কোহলির সেঞ্চুরি : আফগানদের ওপর ঝাল মিটাল ভারত

আগের সংবাদ

ভারতের সাত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ঢাকায় আমন্ত্রণ : উত্তর-পূর্বের সঙ্গে সংযোগে গুরুত্ব

পরের সংবাদ

বিলোনিয়া স্থলবন্দর দিয়ে চালু হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিমুখী বাণিজ্য

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সৈয়দ মনির আহমদ, ফেনী থেকে : দীর্ঘ এক যুগ পর ফেনীর বিলোনিয়া স্থলবন্দর দিয়ে দ্বিমুখী বাণিজ্য চালু হচ্ছে। কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার (কুমিল্লা) স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সম্প্রতি এ তথ্য জানা গেছে। শিগগিরই এখানে রেললাইন চালু হবে। তাই এ স্টেশন দিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য ছাড়া সব ধরনের পণ্য আমদানির অনুমতির জন্য সব আমদানি ও রপ্তানিকারক এবং সিএন্ডএফ এজেন্টদের বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে বিলোনিয়া স্থলবন্দর দিয়ে বৃহৎ পরিসরে আমদানি-রপ্তানির জন্য এবং সব ধরনের পণ্য আমদানি করার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
জানা গেছে, ২০০৯ সালে বিলোনিয়া স্থলবন্দর ঘোষণা করা হয়। স্থলবন্দর নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালে ৩৯ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়। প্রকল্পটি গত জুন মাসে শেষ হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ একর জমি অধিগ্রহণ করে ওপেন স্ট্যাক ইয়ার্ড, পার্কিং ইয়ার্ড, গুদামঘর, ৩ তলা অফিস ভবনসহ যাবতীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। এখন চালুর অপেক্ষায় আছে। আগে থেকেই এটি শুল্ক স্টেশন হিসেবে কার্যকর ছিল।
বিলোনিয়া স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে আমদানি-নিষিদ্ধ পণ্য ছাড়া সব ধরনের পণ্য আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। বিলোনিয়া শুল্ক স্টেশন এক সম্ভাবনাময় কাস্টমস স্টেশন। বিলোনিয়া স্থলবন্দর থেকে পরিবহন উপযোগী সুপরিসর রাস্তা নির্মিত হয়েছে। বিলোনিয়ায় কাস্টমসের বড় স্থাপনা ও পর্যাপ্ত জমি রয়েছে।
সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য জাকিয়া সুলতানা ফেনীর বিলোনিয়া স্থলবন্দর পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি কাস্টমস, বন্দর, ইমিগ্রেশনসহ বিলোনিয়া স্থলবন্দরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন। পাশাপাশি বন্দরের অবকাঠামো, ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা-অসুবিধার ব্যাপারে খোঁজখবর নেন।
আমদানি-রপ্তানিকারক ও সিএন্ডএফের সভাপতি ও কুমিল্লা চেম্বার এন্ড কমার্সের সহসভাপতি জামাল আহমেদ জানান, এ বন্দর দিয়ে নিষিদ্ধ পণ্য ব্যতীত সব ধরনের পণ্য আমদানির অনুমতির দাবি দীর্ঘদিনের। তিনি জানান, ইতোমধ্যে আমদানিকারকরা পণ্য আমদানি করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। বিলোনিয়া স্থলবন্দর চালুর পর থেকে একমুখী বাণিজ্য চলে আসছিল। বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্য সুবিধা বাড়াতে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ফেনীর বিলোনিয়া শুল্কবন্দর ২০০৯ সালের ৪ অক্টোবর স্থলবন্দর হিসেবে কার্যক্রম শুরু করা হয়। দেশের ১৭তম স্থলবন্দর হিসেবে বিলোনিয়া স্থলবন্দর আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেয়া হয়।
স্থলবন্দরটিতে বর্তমানে একজন ল্যান্ড কাস্টমস কর্মকর্তা, একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও দুই জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। ইট, পাথর, সিমেন্ট, রড, রপ্তানি হচ্ছে ভারতে। অন্যদিকে ভারত থেকে মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, কাঠ, বীজ, কয়লা, গম, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, হলুদ ও আদা আমদানির অনুমোদন থাকলেও দীর্ঘ এক যুগ ধরে শুধু একমুখী বাণিজ্য চলে আসছিল।
বিলোনিয়ার ব্যবসায়ী মো. গিয়াসউদ্দিন জানান, প্রতিদিন রপ্তানি কার্যক্রম চললেও বন্দরে কোনো কর্মকর্তা থাকেন না। তাই ব্যবসায়ীদের ফেনীতে গিয়ে কর্মকর্তাদের সই করিয়ে আনতে হয়। আমদানি ও রপ্তানিকারক এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার আলী ভুট্টো জানান, প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ ট্রাক মালামাল লোড-আনলোড হয়। ব্যবসায়ীদের আরো অভিযোগ- শুধু অবকাঠামোগত সমস্যা নয়, বিলোনিয়া সীমান্ত ফাঁড়ির বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডও (বিজিবি) বিভিন্ন অজুহাতে দীর্ঘ সময় ধরে ট্রাক আটকে রাখে। আমদানিকারকরা জানান, অবকাঠামোর দিক থেকে এ স্থলবন্দর পূর্ণতা অর্জন করতে পারলেও ভারতের ব্যবসায়ীরা এ বন্দর দিয়ে বাণিজ্যের জন্য তেমন আগ্রহী হয়ে উঠছে না।
বিলোনিয়া স্থলবন্দর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ইব্রাহিম জানান, দ্বিমুখী বাণিজ্যের কথা শুনে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। দ্বিমুখী বাণিজ্য শুরু হলে বন্দর পূর্ণতা পাবে।
এ ব্যাপারে বিলোনিয়া ল্যান্ড কাস্টমসের রাজস্ব অফিসার মো. আল আমিন ভোরের কাগজকে জানান, উদ্বোধনের পর থেকে ভারতে ইট, সিমেন্ট, পাথর, শুঁটকি রপ্তানি করে এই পর্যন্ত প্রায় ৫০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৮ লাখ টাকা ভ্রমণকর আদায় করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, ভারতের বিলোনিয়া কাস্টমস কর্মকর্তাদের বাধার কারণে সেই দেশ থেকে পণ্য আমদানি হচ্ছে না। যাত্রীদের ভ্রমণ কর জমা দেয়ার জন্য ব্যাংকের একটি শাখা প্রয়োজন। আমদানি-রপ্তানির সুবিধার্থে প্রয়োজনীয় পূর্ণাঙ্গ অবকাঠানো এখনো স্থাপিত হয়নি। জনবল সংকটও আছে।
এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে বারবার অবহিত করেছি। দ্বিমুখী আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চললে বন্দরের পরিপূর্ণতা আসবে। ইতোমধ্যে বন্দরের কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে।
উদ্বোধনের ব্যাপারে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর বলেন, ভারতের সঙ্গে স্থলপথে বাণিজ্য আরও সম্প্রসারণ করতে শিগগিরই আরো ৩টি স্থলবন্দর চালু করতে যাচ্ছে সরকার।
এই স্থলবন্দরগুলো হলো খাগড়াছড়ির রামগড়, ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বিলোনিয়া ও ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের গোবড়াকুড়া-কড়ইতলি। এর মধ্যে বিলোনিয়া ও গোবড়াকুড়া-কড়ইতলি স্থলবন্দরের অবকাঠামো পুরোপুরি প্রস্তুত। আর রামগড়ে অস্থায়ী অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের পরপরই এই তিনটি স্থলবন্দরের উদ্বোধন করতে চায় তারা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে উদ্বোধনের জন্য সময় চাওয়া হবে। আমরা তিনটি বন্দর পরিচালনা করতে প্রস্তুত, ইতোমধ্যে আমরা তা জানিয়ে দিয়েছি। এসব বন্দর চালু হলে দুই দেশের মধ্যে আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য আরো মসৃণ হবে, বাড়বে বাণিজ্য।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়