গাজীপুরের পানি বিষাক্ত : শিল্পায়নের মূল্য দিচ্ছে স্থানীয়রা

আগের সংবাদ

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : যথাসময়ে নির্বাচন হবে

পরের সংবাদ

‘রেড জোনে’ আর হকার নয়

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** ডিএসসিসির উচ্ছেদ অভিযান, হকারদের বিক্ষোভ ও পুনর্বাসন দাবি ** ‘হলুদ জোনে’ শর্ত সাপেক্ষে বসতে পারবে হকার **

কাগজ প্রতিবেদক : অতীতে বহুবার হকারদের দখলে থাকা ফুটপাত উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। তাতে খুব একটা সুফল আসেনি। সকালে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে কর্মকর্তারা চলে গেলে বিকালে আবার হকারদের দখলে চলে যেত। অর্থাৎ চোর-পুলিশ খেলা হতো। সর্বশেষ ডিএসসিসির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন শক্ত অবস্থান নিয়ে গুলিস্তান এলাকাকে হকারমুক্ত রাখতে পেরেছিলেন কিছুদিন। বেশি দিন তা ধরেও রাখা সম্ভব হয়নি। কেননা, হকার সিন্ডিকেট উচ্ছেদের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছিল। এমনকি হকাররা উচ্ছেদ অভিযানকারীদের ওপরও হামলা করেছিল বহুবার। তবুও ফুটপাত থেকে সরানো যায়নি তাদের। এবার কিছু ফুটপাত হকারমুক্ত রাখতে ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। হকার পুরোপুরি উচ্ছেদ না করে সংশ্লিষ্ট এলাকাকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো ‘রেড জোন’, ‘হলুদ জোন’ আর ‘সবুজ জোন’। এজন্য একটি কমিটি গঠন করেছে সংস্থাটি। ডিএসসিসি’র নগর পরিকল্পনাবিদকে আহ্বায়ক ও সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদকে সদস্য সচিব করে গঠিত এই কমিটিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার

কাউন্সিলররাও থাকছেন। রবিবার এই কমিটি ঘোষণা করা হয়।
গত বুধবার মেয়র ফজলে নূর তাপস ঘোষণা দিয়েছিলেন- এখন থেকে ‘রেড জোন’ অর্থাৎ ‘লাল চিহ্নিত’ এলাকায় আর হকার বসতে দেয়া হবে না। এই ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোকে। ডিএসসিসির কর্মকর্তারা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা যেসব রাস্তায় আছে, সেই রাস্তাগুলো ‘রেড জোন’ বা লাল শ্রেণির বলে চিহ্নিত করা হবে। সেখানে কখনোই হকার বসতে দেয়া হবে না। ‘ইয়োলো জোন’ বা ‘হলুদ চিহ্নিত রাস্তা তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে সিটি করপোরেশনের নির্ধারণ করে দেয়া সময়ে ওই স্থানে শর্ত সাপেক্ষে হকার বসতে পারবে। আর ‘গ্রিন জোন’ বা ‘সবুজ চিহ্নিত’ এলাকায় প্রয়োজন অনুযায়ী কিছু কিছু অংশে হকার বসতে পারবে। তবে হকার বসলে পথচারী বা যান চলাচলে যেন কোনো ধরনের বিঘœ না ঘটে।
সেই অনুযায়ী গত রবিবার গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, বঙ্গভবনের আশপাশের এলাকা, আহাদ পুলিশ বক্স ও হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের দুটি অংশ থেকে প্রায় ১ হাজারের বেশি হকার উচ্ছেদ করে ডিএসসিসির ভ্রাম্যমাণ আদালত। সংস্থাটির সম্পত্তি কর্মকর্তা মুনিরুজ্জামান এতে নেতৃত্ব দেন। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনামুল হোসেন আবুল ও ফরিদউদ্দিন আহমেদ রতন উপস্থিত ছিলেন ওই সময়। ঢাকা মেট্রোপালিটন পুলিশ অভিযানে সহযোগিতা করে। এদিকে ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল মঙ্গলবারও উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। কিন্তু ডিএসসিসির টিম দেখে অভিযানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে হকারদের একটি অংশ। তারা উচ্ছেদের আগে নিজেদের পুনর্বাসনের দাবি তুলেন। তবে বিক্ষোভরত হকাররা বেশি সময় রাস্তায় থাকতে পারেনি।
এবারের অভিযান নিয়ে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন জানান, রেড জোনে হকারদের বসার সুযোগ দেয়া হবে না। তারা যতবার বসবে, ততবারই আমরা অভিযান চালাব। কোনোভাবেই এ জোনে হকার বসতে দেয়া হবে না। এবারের অভিযানে কেউ ঝামেলা করতে আসবে না। যেসব রাজনৈতিক নেতা বা অন্যরা ঝামেলা করতে পারেন বলে মনে হয়েছে, আগেই তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে আমরা সিটি করপোরেশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আরো কঠোর হব।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে যান চলাচল বেড়েছে। সে কারণে গুলিস্তানে ফ্লাইওভার যেখানে নেমেছে, তার সামনের সড়কে যান চলাচল নির্বিঘœ করতে ওই এলাকাকে ‘রেড জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। যার ফলে এ উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। রবিবার এক হাজারের বেশি হকার উচ্ছেদ করা হয়।
এদিকে গতকালও অভিযানে নামে ডিএসসিসি। দুপুর ১২টার দিকে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা গুলিস্তানে এলে হকাররা মালামাল নিয়ে সটকে পড়েন। তবে সকাল থেকেই বৃষ্টি হওয়ায় দুপুর ২টা পর্যন্ত অভিযান শুরু হয়নি। তাই আবারো ফুটপাত ও সড়কে মালামাল নিয়ে বসে পড়েন হকাররা। হকার উচ্ছেদে নেতৃত্ব দেয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুনিরুজ্জামান জানান, বৃষ্টির কারণে অভিযানে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটছে। বৃষ্টি কমলে আমাদের অভিযান শুরু হবে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার হকারদের পুনর্বাসনে গুলিস্তান এলাকায় ১০ তলা বঙ্গবন্ধু এভিনিউ বিপণিবিতান নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মেয়র তাপস। সেদিন তিনি বলেন, ডিএসসিসি এলাকার কোনো সড়কে হকার বসতে পারবে আর কোনো সড়কে বসতে পারবে না, তা সুনির্দিষ্ট করা হবে। অতি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ‘রেড জোন’ হিসেবে বিবেচিত হবে। এগুলো লাল রঙে চিহ্নিত থাকবে। রবিবার থেকে গুলিস্তানে আর হকার বসতে দেয়া হবে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়