মাদক দিয়ে ফাঁসানো পুলিশসহ তিনজন কারাগারে

আগের সংবাদ

বাণিজ্যিক জাগরণের সম্ভাবনা > উত্তর-পূর্বের দুয়ার খুলছে : কানেক্টিভিটিতে গুরুত্ব বাংলাদেশ ও ভারতের

পরের সংবাদ

ক্ষোভ থেকেই খুন হন এমপি লিটন : ভারতে পালিয়ে গিয়ে চন্দন হয়ে যান শাওন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, রাজনৈতিক বিরোধ, আধিপত্য বিস্তার এবং পুনরায় ক্ষমতা পাওয়ার লোভ থেকেই মূলত এমপি লিটনকে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল কাদের খান। ২০১৬ সালের প্রথম দিকে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে গ্রেপ্তারকৃত চন্দন কুমার রায়কে জানান তিনি। পরে ওই দুজনই ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মাধ্যমে ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে তার নিজ বাড়িতে গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সবাই গ্রেপ্তার হলেও চন্দন পাশের দেশ ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে গিয়ে নিজের পরিচয় পাল্টে আধার কার্ডে হয়ে যান শাওন রায়।
বহুল আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের প্রধান সমন্বয়কারী ও ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারিকৃত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি চন্দন কুমার রায়কে ৬ বছর পর সাতক্ষীরার ভোমরা এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় র‌্যাব মুখপাত্র মঈন বলেন, আবদুল কাদের খান ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুন্দরগঞ্জ এলাকায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন।

সংসদ সদস্য থাকাকালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার দুর্নীতির বিষয়ে মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন অভিযোগ উত্থাপন করে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-১ আসন থেকে নিহত মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন তৎকালীন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
জানা যায়, গ্রেপ্তার চন্দন কুমার রায় সুন্দরগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহ-দপ্তরবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময় এমপি লিটনের সমর্থিত লোকজনের সঙ্গে মারামারির ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হন। চন্দনের ভাষ্যমতে, এমপি লিটনের প্ররোচণায় একই সময়ে একটি মামলার আসামি দেখিয়ে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার করিয়ে ১৯ দিন কারাভোগ করানো হয়। মুক্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে থাকা চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতনসহ অন্যান্য মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে তিনি এমপি লিটনের সহযোগিতাও চান; তবে আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে বলায় তাকে এমপি লিটনের প্রতি ক্ষুব্ধ হন তিনি। পরবর্তীতে বিভিন্ন বিষয়ে দুর্নীতি, চাঁদাবাজির অভিযোগে ২০১৬ সালের প্রথম দিকে তাকে দলীয় পদ থেকেও বহিষ্কার করেন এমপি লিটন। পরবর্তীতে আবদুল কাদের খানের পিএস ও এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সহযোগী শামসুজ্জোহার সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে আবদুল কাদের খানের সঙ্গে তার সখ্য তৈরি হয়। আর দুজনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকেই তারা এমপিকে খুনের পরিকল্পনা করেন।
তিনি আরো বলেন, ভগ্নিপতি সুবল রায় এমপি লিটনের বাড়ির দারোয়ান হিসেবে কাজ করার সুবাদে তার আসা-যাওয়ার তথ্য জানা সহজ ছিল চন্দনের জন্য। তাই সংসদ সদস্যকে হত্যা ঘটনায় চন্দন প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে ভূমিকা পালন করে। এমপি লিটনের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে আবদুল কাদের খান ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যান্য সহযোগিদের তথ্য দেন চন্দন। সহযোগী মেহেদী, শাহীন, রানা, শামসুজ্জোহা ও চালক হান্নান গ্রেপ্তার হলেও পালাতে সক্ষম হন চন্দন রায়। কমান্ডার মঈন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি ২০১০ সালের দিকে রাজধানীর একটি অনলাইন পোর্টালে ২ বছর সাংবাদিকতা করলেও গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জ থানা এলাকায় ফিরে স্থানীয় রাজনীতিতে অংশ নেয়া শুরু করেন। পরে নানা অপরাধে জড়িয়ে এমপিকেও খুন করে পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যান। সেখানে গিয়ে নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে শাওন রায় নামে আধার-রেশন কার্ড করে সেখানেই থেকে যান। তবে পলাতক স্থান থেকে রংপুর ও গাইবান্ধা সীমান্ত কাছাকাছি হওয়ায় সেখান দিয়ে গাঁজা ও ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকের চালান বাংলাদেশে পাঠাতেন তিনি। মাদকের অর্থ সংগ্রহ, মাদকের ব্যবসা তদারকি ও মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার জন্য তিনি বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে আবার পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যেতেন। দেশে প্রবেশের গোপন সংবাদ পাওয়ার পরই তাকে গ্রেপ্তারে সমর্থ হই আমরা। গ্রেপ্তারকৃতের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়