আব্দুল মজিদ মল্লিক, আত্রাই (নওগাঁ) থেকে : আত্রাইয়ে দেশি প্রজাতি মাছের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে ভরা মৌসুমেও শুঁটকি তৈরিতে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। মৌসুমের শুরুতেই শুঁটকি তৈরির জন্য সাজ-সরঞ্জাম প্রস্তুত করা হলেও মাছের অভাবে সেগুলো এখন মাছশূন্য পড়ে রয়েছে। অন্যান্য বারের মতো এবার এলাকায় তেমন বর্ষা না হওয়ায় নদী ও খাল বিলের পানি কমে যাওয়ায় যে সময় দেশি মাছে বাজার সয়লাব থাকার কথা সে সময় দেখা মিলছে না দেশি মাছের। ফলে শুঁটকি ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা।
জানা যায়, উত্তর জনপদের মৎস্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত আত্রাই মাছ বাজার। প্রতিদিন শত শত টন মাছ আত্রাই থেকে রেল, সড়ক ও নৌপথে দেশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত করা হয়। সে অনুযায়ী শুঁটকি উৎপাদনেও আত্রাইয়ের যথেষ্ট প্রসিদ্ধি রয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলের রংপুর, নিলফামারী, সৈয়দপুর, কুড়িগ্রাম, দিনাজুপরসহ দেশের প্রায় ১৫-২০ জেলাতে বাজারজাত করা হয় আত্রাইয়ের শুঁটকি মাছ। আর এ মাছের শুঁটকি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন শতাধিক পরিবার। উপজেলার ভরতেঁতুলিয়া গ্রাম শুঁটকি তৈরিতে বিশেষভাবে খ্যাত। এ গ্রামের শতাধিক শুঁটকি ব্যবসায়ী এ পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত। শুধু বর্ষা মৌসুমে শুঁটকি তৈরি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করে তারা পরিবারের সারা বছরের ভরণপোষণ নিশ্চিত করেন। এবার ভর বর্ষা না হওয়ায় নদী ও খাল-বিল প্রায় পানি শূন্য হয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে দেশীয় প্রজাতির মাছের তীব্র সংকট। ফলে বাজারে মাছ কম কিন্তু মূল্য বেশি হওয়ায় শুঁটকি তৈরিতে খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় শুঁটকি ব্যবসায়ীদের মনে আনন্দ নেই। তাদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম হতাশা।
ভরতেঁতুলিয়া গ্রামের শুঁটকি ব্যবসায়ী মঞ্জুর মোল্লা, উসমান শেখ, আব্দুস ছাত্তার সরদার, মোজাহার মোল্লা, নাফিকুল সরদার বলেন, শুঁটকি ব্যবসার সঙ্গে আমরা দীর্ঘদিন থেকে সম্পৃক্ত। শুঁটকি তৈরিতে অর্থ খরচের সঙ্গে সঙ্গে যথেষ্ট শ্রম ব্যয় হয়। সর্বপোরি রোদ-বৃষ্টি ও মাছের দুর্গন্ধ সবকিছুকে উপেক্ষা করে পরিবার পরিজন নিয়ে এ পেশা চালিয়ে আসছি। পুঁটি, খোলসানী, চাঁন্দা, রাইখর, সাটিমাছসহ বিভিন্ন জাতের দেশি মাছের শুঁটকি আমরা তৈরি করি। এর মধ্যে বিশেষ করে পুঁটি ও সাটি মাছের শুঁটকির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এবার মাছ কম কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় আমাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে। অনেকে শুঁটকি তৈরির সরঞ্জাম তৈরি করলেও মাছের অভাবে সেগুলো পড়ে রয়েছে। এবার ব্যবসা মন্দা হওয়ায় সারা বছর পরিবার পরিজন নিয়ে আমরা কীভাবে চলবো তা নিয়ে আমরা চরম উদ্বিগ্ন রয়েছি।