গাজীপুরের পানি বিষাক্ত : শিল্পায়নের মূল্য দিচ্ছে স্থানীয়রা

আগের সংবাদ

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : যথাসময়ে নির্বাচন হবে

পরের সংবাদ

পণ্যের দাম বাড়ানোর দায় নিচ্ছে না কেউ : অতিরিক্ত মুনাফা করা প্রতিষ্ঠানগুলো গোয়েন্দা নজরদারিতে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নিত্যপণ্যের দাম কে বাড়ায়? কিভাবে বাড়ায়? এর দায় নিচ্ছে না কেউ। উৎপাদকরা বলছেন ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ায়। তাদের অনুরোধেই দাম নির্ধারণ করা হয়। আর ব্যবসায়ীরা বলছে- পণ্যের গায়ে উৎপাদকরাই দাম উল্লেখ করে দেন। এখানে ব্যবসায়ীদের হাত নেই। তাছাড়া মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব সরকারের ট্যারিফ কমিশনের। শেষ পর্যন্ত দায় নেয়নি কেউ।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সভাকক্ষে গতকাল মঙ্গলবার উৎপাদনকারী-সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও সুপারশপের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্যাকেটজাত নিত্যপণ্যের (চাল, ডাল, আটা, ময়দা, চিনি, ডাল, লবণ ইত্যাদি) মূল্যের বিষয়ে মতবিনিময় সভায় এমন তথ্য উঠে আসে। অধিদপ্তরের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় এ সময়ে মিনা বাজারের হেড অব লিগেল রাজিব আলম, সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা, স্কয়ার ফুড এন্ড বেভারেজের ইমতিয়াজ ফিরোজ, মেঘনা গ্রুপের ডেপুটি এডভাইজার মো. শফিউর রহমান, প্রাণ গ্রুপের সিনিয়র ম্যানেজার (অপারেশন) নিয়াজ মোর্শেদ, এসিআইয়ের ব্র্যান্ড ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম, ব্র্যাকের (আড়ং ন্যাচারাল) ডিজিএম মনির হোসেন, এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেডের তমাল পাল, আগোরা লিমিটেডের আবদুস সবুর খান, টিকে গ্রুপের ডিজিএম (একাউন্টস এন্ড অপারেশনস) নিজাম উদ্দিন আহমেদ, ইউনিমার্টের ফরিদ হোসেনসহ বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধি এবং সুপারশপ মালিকদের সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো প্যাকেটজাত পণ্যে বেশি লাভ করছে কিনা, এছাড়া পণ্যের দাম ঠিক করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। মিনিকেট চালের নামে ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা হচ্ছে কিনা- তাও খতিয়ে দেখা হবে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থার পুরোপুরি নজরে আছে বলে জানিয়েছে অধিদপ্তর।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, শুধু ছোট ব্যবসায়ী নয়, দেশের বড় বড় করপোরেট কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
অভিযোগ উঠেছে, উৎপাদকদের ওপর চাপ দিয়ে পণ্যের দাম বেশি লিখিয়ে নেয় সুপারশপগুলো। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এমন অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি করেছেন সুপারশপ কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে, উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তারা মূল্য নির্ধারণ করেন না, সেটি সরকারের ট্যারিফ কমিশন করে থাকে। তাই এর দায়-দায়িত্বও সরকারকে নিতে হবে।
অভিজাত বিপণিবিতান হিসেবে সুপারশপের ব্যবসায়িক পরিধি বাড়ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ- তারা উৎপাদক প্রতিষ্ঠানকে চাপ দিয়ে বাড়তি দাম লিখিয়ে নেন। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এমন অভিযোগের সুরাহা করতে এক সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো সবপক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসে সংস্থাটি। এ সময় ছোট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যেভাবে অভিযানে নামে ভোক্তা অধিদপ্তর। কিন্তু করপোরেট কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তেমন অগ্রগতি থাকে না কেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে র জবাবে ভোক্তার ডিজি বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তর শুধু ছোট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয় না, বরং তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে করপোরেট কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, তেলের বাজারে কারসাজির জন্য আমরা বড় বড় গ্রুপ কোম্পানিগুলোর কারখানায় তদারকি করেছিলাম। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে সমস্যা পাওয়ায় আমরা লিখিত আকারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিলাম। এর প্রেক্ষিতে একটি কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
এছাড়া ডিমের দামের কারসাজির সঙ্গে করপোরেট কোম্পানিগুলোর সম্পৃক্ততা থাকায় এদের বিরুদ্ধেও প্রতিযোগিতা কমিশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ভোক্তা স্বার্থে আমরা সব ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি বলেন, করপোরেট কোম্পানিগুলো গোয়েন্দা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছে।
মিনিকেট চাল নিয়ে ডিজি বলেন, দেশে মিনিকেট নামে ধানের কোনো জাত নেই। তারপরেও বাজারে মিনিট চালের প্রচলন দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছে। আমরা চাইলে অভিযান করে এই মিনিকেট নামের প্রতারণা বন্ধ করে দিতে পারি। কিন্তু মিনিকেট বন্ধ করলে আরো নাম দিয়ে তারা একই রকম প্রতারণা শুরু করবে। তাই এ বিষয়ে আমরা সবার সঙ্গে বসে একটা সিদ্ধান্ত নেব। যাতে ভোক্তার সঙ্গে মোটা চাল কেটে নতুন নাম দিয়ে প্রতারণা না করা হয়।
প্যাকেটজাত চাল নিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন জাতের চাল প্যাকেটজাত করে বাড়তি দাম নেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে সুপারশপগুলোতে এ ধরনের বেশি দামের চাল বিক্রি হয়। সেক্ষেত্রে খোলাবাজার থেকে দামের ব্যবধান কখনো কখনো ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হয়। করপোরেট কোম্পানিগুলো নাজিরশাইল, চিনি গুড়া নাম দিয়ে চাল প্যাকেটজাত করে বেশি দামে বিক্রি করছে। এতে খুচরা বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে এ প্রভাব পড়ছে।
তিনি বলেন, এক কেজি চালের সর্বোচ্চ ৫ টাকা দামের ব্যবধান হতে পারে। কিন্তু প্যাকেটজাতে অস্বাভাবিক মুনাফার কারণে দামের প্রভাব পড়ছে খোলাবাজারে। এর আগে পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, প্যাকেটজাত পণ্যের গায়ের দাম বাড়িয়ে চায় সুপারশপগুলো। সে কারণে পণ্যের গায়ে সর্বোচ্চ দাম বাড়িয়ে সরবরাহ করে কোম্পানিগুলো। ফলে দাম বাড়াতে তাদের হাত রয়েছে।
তিনি বলেন, এ ব্যবধান কমাতে কাজ করা হবে। কত দাম পর্যন্ত পণ্য বিক্রি করা যাবে সেটা নির্ধারণ করা দরকার। এছাড়া বিভিন্ন আমদানি পণ্য বাড়তি দামে বিক্রি করা হয় সুপারশপে। আমদানি পণ্যে যথাযথ তথ্য থাকে না। সেগুলো দেখা হবে এখন থেকে।
এ সময় সুপারশপ মালিকরা খোলাবাজার থেকে তাদের পণ্যের দামের ব্যবধানের কারণ হিসেবে ৫ শতাংশ বাড়তি ট্যাক্স দেয়ার কথা উল্লেখ করেন। তারা ট্যাক্স প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। পাশাপাশি তারা দাম বাড়ানোর জন্য খুচরা ব্যবসায়ীদেরও দায়ী করেন। এ সময় সুপারশপের পক্ষে চ্যালেঞ্জ করে বলা হয়, উৎপাদক প্রতিষ্ঠানকে চাপ দিয়ে বাড়তি দাম লিখিয়ে নেয়ার অভিযোগ মিথ্যা।
এদিকে, উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাফ জবাব- সরকার দাম নির্ধারণ করে দেয়, এতে তাদের কোনো হাত নেই। উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের একজন প্রতিনিধি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম উৎপাদকও নির্ধারণ করে দেয় না, আর সুপারশপও নির্ধারণ করে দেয় না। এটি মূলত ট্র্যারিফ কমিশন নির্ধারণ করে দেয়। সুতরাং, একে অপরের ওপর দোষ না চাপিয়ে, যেহেতু সরকার নির্ধারণ করে দেয় সেহেতু সরকারের হাতেই ছেড়ে দেয়া যাক বিষয়টি।
অভিযোগ তুললেও, দুইপক্ষের যুক্তিতর্কের মুখে কোনো পক্ষকে দায় দিতে পারেনি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সুপারশপের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে সংস্থাটির মহাপরিচালক বলেন, এ কঠিন সময়ে আপনারা অবশ্যই লাভ করবেন। আপনাদের স্কয়ার ফিট ভাড়া বেশি। আপনাদের অনেক কিছুই করতে হয়। আশা করি, এ কঠিন সময়ে আপনারা যৌক্তিক মুনাফা করবেন। বাজারে যেন কোনো পক্ষ অযৌক্তিকভাবে ভোক্তার কাঁধে বাড়তি ব্যয়ের বোঝা চাপাতে না পারে, তা নিশ্চিতে বাজার অভিযান আরো জোরদার করার কথা জানান তিনি। আমদানিকৃত পণ্যের ব্যাপারে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, অবশ্যই আমদানিকারকের নাম, ঠিকানা, মূল্য ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়