গাজীপুরের পানি বিষাক্ত : শিল্পায়নের মূল্য দিচ্ছে স্থানীয়রা

আগের সংবাদ

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : যথাসময়ে নির্বাচন হবে

পরের সংবাদ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : ১১ হলের সংস্কার কাজে ধীরগতি, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নুর হাছান নাঈম, জাবি প্রতিনিধি : অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রীদের এগারটি আবাসিক হলে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার এবং আধুনিকায়নের কাজ চলছে। তবে চলতি বছরের জুলাই মাসে কাজ শুরু হলেও তেমন অগ্রগতি নেই। কাজ চলছে ঢিলেঢালাভাবে। এর মধ্যে কয়েকটি হলের ওয়ার্ক অর্ডারে গত আগস্টের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা উল্লেখ থাকলেও এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ কাজও শেষ হয়নি। তাছাড়া সংস্কারে নি¤œমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার এবং তা চুরির ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো অল্প জনবল দিয়ে কাজ করানোর কারণে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি তৈরি হয়েছে বলে কয়েকজন প্রভোস্ট জানান।
সংস্কারের আওতায় হলগুলোতে শৌচাগার ও গোসলখানা আধুনিকায়ন, রঙের কাজ, জরাজীর্ণ রুম সংস্কার, স্যানিটারি এবং সুয়ারেজের পুরনো পাইপ সরিয়ে নতুন পাইপ স্থাপন, বিদ্যুতের ঝুঁকিপূর্ণ লাইন ও বক্স সংস্কার এবং সৌন্দর্যবর্ধনের কাজের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট হল অফিস সূত্রগুলো থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবাসিক হলগুলোর সংস্কার কাজের জন্য শহীদ সালাম-বরকত হলে দুই কোটি ২৭ লাখ টাকা, আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলে এক কোটি আট লাখ ৮৪ হাজার, মীর মশাররফ হোসেন হলে এক কোটি আট লাখ ৬২ হাজার, জাহানারা ইমাম হলে দুই কোটি ৪৮ লাখ টাকা, প্রীতিলতা হলে দুই কোটি দুই লাখ টাকা, নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে এক কোটি সাত লাখ ১৮ হাজার টাকা, আল বেরুনী হলে ৭৯ লাখ ২১ হাজার টাকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৪৪ লাখ ৫২ হাজার টাকা, বেগম খালেদা জিয়া হলে ৪৮ লাখ টাকা, মাওলানা ভাসানী হলে ৮৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা এবং শেখ হাসিনা হলে ৬২ লাখ ৬২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে উল্লেখিত বরাদ্দের মধ্যে শহীদ সালাম-বরকত হল থেকে এক কোটি এবং আ ফ ম কামালউদ্দিন হল থেকে ২০ লাখ টাকাসহ এক কোটি ২০ লাখ টাকা বাজেটে দুই হল সংলগ্ন জরাজীর্ণ মসজিদ ভেঙে নতুন মসজিদ নির্মাণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তবে সম্প্রতি সংস্কার কাজে ধীরগতিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। শহীদ সালাম-বরকত হলে গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে বি ব্লকের চারতলায় এক অংশের ওয়াশরুমের কাজের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে ১০ দিনের কথা বলা হয়েছে। তবে দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কাজ শেষ না করায় শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েছে। মেয়েদের হলগুলোতেও একই সমস্যা।
সাংবাদিকতা বিভাগের জাহানারা ইমাম হলের মাস্টার্সের আবাসিক ছাত্রী ওয়াহিদা মাহজাবিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বেসিনের পুরান পাইপ সরিয়ে নতুর পাইপ দেয়ার পরও প্রতিনিয়ত পানি পড়ে। প্রতিদিনই কিছু না কিছু ঠিক করার জন্য মিস্ত্রী আসে এবং খোঁড়াখুঁড়ি করে। তাছাড়া মেরামতের দোহাই দিয়ে অনেকদিন ধরে সেন্ট্রাল ওয়াশরুম ব্যবহার করতে দিচ্ছে না। যার জন্য সবাই মাত্র দুইটি ওয়াশরুম ব্যবহারের কারণে স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিয়েছে। মীর মশাররফ হোসেন হলের ওয়াশরুম সংস্কার কাজে নিয়োজিত কন্ট্রাকটর শাহাদাত হোসেন জানান, সংস্কারের পর সম্প্রতি এখানের গোসলখানার ১২টি ঝরনা চুরি হয়ে গেছে। এছাড়া নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণে কয়েকটি ওয়াশরুমে প্লাস্টিকের পানির কল ভেঙে গেছে। এরপর নতুন করে তা আবার লাগানো হয়। তবে এসব বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমাদের হলে সবচেয়ে ভালো মানের কাজ হচ্ছে এবং আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন কাজের অগ্রগতিতে আমরা অন্য যে কোনো হলের তুলনায় এগিয়ে আছি।’ তবে ওয়াশরুমের ঝরনা চুরি হওয়ার বিষয়ে খোঁজ নেবেন তিনি।
সরেজমিনে ছেলেদের হলগুলো ঘুরে দেখা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো অল্প শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোর কারণে কাজের অগ্রগতি কম। তবে কাজের অগ্রগতি ও গুণগত মান যাচাই এবং কি ধরনের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে সে বিষয়ে হলগুলোতে তদারক কমিটি থাকলেও তা চোখে পড়েনি। ওই তদারক কমিটিতে থাকা ছাত্রী হলের ওয়ার্ডেন পদের এক শিক্ষককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, হলে কি কাজ হচ্ছে সে বিষয়ে প্রভোস্ট ভালো বলতে পারবেন। আপনি প্রভোস্টের সঙ্গে কথা বলুন। শহীদ সালাম বরকত হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সুকল্যাণ কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘আমরা চার পর্যায়ে কন্ট্রাকটরকে মনিটর করার চেষ্টা করছি। তাদের কাজের ধীরগতি নিয়ে কয়েকবার বলার পরেও অগ্রগতি হচ্ছে না। এটাকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঢিলেমি বলা যায়।
সালাম বরকত হলের সংস্কার কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফরমিলা আক্তার কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপক দাইয়ান বিন শাহজাহান বলেন, ‘প্রথমে কাজ শুরু করতে গেলে অনেক কিছু অনুমোদনের বিষয় থাকে। দরজা, টাইলস ইত্যাদি আনুষঙ্গিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নিতেই আমাদের অনেক সময় লেগে গেছে। তাছাড়া এসব কাজে বিভিন্ন ফাংশন জড়িত থাকায় সময় লেগে যায়। তবে আমরা চেষ্টা করছি কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়