খন্দকার মোশাররফ : বিএনপিকে নির্যাতন করে দমিয়ে রাখা যাবে না

আগের সংবাদ

দুই সংকটে তৈরি পোশাক খাত : সংকট কাটলে ৮ বছরে পোশাক খাতে রপ্তানি আয় ১০০ বিলিয়ন ডলারের আশা

পরের সংবাদ

তীর্থস্থানে পিকনিকের নামে বারবিকিউ! : চন্দ্রনাথ পাহাড়ে অনুমতি ছাড়াই চলছে র‌্যাপেলিং, দুর্ঘটনার শঙ্কা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান তীর্থভূমি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ ধাম পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলছে র‌্যাপেলিং (দড়িতে ঝুলে পাহাড়ে উঠা)। স্থানীয় প্রশাসন ও মন্দির কমিটির কোনো ধরনের অনুমতি না নিয়ে ফেসবুকভিত্তিক কয়েকটি ট্যুরিস্ট গ্রুপ এই পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ এই ধরনের এডভেঞ্চার শুরু করেছে। এতে যে কোনো সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এছাড়া তীর্থস্থানে পিকনিকের নামে তাঁবু খাটিয়ে রাত্রিযাপন, মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করে বারবিকিউ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌরসদরে অবস্থিত চন্দ্রনাথ ধাম পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে ঘিরে এখন ভ্রমণপিপাসু মানুষের আনাগোনা ক্রমশ বাড়ছে। এই পাহাড়ের আঁকা-বাঁকা মেঠো পথ, প্রাকৃতিক ঝর্ণার রূপবৈচিত্র্য এখানে আসা তীর্থযাত্রী ও পর্যটকদের মুগ্ধ করে। প্রতিদিন এখানে তীর্থ দর্শনার্থীদের পাশাপাশি জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে অসংখ্য পর্যটকের আগমন ঘটে। এদিকে পর্যটকদের এই আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে সম্প্রতি ফেসবুকভিত্তিক কিছু ট্যুরিস্ট গ্রুপ এখানে নানারকম ঝুঁকিপূর্ণ কর্মকাণ্ড শুরু করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
চন্দ্রনাথ ধামে শম্ভুনাথ মন্দিরের পরে একটি সু-উচ্চ খাড়া পাহাড় রয়েছে। বিরুপাক্ষ মন্দিরের আনুমানিক ৩০০ ফুট উঁচু খাড়া এ পাহাড়টির একদিকে তেমন কোনো গাছপালা নেই। সোজা উপরে চলে যাওয়া এই পাহাড়ের দুইপাশে রয়েছে গভীর খাদ। খাদটি হারিয়ে গেছে ঘন বনের অন্ধকারে। এই খাড়া-উঁচু পাহাড়টিতে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে দড়ি বেঁধে ঝুলে ঝুলে উঠছে কিছু অতি কৌতূহলী তরুণ। কোনরকম নিরাপত্তার সু-ব্যবস্থা ছাড়াই অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে কয়েকজনকে দড়িতে ঝুলতে ঝুলতে এই উঁচু পাহাড়ে উঠতে দেখা গেছে। নানা এডভেঞ্চারের গল্প শুনিয়ে তারা আরো তীর্থ যাত্রী ও অন্য পর্যটকদের এভাবে দড়িতে ঝুলে পাহাড়ে উঠতে উৎসাহ যোগাচ্ছে। সম্প্রতি বেশ কিছু আইডি থেকে এ ধরনের প্রচারণার লেখা ও ছবি দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও সচেতন বিভিন্ন মহল। তারা সেখানে যে কোনো সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথের বীরুপাক্ষ মন্দিরে বহিরাগতদের অনৈতিক ও ধর্মীয় উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধে গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় সীতাকুণ্ড মন্দির কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ‘সকল স্তরের সনাতনী সম্প্রদায়’ নামে একটি সংগঠন। অভিযোগপত্রে তারা বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্যাকেজ ঘোষণা করে মন্দিরের পাহাড়ে তারা তাবু দিয়ে রাত্রিযাপন করছে এবং সেখানে মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করে বারবিকিউ করছে। সেইসঙ্গে তারা বীরুপাক্ষ মন্দিরের পাহাড়ের ৩০০ ফুট উঁচু থেকে দড়ি বেয়ে নিচে নামছে। ড্রোন দিয়ে পুরো পাহাড় নজরদারি করছে। এটা আমাদের মন্দিরের জন্য হুমকি বলে মনে করছি আমরা। এসব কর্মকাণ্ড বন্ধে তারা সনাতনী স¤প্রদায়ের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন।
জানা গেছে, ট্রাভেলার্স অব বাংলাদেশ নামের একটি আইডিতে দড়িতে ঝুলে পাহাড়ে উঠার কিছু ছবি পোস্ট করেন মোহাম্মদ হাসান ফরহাদ নামে এক তরুণ। একই গ্রুপে শিহাব উদ্দিন নামে একজন ছবি পোস্ট করে লেখেন- লোকেশন : বীরুপাক্ষ মন্দির, চন্দ্রনাথ ধাম পাহাড়। বেঙ্গল ট্রেকার্স নামক একটি গ্রুপে মুহেমেনুল ইসলাম একই ধরনের ট্যুরের কথা লেখেন। জনপ্রতি ফি উল্লেখ করা হয় ৫৫০০ টাকা। এভাবে নানা এডভেঞ্চারের গল্প শুনিয়ে ভ্রমণপিপাসু তরুণদের টানছে বিভিন্ন ট্রাভেল গ্রুপ। যার কোনো অনুমোদন প্রশাসনের নেই।
এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ ধাম মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পলাশ চৌধুরী বলেন, এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং তীর্থস্থানের নিরাপত্তার জন্যও হুমকিস্বরূপ। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায় কে নেবে? এখনই এসব বন্ধ করা উচিত।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, এখানে কারা কিভাবে এসব করেছে- আমি জানি না। তবে কয়েকদিন আগে একটি গ্রুপ এখানে দড়িতে ঝুলে পাহাড়ে উঠার জন্য আমার কাছে লিখিত আবেদন করে। এখনো তাদের অনুমতি দেয়া হয়নি। তীর্থস্থানে এ ধরনের কর্মকাণ্ড করা যাবে কিনা, তীর্থ কমিটির মতামত কী, যারা করছে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কী ইত্যাদি বিবেচনা করে পরে অনুমতি দেয়া যাবে কিনা চিন্তা করব আমরা।
সীতাকুণ্ড মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট চন্দন দাশ ভোরের কাগজকে বলেন, এই ধরনের কোনো গ্রুপ ¯্রাইন কমিটির কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেয়নি। লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমরা বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়