একদিনে ২৭৮ করোনা রোগী শনাক্ত

আগের সংবাদ

দেশীয় কয়লা উত্তোলনে গুরুত্ব : বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নীতি ও পরিবেশ, বিশ্বে কয়লার ব্যবহার বেড়েছে

পরের সংবাদ

রানির যা জানি বা জানি না

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

যত দিন শাসনক্ষমতায় ছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে দেখা গেছে স্বাতন্ত্র রাজকীয় পোশাকে। ৯৬ বছরের দীর্ঘ জীবনে খুব আস্থাভাজন করেছিলেন তিনজন ফ্যাশন ডিজাইনারকে। গত কয়েক দশক ধরেই সেই ডিজাইনার ও সহযোগীদের সহায়তায় ফ্যাশনে নিজস্ব এক স্টাইল গড়ে তুলেছিলেন সদ্য প্রয়াত রানি। উজ্জ্বল রঙিন পোশাক, সঙ্গে মেলানো থাকতো টুপি ও হাত মোজা, দুল বা নেকলেস। সতন্ত্র এই বাহ্যিক লুকের সূচনা হয়েছিল নরম্যান হার্টনেলের হাত দিয়ে। ১৯৪৭ সালে প্রিন্স ফিলিপের সঙ্গে রানির বিয়ের পোশাকটি বানিয়েও ছিলেন এই ডিজাইনার। বার্তা সংস্থা এএফপি, ফ্যাশন ম্যাগাজিন ভোগ, বিবিসি, এলে ও ওয়াশিংটন পোস্ট অবলম্বনে থাকছে রানির রাজকীয় পোশাক, ফ্যাশন ও বর্ণিল লাইফস্টাইলের বিস্তারিত। – আশরাফুল ইসলাম রানা

রানির তিন ফ্যাশন ডিজাইনার

আদতে দেখতে খুব সতন্ত্র ফ্যাশন নিয়ে ধারনা দিলেও রাজপরিবারের
ড্রেস কোড মেনেই রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের পোশাক ডিজাইন করতে হতো। নরম্যান হার্টনেল শুধু বিয়ের পোশাকটিই নয় ১৯৫৩ সালে রানি হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার সময় যে পোশাক পরেছিলেন, সেটিও তৈরি করেছিলেন। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সেই পাশাকটিতে ছিল সোনালি, রুপালি, সবুজ ও গোলাপি রঙের এমব্রয়ডারির কাজ। যেসব দেশ তার শাসনাধীন ছিল, সব কটির প্রতীক ছিল তখনকার সে রাজকীয় পোশাকে। ১৯৫৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সরকারিভাবে রানির পোশাক বানিয়েছেন ডিজাইনার হার্ডি অ্যামিস। শুরুতে রানির বিদেশভ্রমণকালীন পোশাকগুলো তৈরি করতেন। পরে হার্টনেলের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। তবে, তখনকার ২৫ বছর বয়সী ভবিষ্যৎ রানির জন্য ইতিপূর্বে ১৯৫০ সালে প্রথম পোশাক বানানোর সুযোগ পান এই ডিজাইনার । পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে রানির পোশাক প্রস্তুতকারক দলে যোগ দেন অ্যাঙ্গেলা কেলি। রানির ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজন হবার কারণে এরপর ২০০২ সালে রানির ব্যক্তিগত সহকারী ও সিনিয়র পোশাক ডিজাইনার হিসেবে নিযুক্ত হন। করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালে লকডাউন চলার সময় রানির চুল কাটা ও হেয়ার
স্টাইলেরও দায়িত্বে ছিলেন এ নারী ডিজাইনার।

একই হ্যান্ডব্যাগে ৫০ বছর

বিলাসবহুল যাপিত জীবনে অভ্যস্ত বিট্রিশ রাজপরিবারের সবাই
প্রকাশ্যে একই পোশাক কিংবা ফ্যাশন অনুসঙ্গ বারবার খুব কমই ব্যবহার করতেন । তবে, ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ লুনার ব্র্যান্ডের একটি হ্যান্ডব্যাগ ব্যবহার করছেন প্রায় ৫০ বছর ধরে। বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজকর্ম, রাষ্ট্রীয় সফর এবং অনেক উল্লেখযোগ্য স্থানে তাকে ব্যাগটি ব্যবহার করতে দেখা যায়। জানা গেছে, ১৯৬৮ সালে রানী এলিজাবেথ লুনার ব্রান্ডকে রয়েল ওয়ারেন্ট প্রদান করেন। এরপর তারা নিজেদের ব্রান্ডের চিহ্নযুক্ত একটি হ্যান্ডব্যাগ তৈরি করে দেয় রানীর জন্য। ১৯৭০ সালে রানি যখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তখন তার হাতে ছিল প্রিয় এই হ্যান্ডব্যাগটি। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও তার স্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ২০০০ সালে যখন তার আতিথেয়তা গ্রহণ করেন তখনও রানির হাতে ওই ব্যাগটি দেখা গেছে। ২০০৩ সালে চেটেনহ্যাম গোল্ড কাপ, রয়েল হর্স আর্টিলারি প্যারেড অনুষ্ঠানেও তিনি ব্যাগটি ব্যবহার করেছেন।

আজব হলেও গুজব নয়

১. রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ক্ষেত্রে কোনো ডিনার বা পার্টিতে খাওয়ার সময় কথা বলা নিষেধ। যদি তিনি কথা বলতে চান, তাহলে তার ডান পাশের অতিথি কারও সঙ্গে কথা বলা শুরু করতে হবে।

২. হাতমোজা ছাড়া রানি কোথাও যেতে পারেন না। মূলত জীবাণু থেকে সুরক্ষার জন্যই রাজপরিবারের এই নিয়ম।

৩. আন লাকি থার্টিন নিয়ে খুব ভাবতো রাজ পরিবার। তাই রানির পক্ষ থেকে কোনো পার্টি রাখা হলে সেখানে কখনো ১৩ জন অতিথি থাকতে পারবেন না। ১৩ জনের কম অথবা বেশি হলে সমস্যা নেই।

৪. রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ কখনো অটোগ্রাফ দিতে পারতেন না। শুধু তিনি নন, রাজপরিবারের কারও ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য নয়।

৫. কোনো রাজনৈতিক দলকে সাপোর্ট করার কিংবা ভোট দেওয়ার অনুমতি ছিল না রানির। তাই কখনো রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রকাশ করতে দেখা যেতো না তাকে।

৬. প্যালেসের ভেতরে কিংবা ক্যামেরার বাইরে একসঙ্গে থাকলেও জনসম্মুখে ও ক্যামেরার সামনে স্বামীর সঙ্গে রানি এলিজাবেথের হাঁটা নিষেধ। তখন অবশ্যই স্বামীর থেকে দুই কদম আগে চলতে হতো এই সদ্য প্রয়াত রানিকে।

শখ ও সম্পত্তি

রানির ব্যক্তিগত সম্পত্তির আনুমানিক মূল্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার। বিনিয়োগ, শিল্প সংগ্রহ, গয়না ও রিয়েল এস্টেট থেকে এ বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করেছেন দ্বিতীয় এলিজাবেথ। মায়ের কাছ থেকে ৭০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পারিবারিক সম্পত্তিও পেয়েছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে দামি পেইন্টিং, গয়না, স্ট্যাম্প সংগ্রহ, ঘোড়া ইত্যাদি। ব্যক্তিগত শখ হিসেবে রানি কুকুর পুষতে পছন্দ করতেন। মৃত্যুর আগে পর্যন্তÍ তিনি ৩০টি কুকুর পুষেছেন। তার আদরের প্রথম পোষা কুকুরের নাম সুসান।

পোশাক ও ফ্যাশন অনুসঙ্গের নেপথ্যে

রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখলেও রানি এলিজাবেথ তার পোশাকের মধ্য দিয়ে বার্তাও দিতেন। কোনো দেশের রাষ্ট্রীয় সফরে যাওয়ার সময় সে দেশের প্রতি সম্মান জানাতে সেখানকার জাতীয় প্রতীকসংবলিত তৈরি ব্রুচ পরতেন তিনি। সব সময় টাইটস পরতেন, যা ছিল শরীরের ত্বকের রঙে। তার নখে লাগানো হতো হালকা গোলাপি রঙের নেইল পলিশ। গয়নার ক্ষেত্রে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ব্রুচ (সেফটি পিনজাতীয় অলংকার) বা মুক্তার নেকলেস পরতেন। পছন্দের তালিকায় ছিল হীরার মুকুট আর ছোট্ট কানের দুল।
সন্ধ্যায় আরাম করার জন্য রানি যে গাউন পরতেন, সেগুলোয় থাকা পুঁতি ও অন্য কারুকাজের খোঁচা থেকে তার পিঠকে সুরক্ষিত রাখতে অতিরিক্ত ইনার আস্তরণ ব্যবহার হতো। দিনের পোশাক যেন বাতাসে বেশি উড়ে ওপরে উঠে না যায়, তা নিশ্চিত করতে নিচের দিকে একটু ভারী কাজ করা হতো। রানি উজ্জ্বল রঙের টুপি পরতেন। ফলে ভিড়ের মধ্যেও তাকে চিনে নেওয়া যেত। সপ্তাহান্তে দ্বিতীয় এলিজাবেথ তার স্টাইলে পরিবর্তন আনতেন। এমন দিনে প্রায়ই তার মাথায় দেখা যেত স্কার্ফ ও পায়ে বুট।

বিশ্বের প্রবীণতম শাসকের জন্মদিন দুটি

বিশ্ব ইতিহাসে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শাসনকালই দীর্ঘতম। ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে ৮৮ বছর বয়সী থাইল্যান্ডের রাজা ভুমিবল আদুল্যদুর মৃত্যুর পর বর্তমানে তিনি বিশ্বের প্রবীণতম শাসকও বটে। উইনস্টন চার্চিল থেকে শুরু করে তেরেসা মে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজত্বকালে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে পা রেখেছেন মোট ১৫ জন প্রধানমন্ত্রী। তবে,বরাবরের মতই রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ দুটি জন্মদিন উদযাপন করেন। তার প্রকৃত জন্মদিন হলো ২১ এপ্রিল এবং অফিসিয়াল জন্মদিন জুন মাসের দ্বিতীয় শনিবার।

ফ্যাশন ম্যাগাজিন প্রচ্ছদেও তিনি

প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ম্যাগাজিন ‘ভোগ’ তাদের প্রচ্ছদ সাজিয়েছিলেন ব্রিটিশ রানি এলিজাবেথকে নিয়ে। এবছর ম্যাগাজিনটির এপ্রিল সংখ্যার কাভারে ছাপানো হয়েছে ব্রিটিশ রানীর তরুণ বয়সের একটি ছবি। সাদাকালো ছবিটি তোলেন প্রখ্যাত আলোকচিত্রশিল্পী অ্যান্টনি আর্মস্ট্রং জোন্স। ভোগ কর্তৃপক্ষ জানায়, রানী এলিজাবেথের ব্রিটিশ রাজপরিবারে ক্ষমতায় আরোহণের ৭০ বছর উপলক্ষে সম্মাননা জানাতেই এই আয়োজন।

৯৬ বছরেও বদলায়নি খাবার তালিকা

৯৬ বছর বয়সে মারা গেলেন রানি এলিজাবেথ। তবে তিনি এ বয়সেও এত ফিট ছিলেন কীভাবে সেই রহস্য ফাঁস করেছেন ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রাক্তন রাঁধুনি ড্যারেন ম্যাকগ্রেভি। তিনি জানিয়েছেন, ছোট থেকে যে ধরনের খাবার খেতেন রানি, এই বয়সে এসেও তা বদলায়নি। ম্যাকগ্রেভি জানাচ্ছেন, রোজ সকালে রানি প্রথমে চিনি ছাড়া এক কাপ আর্ল গ্রে চা খান। সঙ্গে থাকে ভিন্ন স্বাদের কুকিজ। খানিক বেলা বাড়তেই বিশেষ ধরনের কর্নফ্লেক্স এবং টোস্ট দিয়ে খাবার সারেন রানি। ফল খেতে ভালবাসেন। বিশেষ করে বেরি জাতীয় ফল তার পছন্দের। সকালের খাবারে কখনও কখনও তা-ও থাকে।
মধ্যাহ্নভোজে থাকে প্রোটিন-যুক্ত খাবার। কার্বোহাইড্রেট আছে এমন খাবার রানিকে দেওয়া হয় না। পালং শাক দিয়ে স্যামন মাছের একটি পদ রানির প্রিয়। এ ছাড়া, গ্রিলড চিকেন এবং স্যালাডও খান। বিকেলের দিকে এক কাপ চা খান রানি এলিজাবেথ। কোনও দিন সঙ্গে থাকে শশার স্যান্ডউইচ, স্ট্রবেরি জ্যাম। রাতে সাধারণত শর্করামুক্ত খাবার খেতেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। নৈশভোজে অধিকাংশ দিন থাকতো গ্রিলড ফিস এবং সালাদ। মূলত: এই বয়সেও সুস্থ-সবল থাকার রহস্য লুকিয়ে আছে রানির এই রোজের খাদ্যাভ্যাসেই। উল্লেখ্য, রাজপরিবারের সদস্য হলেও তারা চাইলেই পছন্দমত যেকোনো খাবার খেতে পারেন না রানি এলিজাবেথসহ রাজপরিবারের সদস্যদের জন্য চিংড়ি, আদা, পেঁয়াজ, ট্যাপের পানি খাওয়া নিষেধ ছিল।

শেষ একক ছবি

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ৯৬ বছর বয়সে স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে গত ৮ সেপ্টেম্বর মারা যান। তবে মৃত্যুর ৪৮ ঘন্টা আগে ওই প্রাসাদে তোলা একটি ছবিকে প্রকাশ্যে আসা রানির শেষ একক ছবি বলা হচ্ছে। ইনডিপেনডেন্ট ও এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, রানির মৃত্যুর দুই দিন আগে ৬ সেপ্টেম্বর ছবিটি তোলা হয়। পিএ মিডিয়ার আলোকচিত্রী জেন বারলো ছবিটি তোলেন। লিজ ট্রাসকে যুক্তরাজ্যের ১৫তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগ দেওয়ার সময় ছবিটি তোলা হয়। ছবিতে ব্রিটিশ সিংহাসনে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় থাকা রানিকে হাসতে দেখা যায়। তিনি লাঠিতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়