিতে ভালো রাজস্ব আদায় হচ্ছে। সেই সঙ্গে ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানি-রপ্তানি খাতে রাজস্ব আহরণের ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। তবে স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাট আহরণের আরো জোর দিতে হবে। বিশেষ করে অটোমেশন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি ভ্যাট ফাঁকি রোধ করতে হবে বলেও মনে করেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক এই অর্থনীতিবিদ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়