মাদক দিয়ে ফাঁসানো পুলিশসহ তিনজন কারাগারে

আগের সংবাদ

বাণিজ্যিক জাগরণের সম্ভাবনা > উত্তর-পূর্বের দুয়ার খুলছে : কানেক্টিভিটিতে গুরুত্ব বাংলাদেশ ও ভারতের

পরের সংবাদ

তিস্তা-মেঘনার ভাঙনে দিশাহারা উলিপুর ও গজারিয়ার মানুষ : স্থাপনাসহ শত শত ঘরবাড়ি বিলীন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খরস্রোতা তিস্তার ভয়াবহ ভাঙনে প্রায় দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে কুড়িগ্রামের পশ্চিম বজরা ও কালপানি বজরা এলাকায়। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে কয়েকশো একর ফসলি জমি, কমিউনিটি ক্লিনিক, স্কুল, মাদ্রাসা ও মক্তবসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এদিকে মেঘনা নদীর অব্যাহত ভাঙনে পাল্টে যাচ্ছে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের কালীপুরা গ্রামের মানচিত্র। ভিটেমাটি, সহায় সম্বল হারিয়ে দিশাহারা নদীতীরবর্তী পরিবারগুলো। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছেন নদীপাড়ের মানুষগুলো।
তৈয়বুর রহমান, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কুড়িগ্রামের পশ্চিম বজরা ও কালপানি বজরা এলাকায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খরস্রোতা তিস্তার ভয়াবহ ভাঙনে প্রায় দুই শতাধিক বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। মানচিত্র থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে কয়েকশো একর ফসলি জমি ও এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিক, স্কুল, মাদ্রাসা, মক্তবসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এলাকাটির ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর সহস্রাধিক মানুষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এদিকে ভাঙন ঠেকাতে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি পদক্ষেপ নিলেও অপরিকল্পিতভাবে বালুভর্তি জিওটেক্সটাইল ব্যাগ নিক্ষেপ করায় একদিকে ভাঙন বন্ধ হলে অন্যদিকে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়। এভাবে নতুন নতুন বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। গত শনিবার পশ্চিম বজরার ভাঙন কবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে,পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়োজিত ঠিকাদারের লোকজন জিওটেক্সটাইল ব্যাগে বালুভর্তি করে ভাঙন কবলিত এলাকায় নিক্ষেপ করছে। স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে বলেন, জরুরি ভিত্তিতে হওয়া চলমান কাজের সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়ার্ক এসিস্টেন্ট কিংবা প্রকৌশলীরা সার্বক্ষণিক সেখানে না থাকায় ঠিকাদারের লেবার অপরিকল্পিতভাবে বস্তা নিক্ষেপ করছে। ফলে পশ্চিম বজরার দক্ষিণ দিকে নতুন নতুন এলাকায় ভাঙন লক্ষ্য করা গেছে। এ অবস্থায় তিস্তা নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোর মানুষের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ভাঙনের শিকার অনেকগুলো পরিবার তাদের শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। নিজস্ব ভিটেমাটি হারানো এসব মানুষ স্থায়ীভাবে কোথায় বসতি গড়ে তুলবে তা নিয়ে এখন চরম অনিশ্চয়তায় তাদের দিন কাটছে ।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের তিস্তা তীরবর্তী পশ্চিম বজরা ও কালপানি বজরা এলাকায় ২ সপ্তাহ আগে খরস্রোতা তিস্তার ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে অনেকেই তাদের বাড়ি ঘর সরিয়ে নেয়ার সময় পায়নি। তাদের চোখের সামনে কমিউনিটি ক্লিনিক, ব্রাক স্কুলসহ ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এখন এসব গ্রামের মানুষের মধ্যে শুধু হাহাকার । তিস্তা নদীর পানি স্থির অবস্থায় বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী পাড়ের হামিদুল ইসলাম জানান,পানি যত কমছে ততই নদীর মাঝ বরাবর বড় বড় চর জেগে উঠছে। ফলে নদীর তীব্র স্রোত কিনার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে আর নতুন নতুন এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এমন কথাই শোনালেন আম্বার আলী, জহরা বেগম, আহাদ আলী, নুরবানুসহ নদী ভাঙন কবলিত অনেকে।
ভাঙনের শিকার একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, জরুরি কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার কত বস্তা জিওটেক্সটাইল ব্যাগ নিয়ে আসলেন, কি পরিমান ব্যাগ নদীতে ফেলা হলো তা সাধারণ মানুষের জানার কোনো উপায় নেই। তাদের মতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা বিজলি বাতির মত এই আসলেন, এই গেলেন। ফলে জরুরি মেরামত কাজে বরাদ্দের প্রকৃত চিত্র থেকে এলাকার মানুষ অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছেন। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষজন তিস্তার ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, গজারিয়া (মুন্সীগঞ্জ) থেকে জানান, মেঘনা নদীর অব্যাহত ভাঙনে পাল্টে যাচ্ছে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের কালীপুরা গ্রামের মানচিত্র। ভিটেমাটি, সহায় সম্বল হারিয়ে দিশাহারা নদীতীরবর্তী পরিবারগুলো। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছেন নদীপাড়ের মানুষগুলো। এ মুহুর্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে কালীপুরা গ্রাম।

নিঃশ্ব হবে এলাকার মানুষ।
গত রবিবার বিকালে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের কালীপুরা গ্রামের নারী পুরুষ ও শিশুরা নদীপাড়ে বসে অশ্রæ চোখে শুধু ভাঙনের দৃশ্য দেখছে। হুমকির সম্মুখীন কালীপুরা গ্রামের প্রায় ৫০টি পরিবার অন্য স্থানে যাওয়ার জন্য দিনভর ব্যস্ত সময় পার করছে বাড়ি ঘর, আসবাবপত্র, গাছপালাসহ সম্ভাব্য জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে।
ভাঙনকবলিত কালীপুরা গ্রামের সুরুজ মিয়া বলেন, নির্বাচনের আগে নানা প্রতিশ্রæতি দিলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কেউ এখন খোঁজ রাখেন না অসহায় এ মানুষগুলোর। ভাঙনের কবল থেকে রক্ষায় কার্যকরী কোনো ভূমিকা রাখেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড।
কালীপুরা গ্রামের আব্দুল গাফফার সরকার ও রাজা মিয়া বলেন, নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। বন্যার পানি কমার সাথে সাথে ভাঙনের তীব্রতা বাড়তে থাকে। ভাঙন আতঙ্কে রাতে দুচোখে ঘুম আসে না। শুধু একটাই চিন্তা, কখন যে ঘরসহ বসতভিটা নদীতে তলিয়ে যায়। অবশেষে হলো তাই। মেঘনায় বিলীন হলো মাথাগোঁজার ঠাঁইটুকুও। আমাদের মতো আরো অনেকে ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পার করছেন।
একই গ্রামের ফজিলাতুন্নেছা বলেন, মেঘনার ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে অন্যের জমিতে আত্মীয়ের বাড়িতে ছাপড়া তুলে মানবেতর জীবনযাপন করছি। এখন কী করব, কোথায় যাব ভেবে দুচোখে অন্ধকার দেখছি। একই এলাকার আবুল খায়ের বলেন, মেঘনার ভাঙনে সর্বস্ব হারিয়ে আজ আমরা নিঃস্ব-অসহায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কেউ আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। আমরা আপনাদের মাধ্যমে সরকারের কাছে সাহায্য সহযোগিতা কামনা করছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জসিম উদ্দিন জানান, জিওব্যাগ ফেলে কালীপুরা এলাকায় নদীভাঙন রোধ জরুরি হয়ে পড়েছে। তা না হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে কালীপুরা গ্রামের একটি জামে মসজিদসহ অর্ধশত ঘরবাড়ি নিয়ে কালীপুরা গ্রামটি মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।
ইমামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফিজুজ্জামান খাঁন জিতু জানান, কালীপুরা গ্রামে নদীভাঙনের কবলে পড়ে বেশকিছু পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ভাঙনকবলিতদের তালিকা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়