মাদক দিয়ে ফাঁসানো পুলিশসহ তিনজন কারাগারে

আগের সংবাদ

বাণিজ্যিক জাগরণের সম্ভাবনা > উত্তর-পূর্বের দুয়ার খুলছে : কানেক্টিভিটিতে গুরুত্ব বাংলাদেশ ও ভারতের

পরের সংবাদ

বজ্রপাতে মৃত্যু রোধে সচেতনতা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বর্তমানে বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু। সম্প্রতি উত্তরবঙ্গের সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার মাটিকোড়া গ্রামে একসঙ্গে বজ্রপাতে ৯ জন মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর পূর্বেও বজ্রপাতে ১৬ জন মানুষের মৃত্যুর খবর শুনতে হয়েছিল। প্রশ্ন হচ্ছে, বজ্রপাতে অকাল মৃত্যুর শেষ কোথায়? বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে বজ্রপাত থেকে বাঁচতে উপায় আছে কিনা তা খুঁজে বের করতে হবে। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, সারা বিশ্বে বছরে ২৪ হাজার মানুষের বজ্রপাতে মৃত্যু হয়। তার মধ্যে বাংলাদেশ ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে প্রতি বছর আমাদের দেশে গড়ে ২৬৫ জনের মৃত্যু হয় বজ্রপাতে। গত বছর মারা গেছে ৩৬৩ জন। আর চলতি বছরের জুন মাসে মারা গেছে ৩১ জন। একজন মানুষ যদি ১০০ ভোল্টের বিদ্যুতের সংস্পর্শে আসে তাহলে মানুষটির মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেকাংশেই বেশি থাকে। আর অন্যদিকে প্রকৃতিতে যখন বজ্রপাত হয় তখন ৬০০ মেগা ভোল্ট বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। ফলে ওই বজ্রপাত যখন মানুষের দেহে কিংবা পাশে পড়ে তখন সম্পূর্ণ এলাকা বিদ্যুৎতড়িত হয়ে যায়। যার কারণে মানুষটি দ্রুত মারা যায়।
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা, খরা, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি, নদীভাঙন, ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি, বজ্রপাত ইত্যাদির প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমাদের দেশে বেশিরভাগ ফসলি জমিতে বড় কোনো গাছ থাকে না। বজ্রপাতের ধর্ম হচ্ছে, মাটিতে আঘাত হানার পূর্বেই সবচেয়ে উঁচু যে জায়গাটি পায় সেখানে গিয়ে পড়ে। বজ্রপাতের সময় কৃষকের শরীরই মাটির চেয়ে উঁচু থাকে তখন গায়ে পড়ে মৃত্যু ঘটে। প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে গণসচেতনতার অভাবে চরম মূল্য দিতে হয়। সেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে মানুষকে সচেতন করার কার্যক্রম কতটুকু? আবহাওয়া অধিদপ্তরের কয়েক বছরের বজ্রপাতের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে ঢাকা, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর অঞ্চল এবং পশ্চিমাঞ্চলে বৃহত্তর যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা রাজশাহী অঞ্চলের সিরাজগঞ্জে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেছে। বজ্রপাতের হটস্পটগুলো চিহ্নিত করে বজ্রনিরোধক ব্যবস্থার আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। বজ্রপাত প্রতিরোধক দণ্ড স্থাপন না করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর সারাদেশে প্রায় ১৩ লাখ তালগাছ রোপণ করেছিল। বেশিরভাগ গাছ রাস্তার দুপাশে রোপণ করা হয়েছিল। যদিও বজ্রপাত থেকে রক্ষার জন্য তালগাছ লাগানোর কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। কতগুলো গাছ বেঁচে আছে সেটার সঠিক তথ্য জানা নেই। তাই জনস্বার্থে দ্রুত বর্ধনশীল গাছ লাগাতে হবে।
বজ্রপাত একটি আকস্মিক ঘটনা, যা প্রতিরোধ করা অত্যন্ত কঠিন। তবে সময় ও এলাকাকে বিবেচনায় নিয়ে বজ্রপাত ব্যবস্থাপনায় বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে। সচেতনতাই পারে জীবন রক্ষা করতে। ফলে বজ্রঝড়ের সময় খালি জায়গায় যদি উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, ধাতব পদার্থ বা মোবাইল টাওয়ার থাকে, তার কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। অতি জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে রাবারের জুতা পরে বাইরে যেতে হবে। এ সময় ধানক্ষেত বা খোলা মাঠে থাকলে নিচু হয়ে বসে পড়তে হবে। বজ্রপাতের আশঙ্কা দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব ভবন বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। সরকারিভাবে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বজ্রনিরোধক স্থাপনের ঘোষণা দিতে হবে। বিশেষ করে মাঠে, হাওর, বাঁওড়ে বা ফাঁকা কৃষি কাজের এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করে তার ওপরে বজ্রনিরোধক স্থাপন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত প্রচার-প্রচারণা চালনার মাধ্যমে জনসাধারণকে সচেতন করতে হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পাঠ্যবইয়ে পঠিত বিষয় হিসেবে সংযুক্ত করে শিক্ষার্থীদের বজ্রপাত সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। বজ্রপাত প্রতিরোধের নিয়মগুলো সবাইকেই মেনে চলতে হবে। তাহলে অনেকাংশে কমে আসবে বজ্রপাতে মৃত্যু।

রাশেদুজ্জামান রাশেদ
লেখক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়