খন্দকার মোশাররফ : বিএনপিকে নির্যাতন করে দমিয়ে রাখা যাবে না

আগের সংবাদ

দুই সংকটে তৈরি পোশাক খাত : সংকট কাটলে ৮ বছরে পোশাক খাতে রপ্তানি আয় ১০০ বিলিয়ন ডলারের আশা

পরের সংবাদ

জয়পুরহাটে হিমাগারের আলু নিয়ে বড় লোকসানের শঙ্কা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কবির হোসেন, জয়পুরহাট থেকে : জয়পুরহাটে খুচরা বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আলু। কিন্তু হিমাগারে আলুর কাক্সিক্ষত বিক্রি ও দাম না থাকায় সংরক্ষিত আলু নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন হিমাগারে আলু সংরক্ষণকারী, কৃষক ও হিমাগার মালিকরা।
উত্তরবঙ্গের শস্যভাণ্ডার খ্যাত জয়পুরহাট জেলা আলু উৎপাদনে দেশের শীর্ষে। সীমান্তঘেঁষা এই জেলায় ধানের পরেই সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় আলু। মৌসুমে চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি আলু রাখা হয় হিমাগারে। কিন্তু এক শ্রেণির সুবিধাবাদী মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীর কারণে খুচরা বাজারে আলুর চড়া দাম থাকলেও হিমাগারের পাইকারি বাজারে উপযুক্ত দাম ও কাক্সিক্ষত বিক্রি নেই। ফলে মোটা টাকার লোকসান গুনছেন কৃষক, সংরক্ষণকারী ও হিমাগার মালিকরা।
জয়পুরহাটের বিভিন্ন হিমাগার ও বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রকারভেদে প্রতিকেজি আলুর পাইকারি মূল্য ১৮-১৯ টাকা হলেও খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে। স্থানীয় খুচরা বাজারে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৩০-৪০ টাকা।
জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছর আলুর ভালো দাম পেয়ে এ বছর জেলার অধিকাংশ কৃষক আলু চাষে ঝুঁকে পড়েন। চাষিদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আলু চাষ করেন। আবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলায় আলুর বম্পার ফলনও হয়। এতে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আলুর ফলন ও হিমাগারে সংরক্ষণ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে আলু সংরক্ষণে হিমাগার রয়েছে ২০টি। মৌসুমের শুরুতে এসব হিমাগারে আলু সংরক্ষণ হয়েছে (৬৫ কেজি ওজনে) প্রায় ২৫ লাখ বস্তা।
এ ব্যাপারে জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার মোল্লা কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ভোরের কাগজকে জানান, জেলায় লক্ষাধিক কৃষক ও প্রায় ১০ হাজার ব্যবসায়ী মিলে জেলার বিভিন্ন হিমাগারে বিপুল পরিমাণ আলু সংরক্ষণ করেছেন। কিন্তু মৌসুম প্রায় শেষ হতে চললেও আলু বিক্রি হয়েছে মোট সংরক্ষণের মাত্র ২৫ শতাংশ। তিনি জানান, আলুর দাম পড়ে যাওয়ার ফলে প্রতি বস্তা আলুতে কৃষক বা সংরক্ষণকারী ২৫০-৩০০ টাকা লোকসান গুনবেন। শুধু তাই নয়, মৌসুমের শুরুতে সংরক্ষণকারীদের আলু সংগ্রহের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা ধার দিয়েছেন অনেক হিমাগার মালিক। কাক্সিক্ষত দামে ও পরিমাণে আলু বিক্রি না হওয়ায় সেই টাকা ও আলু সংরক্ষণের ভাড়া আদায় নিয়ে শঙ্কিত হিমাগার মালিকরা। সংরক্ষিত এসব আলু উত্তোলনের মেয়াদ শেষ হবে আগামী নভেম্বরে।
ক্ষেতলালের আলু সংরক্ষণকারী দেলোয়ার হোসেন জানান, দেশের মানুষের অন্যতম প্রধান সবজি আলু। তবে সংরক্ষণ ও বিপণনে সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর কোনো উদ্যোগ নেই।
তিনি বলেন, গত বছর আলু সংরক্ষণ করে কিছু লাভ হয়েছিল। তখন আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণে সংবাদ মাধ্যম ও প্রশাসনের তৎপরতা ছিল। এ বছর আলুর বাজার মন্দা থাকায় ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়লেও কারো মধ্যে সে তৎপড়তা চোখে পড়ছে না। এটা কৃষি ও কৃষকের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ। প্রায় ১০ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ করে ৩-৪ লাখ টাকা ক্ষতির শঙ্কায় আছেন তিনি।
কালাই পৌর এলাকার কৃষক রমিজ উদ্দিন বলেন, এ বছর আলু মৌসুমে আলু চাষের সময় সার ও বীজ সংকটের কারণে আলু চাষে খরচ বেড়ে যায়। আলু চাষের সময় গৃহীত ঋণই এখনো শোধ করতে পারিনি। উপরন্তু আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগারের ভাড়া পরিশোধ করতে আরো ঋণগ্রস্ত হতে হবে। জানি না এ ঋণ শোধ হবে কীভাবে। তিনি আরো বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে সব জিনিসের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও আলুর দাম কমছে। কৃষি ও কৃষককে রক্ষা করতে হলে সরকারকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।
ক্ষেতলাল উপজেলার আলু ব্যবসায়ী আবুল হাসনাত জানান, তিনি ঢাকায় আলু পাঠান। ঢাকার পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি আলুর পাইকারি মূল্য এস্টারিক বা স্টিক ১৯ টাকা, দেশি পাকরী ২২ টাকা, কার্ডিনাল ১৮-১৯ টাকা, ডায়মন্ড ১৮ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে পরিবহন খরচ মিটিয়ে বস্তাপ্রতি কখনো ৪০-৫০ টাকা লাভ হচ্ছে আবার কখনো ৫০-১০০ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বলেন, জয়পুরহাটে উৎপাদিত আলু উন্নতমানের। সরকারি উদ্যোগে এ আলু রপ্তানি করা সম্ভব হলে জেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবেন।
ক্ষেতলাল উপজেলার মামুদপুরের আলু সংরক্ষণকারী চপল তালুকদার জানান, তিনি মৌসুমের শুরুতে প্রতি বস্তা ৬৫ কেজি ওজনের এস্টারিক বা স্টিক (লাল) ১ হাজার ৩০০ টাকায়, ডায়মন্ড (সাদা) জাতের আলু ১ হাজার ১৫০, দেশি পাকরি (লাল) জাতের আলু ১ হাজার ৩৫০ এবং রোমানা (পাকরি) জাতের আলু ১ হাজার ২০০ টাকায় ক্রয় করেন। এখন প্রতি বস্তা ৬৫ কেজি ওজনের এস্টারিক (লাল) জাতের ১ হাজার ৫০ টাকায়, ডায়মন্ড (সাদা) জাতের আলু ১ হাজার ২০, দেশি পাকরি (লাল) জাতের আলু ১ হাজার ২৫০ এবং রোমানা (পাকরি) জাতের আলু ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি করতে পারছেন। প্রতি বস্তা আলুতে ঘাটতি হয় প্রায় ৫ কেজি। এতে করে তার প্রতি বস্তা আলুতে লোকসান গুনতে হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। তবুও যদি আলু বিক্রি হয় ভালো। না হলে অনেক লোকসান হবে।
এ ব্যাপারে জেলা বিপণন কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, আলুর দরপতন নিয়ে এবার সবাই চিন্তিত। যেসব কোম্পানি আলু বিদেশে রপ্তানি করে তাদের সঙ্গে আমরা দফায় দফায় আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আলু প্রক্রিয়াকরণ ও বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে আলুর দরপতন ঠেকানো সম্ভব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়