কোহলির সেঞ্চুরি : আফগানদের ওপর ঝাল মিটাল ভারত

আগের সংবাদ

ভারতের সাত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ঢাকায় আমন্ত্রণ : উত্তর-পূর্বের সঙ্গে সংযোগে গুরুত্ব

পরের সংবাদ

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বিদেশে অর্থ পাচার : অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

অর্থ পাচার কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস ব্যবহার করে বিলিয়ন ডলারের ডিজিটাল হুন্ডি চক্র আড়ালে বেড়েই চলেছে। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএসএফ) এজেন্ট ব্যবসার আড়ালে গত এক বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ প্রায় ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে জানা গেছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। সম্প্রতি বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়- এসব এমএফএস সেবা ব্যবহার করে হুন্ডি কার্যক্রম চালিয়ে আসা এমন ৫ হাজারের বেশি এজেন্টের সন্ধান পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। ইতোমধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে চক্রটির ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া সন্ধানপ্রাপ্ত অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। হুন্ডি সবসময় রিজার্ভের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের অর্থনীতির ঝুঁকি মোকাবিলায় হুন্ডি কার্যক্রমে আরো সচেতন নজরদারি জরুরি। দেশে অনেকদিন ধরেই অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার ও দেশের বাইরে অবস্থানরতদের কষ্টার্জিত অর্থ বিদেশ থেকে বাংলাদেশে না এনে স্থানীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে মানি লন্ডারিং অপরাধ করে আসছে কতিপয় চক্র। সিআইডির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, অপরাধীরা ৩টি দলে ভাগ হয়ে এই অবৈধ কাজটি করে। প্রথম গ্রুপ বিদেশে অবস্থান করে প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে ও দেশ থেকে যারা টাকা পাচার করতে চায় তাদের দেয়। দ্বিতীয় গ্রুপে আছে অর্থ পাচারকারী ও তাদের সহযোগীরা। তারা দেশীয় মুদ্রায় ওই অর্থ এমএফএস এজেন্টদের দেয়। তৃতীয় গ্রুপ অর্থাৎ এজেন্টরা বিদেশে অবস্থানকারীর কাছ থেকে প্রাপ্ত এমএফএস নম্বরে দেশীয় মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করে। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো বিদেশ থেকে যারা অবৈধভাবে টাকা পাঠাচ্ছেন তারাও অনেকে জানেন না। আবার দেশে যাদের কাছ থেকে টাকা পাচ্ছেন তারাও সরল মনেই টাকাগুলো নিচ্ছেন। এতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অধরা থেকে যাচ্ছে অপরাধী চক্র। কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাই যথেষ্ট নয়, বিদেশ থেকে যারা টাকা পাঠাচ্ছেন তাদের ও প্রবাসীদের আত্মীয়স্বজন যারা দেশে আছেন তাদেরও সচেতন হতে হবে। যে কোনো প্ররোচনায় অবৈধভাবে টাকা লেনদেনের বিরুদ্ধে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। আমাদের দেশে মামলা হয় কিন্তু বছরের পর বছর সেগুলো অমীমাংসিত অবস্থায় ঝুলে থাকে। বিচার প্রক্রিয়ার এই দীর্ঘসূত্রতায় আরো শক্তিশালী ও কৌশলী হয়ে ওঠে অপরাধী চক্র। তারা বারবার অপরাধের সুযোগ ও সাহস পায়। জানা গেছে, সিআইডিতে এ সংক্রান্ত ১৪৫টি মামলা এখনো অমীমাংসিত অবস্থায় রয়েছে, যেগুলো প্রায় ৫ বছর আগের। আমরা চাই সব মামলার কাজ দ্রুত শেষ হোক। এসব অর্থ পাচারকারীর বিরুদ্ধে কেবল মামলা করে কোনো সুফল মিলবে না, যদি আইনের আওতায় তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা না যায়। পাচার হওয়া এই অর্থের পরিমাণ একই সঙ্গে আতঙ্ক এবং উদ্বেগের। কারণ যে পরিমাণ টাকা পাচার হয়েছে, তা বড় রকমের দুর্নীতি। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি, সবক্ষেত্রেই তার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। আমরা ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হব এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার আশা করছি। দেশে যে হারে দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছে এবং বিভিন্নভাবে সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে, তাতে এসব লক্ষ্য অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, উন্নত দেশে পরিণত হতে হলে আবশ্যিকভাবেই কয়েকটি বিষয়ের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। গণতন্ত্র, সুশাসন, ন্যায়বিচার, বৈষম্য হ্রাস এবং বাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। হুন্ডি কার্যক্রমে সূ² নজরদারিসহ জনসাধারণের কষ্টার্জিত অর্থ পাচার রোধে অবশ্যই পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়