মাদক দিয়ে ফাঁসানো পুলিশসহ তিনজন কারাগারে

আগের সংবাদ

বাণিজ্যিক জাগরণের সম্ভাবনা > উত্তর-পূর্বের দুয়ার খুলছে : কানেক্টিভিটিতে গুরুত্ব বাংলাদেশ ও ভারতের

পরের সংবাদ

বৃষ্টি ও জোয়ারে তলিয়ে গেছে উপকূলীয় এলাকা : সাগরে যেতে পারেনি অসংখ্য ট্রলার

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপের কারণে টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে উপকূলীয় নিচু এলাকা। এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাগরে যেতে পারেনি অসংখ্য ট্রলার। গত ৩ দিন ধরে নদীতে নোঙর করে রয়েছে কয়েক হাজার মাছ ধরার ট্রলার। এসব ট্রলারে অবস্থান করছেন শত শত জেলে। সবারই মুখে দুশ্চিন্তা। আর ট্রলার মালিকরাও ঘাটে বসে রয়েছেন। এ সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-
বাগেরহাট : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপটি স্থলনি¤œচাপে পরিণত হয়ে ভারতের দক্ষিণ মধ্যপ্রদেশ এলাকায় অবস্থান করছে। এটি স্থলভাগ দিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এর প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। টানা বৃষ্টি ও পূর্ণিমার জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে দুবলার চর।
গতকাল সোমবার সকালে মোংলা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ অমরেশ চন্দ্র ঢালী জানান, মোংলা সমুদ্র বন্দরসহ সংলগ্ন সাগর ও সুন্দরবন উপকূলে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বাতাসের গতিবেগ রয়েছে ঘণ্টায় ১৫ নটিক্যাল মাইল।
তিনি আরো জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় মোংলায় ৩০ মিলিমিটার, আর সোমবার ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এমন বৈরি আবহাওয়া আজ ও কাল বিরাজ করবে। পরশুদিন থেকে আবহাওয়া স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
এদিকে পূর্ণিমার গোন ও নি¤œচাপের প্রভাবে স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ¡াসে উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। রাত থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে পৌর শহর ও উপজেলা বিভিন্ন এলাকার নি¤œাঞ্চল তলিয়ে গেছে। বৃষ্টিপাতে শহরে বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে, রাস্তাঘাটে লোকজনও নেই তেমন।
বঙ্গোপসাগরের দুবলা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দিলিপ মজুমদার বলেন, গত রবিবার তিন ফুট জলোচ্ছ¡াসে প্লাবিত হয়েছে দুবলাসহ পুরো সুন্দরবন।

অস্বাভাবিক জোয়ারে গতকাল সোমবার তলিয়ে গেছে সুন্দরবনের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র।
করমজলের ওসি আজাদ কবির বলেন, গত রবিবার তিন ফুটের বেশি পানি হয়েছিল। গতকাল পানি আরো বেড়েছে। এতে পুরো জোয়ারের সময় তিন থেকে চার ফুট পানি বেশি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন) ক্যাপ্টেন আব্দুল ওয়াদুদ তরফদার জানান, বেশি বাতাস না থাকায় বৃষ্টিতে মোংলা বন্দরে পণ্য ওঠানামা ও পরিবহনে খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে না। বৃষ্টিতে জাহাজের কাজ চলতে থাকে। কিন্ত বাতাস বেশি হলে তা ব্যাহত হয়। আর তিন নম্বর সংকেতে সাধারণত বন্দরে অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিকই থাকে।
সাগরে যেতে পারেনি অসংখ্য ট্রলার : সৈয়দল কাদের, কক্সবাজার থেকে : এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাগরে যেতে পারেনি অসংখ্য ট্রলার। গত ৩ দিন ধরে বাঁকখালী নদীতে নোঙর করে রয়েছে কয়েক হাজার মাছ ধরার ট্রলার। এসব ট্রলারে অবস্থান করছে শত শত জেলে। তবে সবারই মুখে দুশ্চিন্তা। আর ট্রলার মালিকরাও ঘাটে বসে রয়েছেন।
এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি ইয়াকুব বলেন, আগস্ট মাসে ৩টি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাগরে মাছ শিকার করতে পারিনি। চলতি মাসের শুরুতে কয়েক দিন সাগরে মাছ শিকারের পর আবারো দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় মাছ শিকার না করে উপকূলে ফিরতে হয়েছে। এখন টাকা পয়সা নেই, ট্রলার মালিকও টাকা দিচ্ছে না। খুবই বিপদে রয়েছি।
ট্রলার মালিক নাছির উদ্দিন বলেন, ৪ লাখ টাকা খরচ করে সাগরে ট্রলার পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গত ৩ দিন উপকূলে অবস্থান করছে। সাগর থেকে ফিরে আসার সময় মাত্র ১ লাখ টাকার মাছ নিয়ে আসছিল। এখন লোকসান হয়েছে ৩ লাখ টাকা। গত মাসেও লোকসান হয়েছে ১০ লাখ টাকা। এভাবে আর চলা যাচ্ছে না।
কক্সবাজার অবতরণ কেন্দ্র মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কক্সবাজার জেলার উপকূলে নোঙর করেছে সাড়ে ৫ হাজারের বেশি মাছ ধরার ট্রলার। পাশাপাশি চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলার আরো হাজার খানেক ট্রলারের অবস্থান এখন কক্সবাজারে।
জানা গেছে, এ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ৬০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে ট্রলার মালিকদের। একই সাথে দুর্দশায় পড়েছেন ট্রলারের প্রায় লক্ষাধিক জেলে। কক্সবাজারে নিবন্ধিত যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযান রয়েছে প্রায় ৬ হাজার ৮০০। আর নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার।
নি¤œচাপের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। স্বাভাবিক জোয়ারের পানির চেয়ে ২ থেকে তিন ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকার নদ নদীতে। বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছধরার ট্রলার বৈরী আবহাওয়ার পুর্বাভাস পেয়ে আলীপুর-মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন পোতাশ্রয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে বৈরী আবহাওয়ার মাঝেও পর্যটকদের কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে গোসলসহ ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। গতকাল সোমবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মুশলধারে বৃষ্টি। আকাশ মেঘে ঢেকে রয়েছে। দিনভর বৃষ্টি ও থেমে থেমে ঝড়ো হাওয়ার কারণে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাবহত হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার খাল বিল বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে। বহাল রয়েছে পায়রা বন্দরে ০৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত।
নি¤œচাপের প্রভাবে পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকার নদনদীসহ বঙ্গোপসাগর বেশ উত্তাল রয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় টানা মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। দুদফা জোয়ারের উঁচু পানিতে প্লাবিত হচ্ছে উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম। এদিকে মৎস্যবন্দর আলীপুর মহিপুরের শিববাড়িয়া নদীতে সহ¯্রাধিক মাছধরা ট্রলার নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা সব মাছধরা ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদে থাকতে মাইকিং করেছেন নিজামপুর কোস্টগার্ড সদস্যরা।
অন্যদিকে গত দুই তিন দিন ধরে বৈরী আবহাওয়ার প্রভাবে আগত পর্যটকদের বেশিরভাগই কুয়াকাটা ত্যাগ করে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে গেছে। আবাসিক ও খাবার হোটেলগুলোতেও পর্যটকদের তেমন একটা ভিড় দেখা যায়নি। তবে এখনো অনেক পর্যটককে সমুদ্র সৈকতে ঘোরাফেরা দেখা গেছে। এসব পর্যটককে সমুদ্রে না নামতে ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।
পাথরঘাটা (বরগুনা) : উত্তাল সমুদ্রে ইলিশ শিকারে যায়নি পাথরঘাটাসহ দক্ষিণ উপকূলের মাছধরা জেলেরা। জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী এখবর নিশ্চিত করে বলেন,আমাদের জেলেরা সবাই নিরাপদে আছে।
গত দুদিন ধরে উপকূল জুড়ে মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হচ্ছে। প্রায় তিন সপ্তাহের বাবধানে আবার বৈরী আবহাওয়ার সম্মুখীন হলো জেলেরা। এ অবস্থায় কাঙ্খিত ইলিশের আশায় বঙ্গোপসাগরে অবস্থান নেয়া আতঙ্কগ্রস্ত জেলেরা ইলিশ শিকার না করেই তীরে ফিরে এসেছেন বলে জানান জেলা ফিসিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দুলাল মাস্টার।
সোমবার সন্ধ্যায় পাথরঘাটা বিএফডিসি ঘাটে ফেরা এফ বি জাহাঙ্গীর ট্রলারের মাঝি কামাল জানান, লাখ টাকার বাজার সদায় নিয়ে সমুদ্রে গিয়ে তিন/চার দিনও মাছ ধরতে পারেননি তারা। নি¤œচাপ আর বৈরী আবহাওয়ার খবর জেনেও লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে রিস্ক নিয়ে সমুদ্রেই থেকে যাবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু সোমবার দুপুর থেকেই সমুদ্র তার ভয়ার্ত মূর্তি দেখাতে শুরু করে। আবহাওয়া অনুকূলে না আসা অবধি তীরেই অবস্থান করতে হবে জেলেদের।
পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে শত শত ট্রলার এসে নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান করেছে। এখনো অনেক ট্রলার আসতে পারেনি বলে জানিয়েছেন জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীরা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়