প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
ইসমাইল হোসেন বাবু, ভেড়ামারা (কুষ্টিয়া) থেকে : ভেড়ামারায় কৃষকরা পানির অভাবে পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। কৃষকরা পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না। এখন বর্ষা মৌসুম তবুও ভারি বৃষ্টির দেখা নেই ভেড়ামারা উপজেলায়। কৃষকরা বৃষ্টির আশায় পাট কেটে জমিতে গাদি সাজিয়ে রেখেছেন।
এ বছর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার খাল, বিল ও জলাশয়ে তেমন পানি নেই। এলাকার কৃষকরা বলছেন খাল, বিল ও জলাশয়ে যে পানি আছে তা পাট পচানোর জন্য যথেষ্ট নয়। পাট রোদে পুড়ে মরে লালচে হয়ে যাচ্ছে ক্ষেতেই। তাই উপায় না পেয়ে অপরিষ্কার অল্প পানিতে পাট জাগ দিতে হচ্ছে কৃষকদের। ফলে পানি পচে পাটের রঙ কালো হয়ে যাচ্ছে। কালো পাট বাজারে নিয়ে কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন না।
জুলাই-আগস্ট মাস শেষ। সেপ্টেম্বর মাসের ৮ দিন চলে গেল এখন পর্ষন্ত কোনো ভারী বৃষ্টিপাত হয়নি। খাল-বিলেও তেমন পানি নেই। তাই পানির অভাবে কৃষকরা পাট জাগ দিতে পারছেন না। প্রচণ্ড রোদের তাপে পাট শুকিয়ে যাচ্ছে ক্ষেতেই। ভেড়ামারা উপজেলার জুনিয়াদহ ইউনিয়নের নলুয়া গ্রামের কৃষক মিন্টু বলেন, আমি এক একর জমিতে পাটের চাষ করেছিলাম। ফলনও ভালো হয়েছে। তবে পাট কেটে এখন বিপাকে পড়েছি। পানির অভাবে পাট পচানোর জায়গা নেই। তাই সড়কের পাশে ফেলে রেখেছি।
উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের ক্ষেমিরদিয়াড় গ্রামের মুঞ্জিল বলেন, অন্যান্য বছরগুলোতে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে প্রচুর বৃষ্টি হলেও এ বছর বৃষ্টি নেই। পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছি না। প্রচণ্ড রোদে কাটা পাট শুকিয়ে যাচ্ছে। ভেড়ামারা উপজেলার আটষট্টি পাড়া গ্রামের হেলাল বলেন, এ বছর আমি কয়েক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। আমার পাটের ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু খাল-বিলে পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে পারছি না। উপজেলার অধিকাংশ পাট চাষিদের একই অবস্থা। চলতি বছর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ৪১২০ হেক্টর জমিতে পাট এর টার্গেট ছিল। বাস্তবে আবাদ হয়েছে ৪২৯০ হেক্টর জমিতে, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। পাটচাষ বেশি হলেও, পানির অভাবে সমস্যা দেখা দিয়েছে পাট জাগ নিয়ে। উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের ক্ষেমিরদিয়াড় গ্রামের কৃষক আম্বু জানান, এ বছর তিনি চার বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না তিনি। গত বছর পাটের দাম বেশি পাওয়ায় চলতি বছর পাটের আবাদে ঝুঁকে পড়েন কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার কৃষকরা। পাট আবাদ নির্বিঘেœ হলেও এখন পাট কাটা ও জাগ দেয়া নিয়ে বিপদে পড়েছেন কৃষকরা। কেউ কেউ শ্যালো মেশিন দিয়ে পানির ব্যবস্থা করলেও তাতে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। নিশ্চিত লাভ জেনেও পানির অভাবে কৃষকের স্বপ্ন অধরা থেকে যাচ্ছে। এমনিতেই পাট চাষে অনেক পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় হয়। পচা পানিতে আঁশ এড়ানো শ্রমিকদের মজুরিও বেশি।
উপজেলার জগশ্বর গ্রামের পাটচাষি আব্দুর রাজ্জাক ও পরানখালী গ্রামের শাবান আলী জানান, এবার বৃষ্টিপাত কম, পাট জাগ দিতে পারছি না। তাছাড়া নদীতে পাট জাগ দিতে গেলে আনা নেয়ার খরচ উঠবে না। আশপাশে শ্যালো মোটরের ব্যবস্থা না থাকায় সেচের পানিও পাচ্ছি না।
ভেড়ামারা কৃষি অফিসার শায়খুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় এবার জমিতে পাটের আবাদ অনেক ভালো হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। তবে যে বৃষ্টি হয়েছে তা পাট পচানোর জন্য যথেষ্ট নয়। বেশ কিছুদিনের খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে পাট চাষিরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। বিল অঞ্চলে একটু পানি রয়েছে। কিন্তু উচু অঞ্চলে পানির সংকট। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে এ সমস্যা দূর হবে বলে তিনি আশা করেন।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।