গাজীপুরের পানি বিষাক্ত : শিল্পায়নের মূল্য দিচ্ছে স্থানীয়রা

আগের সংবাদ

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : যথাসময়ে নির্বাচন হবে

পরের সংবাদ

ফেনীতে বারি-১ জাতের মাল্টা চাষে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সৈয়দ মনির আহমদ, ফেনী : বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় ও সহজলভ্য ফল মাল্টা। প্রায় সারাবছরই বাজারে পাওয়া যায়, অনেকের প্রিয়, এই ফল শিশুরাও খেতে বেশ পছন্দ করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, মাল্টায় প্রচুর ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং চর্বিমুক্ত ক্যালরি রয়েছে। জনপ্রিয় ফল হলেও স্থানীয়ভাবে মাল্টার উৎপাদন কম। বাংলাদেশের চাহিদার অধিকাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। মাল্টার উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকারের কৃষি বিভাগ। ফেনীতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে বারি-১ সবুজ মাল্টা।
সরজমিন দেখা যায়, জেলার দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের জাঙ্গালীয়া গ্রামের চাষি শামসুল করিম ১২ শতক জমিতে বারি মাল্টা-১ সবুজ মাল্টা চাষ করেছেন। বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে মাল্টা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও পরিচর্যা করায় ফলন ভালো হচ্ছে। বাগান দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে উপজেলায় দিন দিন এর চাষাবাদে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই। দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর, সিন্দুরপুর, মাতুভূঞাসহ বিভিন্ন স্থানে সবুজ মাল্টা চাষ করা হয়েছে। লাভবান হওয়ায় মাল্টা চাষে আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাষিদের বারি-১ মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন। আগ্রহী চাষিদের বিনামূল্যে মাল্টা চারাও প্রদান করা হয়েছে। এখন জেলার প্রতিটি উপজেলায় ছোট-বড় শতাধিক মাল্টার বাগান গড়ে উঠেছে।
মাল্টা চাষি শামসুল করিম বলেন, দাগনভূঞা উপজেলা কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে এনএটিপি-২ প্রকল্পের আওতায় ২০১৮ সাল থেকে মাল্টা চাষ করছি। ১২ শতক জমিতে বারি-১ জাতের ২৬টি মাল্টা গাছ রয়েছে। প্রতি গাছে গড়ে ফলন হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০টি। প্রতিটি মাল্টা ৩শ থেকে সাড়ে তিনশ গ্রাম ওজনের। কেজি ১২০ টাকা করে বিক্রি হয়। বিক্রিও হচ্ছে ভালো।
চাষি করিম বলেন, মাঝে মাঝে মাল্টা গাছে কচি পাতায় ছোট পোকা হয়। ওই পোকা কচি পাতা খেয়ে ফেলে। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে সপ্তাহ অন্তর কীটনাশক স্প্রে করার পর এখন আর সমস্যা হচ্ছে না। উপজেলার রাজাপুরের বাসিন্দা মো. কচি সবুজ মাল্টা চাষ করেছেন। ২০১৯ সাল থেকে তিনি সবুজ মাল্টা চাষ শুরু করেন। উপজেলা কৃষি অফিস তাকে বিনামূল্যে মাল্টা চারা দেয়। এখন তার বাগানে ৫০টি গাছে (বারি-১ মাল্টা) ফল ধরেছে এবং পাকা শুরু হয়েছে। বিক্রিও হয়েছে মাল্টা। সোনাগাজীর কৃষক মোশাররফ হোসেন জানান, দীর্ঘ ২২ বছর সৌদি আরবে ছিলেন। দেশে ফিরে নিজস্ব ৬ একর জমিতে মাল্টা ফল চাষ করার উদ্যোগ নেন। ৬ একর জমির মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৪ একর জমিতে দুই হাজার বারি-১ জাতের মাল্টা গাছের চারা রোপণ করেন। বর্তমানে তার মাল্টা বাগানে ১ হাজার ৪০০ মাল্টা গাছের চারা রয়েছে। গাছের সুরক্ষায় বাগানের চারপাশে তিনি আরো ৩ শতাধিক লেবু গাছের চারা রোপণ করেছেন। ২০১৯ সালের শুরুতে তিনি সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাল্টার উন্নত (বারি-১) জাতের চারাগুলো সংগ্রহ করে বাগানে রোপণ করেন। শীতের মৌসুমে মাল্টা বাগানে গাছের সারির মাঝে মাঝে শীতকালীন শাকসবজি, ধনিয়া ও সরিষা চাষ করা হয়েছিল। খাল ও নদী বেষ্টিত আরো ২ একর জমিতে তিনি লাগিয়েছেন পাহাড়ি গাছ। মোশাররফ আরো বলেন, মাল্টা বাগানের চারা সংগ্রহ, রোপণ ও পরিচর্যা বাবদ এই পর্যন্ত তিনি প্রায় ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। ফল আসা পর্যন্ত আরো ২০ লাখ টাকা খরচ হয়। চার একর জমিতে এবার ২ হাজার কেজি মাল্টা উৎপাদন হতে পারে।
এ ব্যাপারে দাগনভূঞা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মহিউদ্দিন মজুমদার ভোরের কাগজকে বলেন, বারি-১ জাতের মাল্টা উচ্চফলনশীল একটি সুস্বাদু ফল। মাল্টা একটি বাণিজ্যিক সম্ভাবনাময়ী ফল। প্রায় প্রতিটি জেলায় এ ফলের আবাদ হচ্ছে। দাগনভূঞার মাটি ও আবহাওয়া মাল্টা চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। যদি কোনো নতুন উদ্যোক্তা বাগান করতে আগ্রহী হয়, উপজেলা কৃষি অফিস সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আকরাম উদ্দিন বলেন, দেশে মাল্টা প্রচুর চাহিদা রয়েছে। চাহিদা মেটাতে সব সময় আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। দেশের চাহিদার বিষয়টি বিবেচনা করে জেলায় ফলন বাড়ানোর চেষ্টা করছে কৃষি বিভাগ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়