মাদক দিয়ে ফাঁসানো পুলিশসহ তিনজন কারাগারে

আগের সংবাদ

বাণিজ্যিক জাগরণের সম্ভাবনা > উত্তর-পূর্বের দুয়ার খুলছে : কানেক্টিভিটিতে গুরুত্ব বাংলাদেশ ও ভারতের

পরের সংবাদ

শেখ হাসিনার ভারত সফর ও বিএনপির পুরনো বুলি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

স¤প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন, বিসিএসআইআর ও ভারতের সিএসআইআরের সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আদান-প্রদান, ভোপালে রেলওয়ে ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশের রেল কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ সুবিধা প্রদান, জুডিশিয়াল একাডেমিতে বাংলাদেশের আইন বিভাগে কর্মীদের প্রশিক্ষণ সুবিধা প্রদান, মহাকাশ গবেষণায় সহযোগিতা, প্রচার ভারতী ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের সম্প্রচার, রেলের তথ্যপ্রযুক্তি আদান-প্রদানে সহযোগিতা সম্পর্কিত ৭টি সমঝোতা স্মারক সই হয়। দুই প্রধানমন্ত্রী রামপাল মৈত্রী বিদ্যুৎকেন্দ্র, রূপসা রেল সেতু প্রকল্প, বাংলাদেশের সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ নির্মাণ সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ, খুলনা-দর্শনা রেললাইন সংযোগ প্রকল্প, পাবর্তীপুর-কাউনিয়া মিটারগেজ রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্প ভার্চুয়াল মাধ্যমে উদ্বোধন করেন।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে যৌক্তিকভাবে কোভিড পর্বে ভারতের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে ইউক্রেনে বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা দেয়ার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকার প্রশংসা করেন। নরেন্দ্র মোদি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নে ভারত-বাংলাদেশ কদমে কদমে চলার প্রত্যয় ব্যক্ত করার পাশাপাশি একাত্তরের আদর্শে মৌলবাদী শক্তিকে যৌথভাবে মোকাবিলা করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। উল্লেখ্য, উভয় দেশ ইতোমধ্যে একাধিক মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির আঘাতের শিকার হয়েছে। এতে উভয় দেশের জনগণ বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নানাদিক থেকে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের বাইরে শেখ হাসিনা ভারতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সাক্ষাতে বাংলাদেশে জ¦ালানি, অবকাঠামো ও পরিবহন খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানালে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের ব্যপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনার ভারত সফরে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকসমূহ নিঃসন্দেহে উভয় দেশকে উপকৃত করবে। কিন্তু বাংলাদেশে বিএনপিসহ যেসব রাজনৈতিক দল সব সময় ভারতবিরোধী এবং যারা মনে করে ভারত সব সময় শুধু বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যায়, বিনিময়ে বাংলাদেশকে কিছুই দেয় না বা দিতে চায় না তারা শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফরকেও একই দৃষ্টিতে দেখছে। এমনকি শেখ হাসিনাকে বিমানবন্দরে কেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী অভ্যর্থনা জানায়নি সেটি নিয়েও সমালোচনামুখর হয়েছে। অথচ গঙ্গার পানিচুক্তি, ভারতের সহায়তায় পার্বত্য শান্তিচুক্তির ফলে ভারতে আশ্রয়গ্রহণকারী পার্বত্যাঞ্চলের বিদ্রোহীরা বাংলাদেশে ফেরত আসায় ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়া, আন্তঃদেশীয় বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বাংলাদেশের বিভিন্ন পণ্যের ওপর ট্যারিফ সুবিধা আদায়, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে অনুমোদিত ছিটমহল ইস্যু ২০১৫ সালে সমাধানের ফলে ভারতের অধীনে থাকা ১০ হাজার একর ভূমি বাংলাদেশের মানচিত্রে সংযুক্ত হওয়া, তৃতীয় দেশে বাংলাদেশের পণ্য পরিবহনে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা পাওয়ার প্রতিশ্রæতি আদায় ইত্যাদি অনেক কিছুর সমাধান হয়েছে ভারতের ধারাবাহিক সরকারসমূহের সঙ্গে শেখ হাসিনার সরকারের আমলে। অথচ বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ভারত সফরে গেলে গঙ্গার পানি নিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে কোনো আলোচনা না হওয়ায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘বিষয়টি তার স্মরণে ছিল না’!
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে পূর্বে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক হয়েছিল। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহ্রিয়ার আলম বলেছিলেন শেখ হাসিনার ভারত সফরে তিস্তা চুক্তি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার (ঞড়ঢ় চৎরড়ৎরঃু) পাবে। বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে ভারতের সব সরকার ও বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকারের আমলে উভয় দেশই প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কম-বেশি লাভবান হয়েছে। তবে বাংলাদেশের মানুষের বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের মানুষের প্রত্যাশা ছিল এবারের সফরে তিস্তা পানি বণ্টন ইস্যুর সমাধান হবে। তিস্তা অববাহিকায় প্রায় ২১ মিলিয়ন বাংলাদেশি লোকের বসবাস। তিস্তার পানির সঙ্গে এই অববাহিকার মানুষের উন্নয়নভাগ্য জড়িত। চুক্তির খসড়া প্রস্তুত থাকলেও ভারতের সাংবিধানিক ব্যবস্থা ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে এই ইস্যুটির সমাধান দীর্ঘায়িত হচ্ছে। শেখ হাসিনার তিস্তা ইস্যুর শিগগিরই সমাধানে আশাবাদী হলেও সাধারণ মানুষ ভারতের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। বিএনপি নেতারা এই ইস্যুটিকে সামনে নিয়ে এসে শেখ হাসিনার ভারত সফর ফলপ্রসূ হয়নি অথবা মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বক্তব্যের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ভারতবিরোধী করে তোলার সুযোগ নিচ্ছে।
শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারত-বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বহমান ৫৪টি নদীর সঙ্গে দুদেশের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতি জড়িয়ে থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যের মধ্যেই নিহিত রয়েছে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি বাংলাদেশের জন্য কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৩ সালের শেষভাগে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন। ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সুসম্পর্কের কারণে অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আওয়ামী লীগের জন্য একটি রাজনৈতিক দিক রয়েছে। নির্বাচনী রাজনীতিতে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমস্যাগুলো বিএনপিসহ ভারতবিরোধী রাজনৈতিক দলের কাছে ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। তিস্তার পানি বণ্টন, সীমান্ত হত্যা, বাণিজ্য ঘাটতির মতো বিষয়গুলো আগামী নির্বাচনে ভারত বিরোধিতার তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। পানি বণ্টন নিয়ে শেখ হাসিনার ভারতকে উদারতা দেখানোর আহ্বানকে বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান, সীমান্তে বাংলাদেশি মানুষ হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনাসহ বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার ব্যাপারে ভারতের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ দুদেশের অংশীদারিত্ব ও বন্ধুত্বের সম্পর্ককে আরো উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

মিলন কান্তি দত্ত : কলাম লেখক ও সমাজকর্মী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়