মাদক দিয়ে ফাঁসানো পুলিশসহ তিনজন কারাগারে

আগের সংবাদ

বাণিজ্যিক জাগরণের সম্ভাবনা > উত্তর-পূর্বের দুয়ার খুলছে : কানেক্টিভিটিতে গুরুত্ব বাংলাদেশ ও ভারতের

পরের সংবাদ

‘ইন্টারপা’ সম্মেলন উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : বহুজাতিক অপরাধ মোকাবিলায় সহযোগিতা সুসংহত করতে হবে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নতুন প্রযুক্তির সুযোগ নিয়ে সাইবার অপরাধ এবং সংঘবদ্ধ বহুজাতিক অপরাধের কারণে সৃষ্ট মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড রোধে বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা সুসংহত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ ও অর্থপাচারের পাশাপাশি সহিংস চরমপন্থা এবং প্রযুক্তিনির্ভর অন্য অপরাধ দমনে পুলিশের ডিজিটালাইজেশন একটি চমৎকার উপায় হতে পারে। বর্তমানে এসব অপরাধের কারণে বিশ্বজুড়ে পুলিশের দায়িত্ব পালনে তীব্র চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। আজকের বিশ্বে একা কোনো দেশের পক্ষে এসব মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তাই, এসব সমস্যা মোকাবিলায় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা সুসংহত করতে হবে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও

হোটেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিন দিনব্যাপী ‘১১তম ইন্টারপা সম্মেলন’ উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। মূল অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিশেষ অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, ইন্টারপার প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ইলমাজ কোলাক এবং পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ও অধিবেশনের সভাপতি ড. বেনজির আহমদ প্রমুখ। ‘ডিজিটালাইজেশন ইন পুলিশিং’ স্লোগান প্রতিপাদ্যে শুরু হওয়া এই সম্মেলনে ৪৫টি দেশের ১২৭ জন প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন।
বিভিন্ন দেশের পুলিশের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বাড়ানো, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই ইন্টারপা সম্মেলন। ৫৯টি দেশের ৭৬টি পুলিশ প্রশিক্ষণ একাডেমি বা প্রতিষ্ঠান ইন্টারপার সদস্য। এর সদর দপ্তর তুরস্কে। ইন্টারপা প্রতি বছর বিভিন্ন দেশে সম্মেলন করে। ১০ম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০২১ সালে তুরস্কে। আর এ বছর বাংলাদেশ স্টাফ কলেজের ব্যবস্থাপনায় ১১তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশে।
পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, এই সম্মেলন পুলিশের কর্মদক্ষতা বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। উদ্বোধনী দিনে সম্মেলনে দুটি পেপার উপস্থাপন করা হয়। আজ মঙ্গলবার কনফারেন্সে অংশ নেয়া বিভিন্ন দেশের পুলিশ একাডেমির প্রধানরা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থলে যাবেন। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন তারা। ১৪ সেপ্টেম্বর কনফারেন্সের শেষ দিন প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ পুলিশের প্রধান ড. বেনজীর আহমেদ। সেদিন কয়েকটি পেপার উপস্থাপন করা হবে। যেখানে বিভিন্ন দেশের পুলিশের প্রশিক্ষণ একাডেমির বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে বিভিন্ন দেশের পুলিশিং কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সহিংস চরমপন্থা এবং প্রযুক্তিভিত্তিক বহুজাতিক অপরাধ দমনে চাহিদা ও ফলাফলভিত্তিক প্লাটফর্ম প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেতে পারে। আমরা বিশ্বাস করি, ইন্টারপা সদস্যদের সম্মিলিত ইচ্ছা ও যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিশ্বের নিরাপত্তার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে।
তিনি বলেন, বিশ্বায়নের এই যুগে সহিংস চরমপন্থা এবং আন্তঃসংগঠিত অপরাধ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য এক বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেখানে সীমানা সামান্যই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসীদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের ফলে সারাবিশ্বে এর সুদূরপ্রসারী অস্থিতিশীল প্রভাব পড়ছে। নতুন চ্যালেঞ্জসমূহ সাইবার অপরাধ, মুদ্রা পাচার, মুদ্রা জাল, সন্ত্রাসী অর্থায়ন এবং অন্য আধুনিক হুমকিরূপে আবির্ভূত হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, মহাদেশজুড়ে সদস্য পুলিশ প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের পেশাদারদের সমন্বয়ে গঠিত ইন্টারপার এই অনন্য সম্মেলন অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা বাড়ানো এবং সর্বোত্তম অনুশীলনগুলো ভাগ করে নেয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতার নতুন পথ খুলে দেবে। এই সম্মেলনের আয়োজক হতে পেরে আমরা সৌভাগ্যবান এবং আপনাদের উপস্থিতিতে সত্যিই সম্মানিত বোধ করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থা সফলভাবে মোকাবিলায় তাদের সক্ষমতা ও সহিষ্ণুতা প্রমাণ করেছে। সব সামাজিক সূচকে আমরা কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জন করেছি। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সার্বিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে এবং জনগণের জীবনমান উন্নয়নে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়েছে। এর ফলে অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, বাণিজ্য ও ব্যবসা, সামাজিক নিরাপত্তাসহ অন্য ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। আমরা এসডিজির সফল বাস্তবায়নের দিকে দারুণভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীও ক্রমবর্ধমান তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা পাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষ, সেবামুখী এবং আইসিটিবান্ধব সেবার মাধ্যমে প্রান্তিক জনগণসহ সবার কাছে তথ্যপ্রযুক্তি সহজলভ্য করে দেশকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ রূপান্তরের জন্য সবধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছি। আমরা গর্ব করে বলতে চাই, বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে যুক্ত হয়েছে এবং এই অসাধারণ উচ্চতা প্রতিটি ক্ষেত্রে তার দেশের অব্যাহত সাফল্যের সাক্ষ্য দেয়। আমাদের অগ্রগতি ও উন্নয়নের এ ধারায় বাংলাদেশ পুলিশও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আমাদের সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে পুলিশের মধ্যেও উল্লেখযোগ্য গুণগত পরিবর্তন এসেছে। আমরা আগামী দিনেও পুলিশের এই অগ্রগতির ধারা এগিয়ে নিয়ে যাব।
সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, সম্মেলনটি ইন্টারপার সব সদস্য দেশকে একটি উদ্ভাবনী, টেকসই, দ্রুত ও কার্যকর যোগাযোগ এবং সহযাগিতার ধরন অন্বেষণে একটি সাধারণ ঐক্যমতে পৌঁছানোর সুযোগ করে করে দেবে। এসব দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে উন্নত প্রযুক্তি, দক্ষতা, গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি এবং সমন্বয় বিশ্বজুড়ে সহিংস চরমপন্থা এবং উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক বহুজাতিক অপরাধ দমনে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
অনেক অভিন্নতা আমাদের আরো কাছাকাছি নিয়ে এসেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বশান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নকে এগিয়ে নেয়ার জন্য বর্ধিত সহযোগিতার পক্ষে অবশ্যই একটি সমন্বয় তৈরি করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়