গাজীপুরের পানি বিষাক্ত : শিল্পায়নের মূল্য দিচ্ছে স্থানীয়রা

আগের সংবাদ

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : যথাসময়ে নির্বাচন হবে

পরের সংবাদ

ভারি বর্ষণে বিভিন্ন স্থানে ডুবছে গ্রাম-ফসল-ঘের : শ্যামনগরে বেড়িবাঁধে ভাঙন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : ভারতের দক্ষিণ মধ্যপ্রদেশ এলাকায় অবস্থানরত স্থল নি¤œচাপের কারণে বাংলাদেশে উপকূলীয় এলাকায় ভারি বর্ষণ ও দমকা হাওয়া বইছে। এতে কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। ভেসে গেছে মাছের ঘের। ডুবে গেছে ফসল। এমনকি মাছ ধরতে গিয়ে জেলে নিখোঁজের মতো ঘটনাও ঘটেছে। ইতোমধ্যে নি¤œচাপটির কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ভোরের কাগজের বিভিন্ন জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে এসব তথ্য জানা গেছে।
নোয়াখালী : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপের প্রভাবে নোয়াখালীর প্রতিটি এলাকায় গত তিন দিনের ভারি বর্ষণে জনজীবন অনেকটাই থমকে গেছে। মেঘনা নদীতে বেড়েছে জোয়ারের তীব্রতা। প্লাবিত হয়েছে হাতিয়ার কিছু নি¤œাঞ্চল। সারাদেশের সঙ্গে হাতিয়ার নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে। একই সঙ্গে মাছ ধরার ট্রলারগুলোকে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে।
বরগুনা : বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে জীবিকার তাগিদে মাছ ধরতে গিয়ে জাল টানার সময় স্রোতে ভেসে গেছেন মোশারফ হোসেন শরিফ (২৫) নামে এক জেলে। এর আগে গত রবিবার দুপুরের দিকে সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের পক্ষিদিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মোশারফ উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়নের তাফালবাড়িয়া গ্রামের শহীদ শরিফের ছেলে।
বাগেরহাট : থেমে থেমে বৃষ্টি আর নদীর জোয়ারের পানিতে বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে বাগেরহাট সদর উপজেলার তিনটি গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া জেলার মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ৩০ গ্রামের দুই হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ওইসব এলাকার পুকুর ও মাছের ঘের ভেসে গেছে। মোংলা ও রামপাল উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ তাদের বেড়িবাঁধের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে তৃতীয় দিনের মতো উচ্চ জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা ও করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রটি তলিয়ে গেছে। এছাড়া পানিতে তলিয়ে আছে জেলার অর্ধশতাধিক খেলার মাঠ।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ জানান, মোরেলগঞ্জের পৌরসভা অংশে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে উচ্চ জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে। ওই অংশে নদীতীর প্রতিরক্ষার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ চলতি অর্থবছরে শুরু করা হবে।
শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) : সুন্দরবন উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। চুনা নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ ভাঙন দেখা দেয়। গত সোমবার বিকাল সাড়ে ৫টায় হঠাৎ ২০ ফুটের মতো ভাঙন দেখা দেয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই ভাঙন বেড়ে প্রায় ৬০ ফুট হয়। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, এখনই বেড়িবাঁধ রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে যে কোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে ফসলি জমি, মাছের ঘের, কাঁকড়ার প্রকল্পসহ

মানুষ ও অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হবে।
শ্যামনগর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদুল হক বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে সরজমিনে বাঁধটি পরিদর্শন করেছি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। যেহেতু ভাঙন অল্প, তাই আবহাওয়া একটু ভালো হলেই আমরা কাজ শুরু করবো।’
চরফ্যাশন (ভোলা) : নি¤œচাপের প্রভাবে টানা তিন দিনের ভারি বর্ষণে চরফ্যাশন উপজেলার উপকূলীয় এলাকাসহ চরাঞ্চলের হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। একই সঙ্গে শতাধিক মাছের পুকুরসহ চিংড়ির ঘের ভেসে গেছে। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষিরা। মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার কুকরি-মুকরি, চর পাতিলা, ঢালচর ও চর মানিকা, রসুলপুর ইউনিয়নসহ উপকূলীয় এলাকার একাধিক নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় গত সোমবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত মাঝারি ও ভারি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে সাগর ও বিভিন্ন নদ নদীর পানি দুই থেকে তিন ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাঙন কবলিত বেড়িবাঁধ দিয়ে রামনাবাদ নদীর পানি প্রবেশ করে তলিয়ে গেছে গ্রামে পর গ্রাম। এছাড়া পূর্ণিমা ও নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ রেখে নিরাপদে অবস্থান করেছে। মূলত ওই এলাকার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ বেশি বিপদে রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়