মাদক দিয়ে ফাঁসানো পুলিশসহ তিনজন কারাগারে

আগের সংবাদ

বাণিজ্যিক জাগরণের সম্ভাবনা > উত্তর-পূর্বের দুয়ার খুলছে : কানেক্টিভিটিতে গুরুত্ব বাংলাদেশ ও ভারতের

পরের সংবাদ

চোর সন্দেহে মারধরে মানসিক ভারসাম্যহীন রইছ উদ্দিন : পুলিশের প্রতিবেদনে সঠিক তথ্য না আসার অভিযোগ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জামালপুর প্রতিনিধি : পাতলা একটি গামছা পড়া ৩৫ বছর বয়সি রইছ উদ্দিন। দিনে তার জায়গা খোলা আকাশের নিচে। আর রাতে থাকেন আস্তাবলে। যে আস্তাবলে কয়েক মাস আগেও ছিল তার প্রিয় ঘোড়াটি।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে এখন সেই ঘোড়ার বদলে সেখানে স্থান হয়েছে রইছ উদ্দিনের। রাতের অন্ধকারে ছোট্ট একটি ঘটনা ওলটপালট করে দিয়েছে রইছ উদ্দিনের জীবনটাকে।
২০২১ সালের ৭ জুলাই। নিজ বাড়ি মেলান্দহের চংদরিয়া থেকে শ্বশুরবাড়ি চিনিতোলা যাবার পথে বয়ড়া ডাংগা এলাকায় রাত ১০টার দিকে চোর সন্দেহে রইছ উদ্দিনকে ব্যাপক মারধর করে স্থানীয় তপু সরকার, রনি সরকার, মুনছর সরকার ও হাসেম সরকারসহ বেশ কয়েকজন। এতে রইছ উদ্দিন গুরুত্বর আহত হলে পরদিন সকালে রিকশাযোগে বাড়ির সামনে ফেলে যাওয়া হয়। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দুই সন্তানের জনক রইছ উদ্দিন।
কখনো দিনমজুরি আবার কখনো মাছ শিকার করে সংসার চালাতেন রইছ উদ্দিন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির এমন করুন দশা হওয়ায় বিপাকে রয়েছে গোটা পরিবারটি। এখন নারী ছেড়া ধনকে নিয়ে দুখের সাগরে ভাসছেন জনম দুঃখী মা।
রইছ উদ্দিনের পিতা জয়নাল সেখ জানান, মারধরের ঘটনায় তারা আদালতে মামলা করেছিলেন। প্রথমে মেলান্দহ থানা পুলিশ পরে পিবিআই তদন্ত করে। কিন্তু তাদের প্রতিবেদনে সব তথ্য উঠে আসেনি বলে অভিযোগ করেন জয়নাল। তিনি বলেন, যারা মারধর করেছে তারা অনেক প্রভাবশালী লোক।
রইছ উদ্দিনের মা রহিমা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার পুলাডার দিক তাকায়ে আমার নাতিনেরা কান্দাকাটি করে। আঙ্গর জীবনডা শেষ। আমরা এর কোনো বিচার পাইতাছি না। আমরা এর বিচার চাই।
রইছ উদ্দিনের ফুপু রহিমা খাতুন জানান, যে ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে রইছ জীবিকা নির্বাহ করতেন, সেই ঘোড়া বিক্রি করে কয়দিন চিকিৎসা চালিয়েছেন। এখন তাদের আর কিছুই নেই। তাই রইছের চিকিৎসাও হচ্ছে না, মামলাও চালাতে পারছেননা।
গ্রামবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, হামলাকারীরা মারধরের কথা স্বীকার করলেও প্রভাব খাটিয়ে চিকিৎসক ও পিবিআইয়ের প্রতিবেদন পরিবর্তন করায় সুবিচার পাচ্ছে না হতদরিদ্র রইছ উদ্দিনের পরিবার। তাই এই ঘটনার সুবিচার ও রইছ উদ্দিনের পরিবারকে সহায়তার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।
চংদরিয়া এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য বেলাল উদ্দিন বলেন, তপু সরকার, রনি সরকার, মুনছর সরকার ও হাসেম সরকার রইছ উদ্দিনকে মারধরের পরের দিন আবার তাকে দেখতে আসে। তখন তারা ফল আর নগদ কিছু টাকা দিয়ে গিয়েছল। এরপর মামলা হওয়ার পর তারা আপস করার অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু আমরা আপস হয়নি। এর পর তারা টাকা পয়সা দিয়ে হাসপাতালের রিপোর্ট, পুলিশ আর পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন পাল্টে ফেলে।
মামলার আসামী হাসেম সরকার বলেন, সেই দিন রাতে কিছু পোলাপান চোর সন্দেহে রইছ উদ্দিনকে দুয়েকটা চর থাপ্পর দিয়েছ। তাকে জোরালো কোনো আঘাত করা হয়নি। পুলিশ আর পিবিআইয়ের তদন্তে এসব উঠে এসেছে।
আরেক আসামী মুনছর সরকার বলেন, একটি পক্ষ আমাদেরকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য্য এসব কর্মকান্ড করছে। আমাদের পোলাপান মারছে। আমরা বাধা দিয়েছি। এমন কোনো মার দেয়া হয়নি, যার কারনে রইছ উদ্দিন পাগল হবে।
এসব বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার এম এম সালাহ উদ্দিন বলেন, সবকিছু যাচাই বাছাইয়ের পর বিবাদীর বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন। আর মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট না হলে আদালতে নারাজি দিতে পারেন মামলার বাদী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়