খন্দকার মোশাররফ : বিএনপিকে নির্যাতন করে দমিয়ে রাখা যাবে না

আগের সংবাদ

দুই সংকটে তৈরি পোশাক খাত : সংকট কাটলে ৮ বছরে পোশাক খাতে রপ্তানি আয় ১০০ বিলিয়ন ডলারের আশা

পরের সংবাদ

পত্রমিতালি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বর্ষা শেষ হয়েও শেষ হচ্ছে না। থেমে থেমে বৃষ্টির ঝরে পড়া থাকছেই। ছাতা হাতে সজল বের হলো ডাকঘরের উদ্দেশে। আজও সে ডাক আসার আগেই পৌঁছাবে ডাকঘরে। তারপর ডাক বয়ে নিয়ে ডাকপিয়ন এলে জানালার শিক ধরে দাঁড়িয়ে চটের ব্যাগ থেকে ঢেলে দেয়া চিঠিগুলো দেখবে। ভাঁজ করার সময় প্রতিটি চিঠির দিকেই খেয়াল করবে সে- তার চিঠি এলো কি না।
এ মাসের শুরুতে আরো দু’জন পত্রবন্ধু বেড়েছে তার। একজনকে অবশ্য নিজেই পাঠিয়েছিল- বন্ধুত্বের আহ্বান জানিয়ে সুন্দর হাতের লেখা চিঠিটি। সময়মতো উত্তরও পেয়েছে, বাড়িয়েছে বন্ধুত্বের হাত। প্রতিউত্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে, ফিরতি চিঠি পাওয়ার অপেক্ষায় আছে সজল। নতুন দুই বন্ধুসহ মোট আটজন পত্রমিতালি বন্ধু তার।
দেশের বিভিন্ন জেলার বন্ধু আছে সজলের। তার মধ্যে কয়েকজন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখিও করে। খুদে লেখক মশিউর রহমান মামুন থাকে খাগড়াছড়ি শহরে। পড়ালেখার পাশাপাশি লেখালেখিও করে বেশ। শিশু-কিশোর পত্রিকা টইটম্বুরের মাধ্যমে পরিচয় হয় সজলের সঙ্গে। তার চিঠিগুলোও থাকে সাহিত্যের মনোমুগ্ধকর ভাষায় লেখা।
প্রমা সুইনি নামের আরেক মেয়েবান্ধবী আছে সজলের। থাকে যশোরের মনিরামপুরে। অবশ্য সুইনি প্রথম চিঠি দেয় সজলকে। পত্রমিতালি ম্যাগাজিনে ঠিকানা ছাপা হয়েছিল সজলের। সেখান থেকে ঠিকানা নিয়েই সুইনি চিঠি পাঠায় সজলকে। সেই দুই বছর আগের কথা, এখনো বন্ধুত্ব আছে তাদের, এখনো চিঠি দেয়া নেয়া আছে দু’জনার মধ্যে।
সজলের বন্ধু তালিকায় আছে খুদে তারকাও, যে কি না একাধারে লেখিকা, উপস্থাপিকা, চিত্রশিল্পীও। তাসলিমা রহমান মিশু নামের এই মেয়েবন্ধুর সঙ্গেও পরিচয় সেই টইটম্বুর পত্রিকার মাধ্যমেই। মিশু এবার ঈদের শুভেচ্ছাস্বরূপ ঈদ কার্ড পাঠায় সজলকে। চমকে যাওয়ার মতো বিষয় হচ্ছে ঈদ কার্ডটি তারই আঁকা ছবি দিয়ে তৈরি, আজাদ প্রোডাক্ট থেকে বের হয়েছে এটি। ঈদকার্ড পেয়ে যারপরনাই খুশি হলো সজল। এমন সম্মানী বন্ধু পেয়ে সত্যিই গর্ববোধ করে সে। মেয়েবন্ধুর তালিকায় আছে এফরানা আইরিনও, সে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী থেকে লিখত সজলকে। এখন অবশ্য তার সঙ্গে আর যোগাযোগ নেই। সামাজিক বাধার কারণেই চিঠি দেয়া নেয়া বন্ধ হয়ে যায় তাদের।
আরেক বন্ধুর কথা না বললেই নয়, সাদাত জামান চৌধুরী নির্ঝর। বেশ সুন্দর হাতের লেখা তার। থাকে ঢাকায়।
সজলের অপেক্ষার পালা শেষ হলো। ডাকপিয়ন এলো উপজেলা সদর থেকে, খালি হাতে। আজ ডাক আসেনি। হরতালের জন্য ডাকের গাড়ি আসেনি বলে খালি হাতে ফিরতে হলো তাকে। গোমড়ামুখে সজল বাড়ির দিকে রওয়ানা হয়।
গল্পটি ১৯৯৬ সালের। এখন ২০২২। ধুলোবালি জমে থাকা পুরনো একটি চিঠি খুঁজে পায় সজল। মনের ক্যানভাসে ভেসে ওঠে পুরনো দিনের স্মৃতিগুলো। আহা কত মজারই না দিন ছিল সেসব। চিঠির জন্য অপেক্ষা, চিঠি হাতে পেলে উল্লাসে ফেটে পড়া, নতুন চিঠি লিখতে বসা, সহপাঠীদের সঙ্গে পত্রমিতালি বন্ধুদের গল্প বলা।
আজ আর চিঠি আসে না কারো। সবার হাতে এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন, ই-মেইল, ফেসবুক আরো কত কী! তবুও কাছের মানুষদের সঙ্গে কথা হয় না বছরকে বছর। আবেগ অনুভূতি ঠাঁই নিয়েছে জাদুঘরে।
পত্রমিতালি বন্ধুরা কোথায় আছে, কেমন আছে জানে না সজল। শুধু জানে দু’জনের খবর। তাসলিমা রহমান মিশুর সঙ্গে যদিও দেখা হয়নি কোনোদিন, তবুও সজল তাকে দেখেছে চ্যানেল আইতে খবর পাঠিকা হিসেবে। মিশু রহমান নামে এখন সে বেশ পরিচিতি পেয়েছে মিডিয়া পাড়ায়, অখ্যাত গ্রামের ছেলে সজলের কথা সে ভুলে গেছে অনেক আগেই। আরেকজন মশিউর রহমান মামুন। তার সঙ্গে ফেসবুকে কথা হয়েছে, বর্তমানে চট্টগ্রাম শহরে সপরিবারে থাকে সে। যদিও দেখা হয়নি। তবে শিগগিরই দেখা করার ইচ্ছে আছে সজলের।
পুরনো চিঠি হাতে নিয়ে আবেগী হয়ে ওঠে সজল, ভাবে- সেই দিন ফিরবে না আর। চিঠিও লেখা হবে না কাউকে। তবুও পত্রমিতালির সেইসব বন্ধুদের স্মৃতি আজীবন গেঁথে থাকবে সজলের মনে।
:: আবুতোরাব, মিরসরাই, চট্টগ্রাম

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়