গাজীপুরের পানি বিষাক্ত : শিল্পায়নের মূল্য দিচ্ছে স্থানীয়রা

আগের সংবাদ

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : যথাসময়ে নির্বাচন হবে

পরের সংবাদ

জেলা পরিষদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন : জেলায় জেলায় অসন্তোষ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ নির্বাচনে এবার আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন নজরুল ইসলাম। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের সমর্থন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে বিজয়ী হন তিনি। ঐ নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য মনসুর আহমেদ। কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থী নজরুলের কাছে পরাজয় বরণ করতে হয় তাকে। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী, দলের সিদ্ধান্ত অমান্যকারী দলের গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে থাকতে পারবে না। আজীবন দলীয় মনোনয়ন বা সমর্থন পাবে না কোনো নির্বাচনেই। অথচ নজরুলের ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টোটা। তিরস্কৃত না হয়ে দল থেকে হয়েছেন পুরস্কৃত। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও নজরুল জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে ছিলেন বহাল। আর এবার তিনি সরাসরি দলের মনোনয়ন পেলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসেবে। অথচ জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি একে এম ফজলুল হকসহ শীর্ষ ৮ জন নেতা দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের কাউকেই মনোনয়ন দেয়া হয়নি।
নজরুলকে মনোনয়ন দেয়ায় অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগে। চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন তুলেছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের এমন একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল ভোরের কাগজকে জানান, আমরা শতভাগ বিশ্বাসী ছিলাম নজরুল ইসলাম এবার দলের মনোনয়ন পাবেন না। কারণ তিনি দল মনোনীত প্রার্থীকে গত নির্বাচনে হারিয়ে দিয়েছিলেন। দলকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। সেজন্য জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতিসহ আমরা প্রায় ৮ জন নেতা দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়েছি। এই ৮ জনের যে কোনো একজনকে মনোনয়ন দিলেই দলের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা সবাই তাকে বিজয়ী করতে কাজ করতাম। কিন্তু আমরা আশাহত হলাম। কারণ যিনি দলের সিদ্ধান্তই মানলেন না, তাকে আবার কেন মনোনয়ন দেয়া হলো- তা আমাদের অজানা। ওই নেতা জানান, নজরুল ইসলামকে মনোনয়ন দেয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ কিংবা দলের মেয়র, চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা কেউই সন্তুষ্ট নন। এভাবে চললে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। অন্য এক প্রার্থী জানান, অসস্তোষ থাকলেও দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েই প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কাজ করব। তবে

জেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী খলিলউল্লাহ ঝড়ু। এছাড়া আরো কেউ কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে পারেন বলে জানা গেছে।
শুধু সাতক্ষীরাই নয়, এরকম ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকটি জেলায়। ঠিক উল্টো ঘটনাও রয়েছে। তবে দলের সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হলেও, দলীয় পদ হারানোর ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না অনেক নেতাই। আবার ভোটারদের কাছে যাদের জনপ্রিয়তা রয়েছে, এরকম অনেক প্রার্থীই এবারো দলের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন বলে জানা গেছে।
বিগত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়ে আসা পিরোজপুরের মহিউদ্দিন মহারাজকে এবার মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য সালমা রহমান। তার পরিচয়- তিনি পিরোজপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেকের স্ত্রী। আর ভাসুর পিরোজপুর সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একে এম আউয়াল। আউয়াল ও তার পরিবার বিগত নির্বাচনে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের ফলে সংসদ সদস্য পদে দলের মনোনয়ন হারান। দুর্নীতি মামলায় সস্ত্রীক কারাগারেও যেতে হয়েছে তাকে।
এদিকে পিরোজপুর জেলার ৭৪৭ জন ভোটারের মধ্যে ৭০৪ জন ভোটার মনোনয়ন ঘোষণার আগেই মহিউদ্দিন মহারাজকে সমর্থন জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠিও পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি। ফলে জেলার ভোটাররাসহ স্থানীয় জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা অনেকটাই হতাশ। তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। মহিউদ্দিন মহারাজ দলের সমর্থন না পেলেও এবারো জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন। সেক্ষেত্রে তার বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন স্থানীয় ভোটার ও দলীয় নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ।
নাম প্রকাশে অচ্ছিুক পিরোজপুরের একটি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার যেটা প্রত্যাশা করেছি, তার প্রতিফলন ঘটেনি মনোনয়নে। মহিউদ্দিন মহারাজকে মনোনয়ন দিলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায় তিনি বিজয়ী হতেন। কিন্তু এখন যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, তিনি কতটুকু সফল হবেন- সেটা সময়েই বলে দেবে।
চট্টগ্রাম বিভাগে ৮টি জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে সবচেয়ে বেশি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলার নেতারা। জেলায় মনোয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ১৮ জন। এখানে সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও প্রশাসক উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সালাম এবার মনোনয়ন পাননি। এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলার সহসভাপতি এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম। যিনি বিগত সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসন থেকে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। ফলে অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে কিছুটা অসন্তোষ আছে। তবে কেউ প্রকাশে মুখ খুলছেন না। ধারণা করা হচ্ছে, আবদুস সালাম আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাটহাজারি আসন থেকে নির্বাচনে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দল তাকে মনোনয়নও দিতে পারে।
পঞ্চগড় জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান প্রশাসক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার শাদাত স¤্রাট এবার দলের সমর্থন পাননি। এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আবু তোয়বুর রহমান। ফলে স¤্রাট অনুসারীদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে।
নড়াইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয় পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস। বর্তমান জেলা পরিষদের প্রশাসক এডভোকেট সোহরাব হোসেন গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন। এবারো তিনি দলের মনোনয়ন চেয়ে পাননি। এই প্রেক্ষাপটে সুবাস চন্দ্র বোসের বিরুদ্ধে জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন বলে জানা গেছে। তাদের কেউ কেউ পুরোদমে মাঠে প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছেন।
কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান। তিনি বর্তমানে খোকসা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাক জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রবিউল ইসলাম গতবার পেলেও এবার দলের মনোনয়ন পাননি। ফলে তার অনুসারীরা অসুন্তুষ্ট।
মেহেরপুর জেলা পরিষদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি মুহাম্মদ আব্দুস সালাম। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গোলাম রসুল বিজয়ী হয়েছিলেন। এবার তিনি আবেদন করলেও দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি। ফলে তিনি এবারো বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করবেন বলে জানা গেছে।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর প্রতিনিধি সাজ্জাদ হোসেন শাহ্ জানান, দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় এবারো বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েই সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নুরুল হুদা মুকুট। বর্তমানে তিনি জেলা পরিষদ প্রশাসক ও সাবেক চেয়ারম্যান। বিগত নির্বাচনে তিনি দল মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমনকে পরাজিত করেছিলেন। এবার নির্বাচনে ইমন প্রার্থী না হলেও তার বড় ভাই এডভোকেট খায়রুল কবির রুমেন দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। রুমেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সুনামগঞ্জ জজকোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি)। মনোনয়ন না পেয়ে অসন্তুষ্ট মুকুট মাঠে কাজ করছেন। এই জেলায় আরো যারা মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য মতিউর রহমান, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট শামছুন্নাহার, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য তারিখ হাসান দাউদ।
আ.লীগের প্রার্থী এডভোকেট খায়রুল কবির রুমেন জানান, আমি দলের মনোনীত প্রার্থী। তৃণমূল আমার জন্য কাজ করছে। আশা করি বিজয়ী হবো। আর বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুল হুদা মুকুট বলেন, আমি গত নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিলাম। আমার কাজে জেলা পরিষদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। আমি মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে চাই। এবারও নির্বাচন করবো। আশা করি জনপ্রতিনিধিরা আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন।
এছাড়া অজনপ্রিয় প্রার্থীকে সমর্থন দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগে আরো বেশ কয়েকটি জেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন নিজ দলের জেলার শীর্ষ নেতাদের অনেকেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়