মাদক দিয়ে ফাঁসানো পুলিশসহ তিনজন কারাগারে

আগের সংবাদ

বাণিজ্যিক জাগরণের সম্ভাবনা > উত্তর-পূর্বের দুয়ার খুলছে : কানেক্টিভিটিতে গুরুত্ব বাংলাদেশ ও ভারতের

পরের সংবাদ

‘সংখ্যালঘু কমিশন’ কতদূর? আওয়ামী লীগের নতুন ঘোষণাপত্রে প্রতিফলিত হবে অঙ্গীকার পূরণ কতটা হলো

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সেবিকা দেবনাথ : সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনার লাগাম টানতে ‘জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন’ গঠন করাসহ বেশ কিছু দাবি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন দেশের সংখ্যালঘু নেতারা। মানবাধিকারকর্মীরাও সেসব দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। জোরাল এসব দাবির সমর্থনে গত একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারেও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনসহ প্রায় সব কটি দাবিই পূরণের অঙ্গীকার করেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে সরকারের শেষ মেয়াদে এসেও সেই প্রতিশ্রæতির কোনো বাস্তবায়ন নেই। এ প্রেক্ষাপটে প্রতিশ্রæতি পূরণে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংখ্যালঘু নেতাদের কেউ কেউ।
২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনের আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মহাসমাবেশ থেকে সব রাজনৈতিক দলের কাছে সংগঠনের পক্ষ থেকে কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়েছিল। এর মধ্যে ছিল- জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আইন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি এবং পার্বত্য ভূমি কমিশনের যথাযথ বাস্তবায়ন, সমতলের আদিবাসীদের জন্য আলাদা ভূমি কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন প্রভৃতি। সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনের দাবিটি ছাড়া অন্য দাবিগুলোকে নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করে আওয়ামী লীগ।
এর আগে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৯২ সালে একটি মাইনরিটি ডিক্লারেশন দেয়। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, দেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিধান, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন, নাগরিক অধিকার, মৌলিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে রাষ্ট্রকে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে।
সংখ্যালঘু নেতারা বলছেন, নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে সরকারের কাছে এখন সময় আছে মাত্র দেড় বছর। যে দাবিগুলো তারা বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল, এ ব্যাপারে আজো তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো উদ্যোগ নেয়নি। রাষ্ট্র কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসা রাজনৈতিক দলগুলো যদি ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের কল্যাণ, সুরক্ষা ও স্বার্থের কথা সত্যিকার অর্থেই ভেবে থাকে- তাহলে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করতে বাধা কোথায়? তাতে তো রাষ্ট্র কিংবা অন্য কারো কোনো অসুবিধা বা অন্তরায় হওয়ার কথা নয়। বরং বিশ্বে একটি নজির সৃষ্টি হতে পারে। যেসব সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটে সেসব ঘটনার দ্রুত বিচারের দৃষ্টান্ত তৈরি করা গেলে

বিশ্বের কাছে রাষ্ট্র সম্পর্কে একটা ইতিবাচক বার্তা যাবে এবং দেশে সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলো ক্রমশ কমে আসবে।

১৪ দলীয় জোটের নেতারাও বিভিন্ন সময় সংখ্যালঘু কমিশন ও সুরক্ষা আইন কারার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন। ২২ জুলাই এক অনুষ্ঠানে এই দাবি জানান জাসদ সভাপতি ও সাবেক তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা প্রমুখ।
সংখ্যালঘু কমিশন গঠনে বাধা কোথায়? এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত ভোরের কাগজকে বলেন, আন্তরিক হয়ে যারা দাবি পূরণের প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন- এখন তা বাস্তবায়নের দায়িত্বও তাদের। যদি ভাবা হয়, গাঁধাকে নাকের আগায় মূলা ঝুলিয়ে রেখে নির্বাচন পেরিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন, তাহলে ভিন্ন বিষয়। দাবি পূরণে তারা আন্তরিক এখনো সেই প্রমাণ তারা দিতে পারেনি। কমিশন গঠনে কোনো বাধাও দেখছি না।
ঐক্য পরিষদের আরেক সিনিয়র নেতা কাজল দেবনাথ বলেন, আইন ও কমিশন হলে সংখ্যালঘুরা অন্তত. অভিযোগ করার, তদন্ত দাবি করার এবং তথ্য দেয়ার একটা জায়গা পাবে। তারা বলতে পারবে। এখন সেটা পারছে না।
২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক বলেন, সংখ্যালগুদের বিষয়ে বিশেষ কমিশন গঠনের যে দাবি উঠেছে, তা আমার একার বিষয় নয়। এ নিয়ে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমি কমিশন গঠন নিয়ে আলোচনা করবো। এরপর ২০২১ সালের ২৩ অক্টোবর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, শিগগিরই সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হবে। তবে এর দুদিন পর, ২৫ অক্টোবর আইনমন্ত্রী বলেন, এ আইনের প্রয়োজন নেই। সংবিধানেই তাদের সুরক্ষার বিধান আছে। তবে সাক্ষী সুরক্ষা আইন হবে। সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের বিচার হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। এমন বক্তব্য প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নে সরকারের ‘আন্তরিকতার অভাব ও গড়িমসি’ হিসেবে দেখছে সংখ্যালঘুদের অধিকার আদায়ের সংগঠনগুলো।
এ প্রসঙ্গে এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নের কথা বলা এবং পেছনের দিকে ফিরে আসার মধ্যে তো সরকারের আন্তরিকতার অভাব দেখছি। প্রতিশ্রæতিগুলো যদি বাস্তবায়িত না হয় তাহলে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী মনে করবে তারা আবার প্রতারিত হয়ে গেছে। কিন্তু গণতন্ত্রের স্বার্থে, রাজনীতির স্বার্থে এবং রাষ্ট্রের স্বার্থে তাদের মধ্যে এই ভাবনাটা অনুপ্রবিষ্ট করা ঠিক হবে না। আওয়ামী লীগের ওপর আমরা আর আস্থা রাখতে পারছি না। কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতার ওপরও আস্থা রাখতে পারছি না। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আমরা আমাদের আস্থাটা রাখতে চাই। এই নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিই আমাদের ভরসার জায়গা।
নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নে ঐক্য পরিষদের কর্মসূচি : সংখ্যালঘু সুরক্ষায় সরকারে প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নে চলতি বছরের মার্চ মাসে আড়াই লাখ নাগরিকের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে স্বারকলিপি আকারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। ১৬ জুলাই সারাদেশে একই দাবিতে পালিত হয়েছে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ। ২২ অক্টোবর সারাদেশে একই দাবিতে সকাল সন্ধ্যা অনশন পালন করবে সংগঠনটি। এছাড়া সারাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকার অভিমুখে রোডমার্চ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জমায়েত হয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের দিকে পদযাত্রা, ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে মহাসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরপরও যদি দাবি বাস্তবায়িত না হয় সারাদেশে আমরণ অনশনের ঘোষণা করেছে ঐক্য পরিষদ।
কমিশন গঠনসহ সংখ্যালঘু সুরক্ষায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রসঙ্গে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, ডিসেম্বর মাসে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে নতুন ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্র তৈরি করা হবে। সেই ঘোষণা পত্রে নিশ্চয়ই বিষয়টি প্রতিফলিত হবে। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত বিধানে যে ব্যবস্থা নেয়া হবে, তা ঘোষণা পত্রে থাকবে। সরকারের এই মেয়াদেই তা বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা- সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নতুন ঘোষণাপত্র আসছে। আগামী নির্বাচনের আগেই তা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়