কোহলির সেঞ্চুরি : আফগানদের ওপর ঝাল মিটাল ভারত

আগের সংবাদ

ভারতের সাত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ঢাকায় আমন্ত্রণ : উত্তর-পূর্বের সঙ্গে সংযোগে গুরুত্ব

পরের সংবাদ

দুর্গাপূজা নিয়ে ‘আতঙ্কের কথা’ তুলে ধরলেন হিন্দু নেতারা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** আসন্ন দুর্গোৎসবে ২১ দফা নির্দেশনা ** বছরের আট মাসে ৫৪টি সাম্প্রদায়িক হামলা ** ‘ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জনজীবনের নিরাপত্ত চাই’ স্লোগান নির্ধারণ **

কাগজ প্রতিবেদক : ‘ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জনজীবনের নিরাপত্তা চাই’ স্লোগানকে ধারণ করে এবার দুর্গাপূজা উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। গতকাল শুক্রবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মেলাঙ্গন প্রাঙ্গণে সংগঠনটির বর্ধিত সভায় বক্তারা সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর ঘটে যাওয়া একের পর এক হামলার প্রেক্ষাপটে তাদের ‘আতঙ্কের কথা’ তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে গতবারের দুর্গাপূজার সময় হামলার ঘটনা তুলে ধরে তারা বলেন, সেই ঘটনার একবছর হয়ে যাচ্ছে, তবু আমরা ভয়ে তটস্থ থাকি। সবসময় তাড়া করে বেড়ায়- এই বুঝি আবার আমাদের প্রতিমা ভাঙতে আসছে। বিশেষ করে যেদিন শুক্রবার থাকে সেদিন ভয় আরো বাড়ে। দিনের পর দিন এসব ঘটনা ঘটলেও এর বিচার না হওয়ায় মৌলবাদীরা ঝেঁকে বসেছে বলে তারা মনে করেন। এই সভা থেকে আগামী দুর্গাপূজা সফল করার লক্ষ্যে ২১ দফা নির্দেশনাও দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চলমান সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার এসব ঘটনাগুলোর পেছনে বড় নিয়ামক। এরকম পরিস্থিতির মধ্যেই আগামী ১ অক্টোবর থেকে এবারের দুর্গোৎসব ও দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে। ১৯৭২ এর সংবিধানের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সকল সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের নিরসন করার কথা জানিয়েছেন তারা।
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ বর্ধিত সভায় সারাদেশ থেকে সংগঠনের জেলা ও উপজেলার নেতারা উপস্থিত হন এবং বক্তৃতা দেন। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জে এল ভৌমিকের সভাপতিত্বে আয়োজিত সভার শুরুতেই সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে ৫৪টি সাম্প্রদায়িক হামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, গত বছর শারদীয় দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, রংপুর, কক্সবাজার, চট্টগ্রামসহ প্রায় ২০/২৫টি জেলায় সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে। গত ১৬ জুলাই নড়াইল ট্র্যাজেডি জাতির বিবেককে কতটা নাড়া দিতে পেরেছে জানিনা; তবে সাম্প্রদায়িক নির্যাতন-নিপীড়নের আরো একটি বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সমাজ প্রত্যক্ষ করল। তিনি বলেন, সংঘবদ্ধভাবেই মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট হয়েছে। এরইমধ্যে দু’বার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে সারাদেশে সাম্প্রদায়িক নির্যাতন-নিপীড়ন এবং ফেসবুকে মিথ্যা-বানোয়াট স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
সংগঠনের সভাপতি জে এল ভৌমিক গতবছরে দুর্গাপূজার সময় হামলা-ভাংচুরের ঘটনার কথা টেনে এনে বলেন, এবার সারাদেশের প্রত্যেক পূজামণ্ডপের সামনে ‘ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জনজীবনের নিরাপত্তা চাই’ এরকম লেখা একটি ব্যানার ঝুলানো হবে। এতে কি আপনাদের মত আছে- এমন প্রশ্নের জবাবে সবাই হ্যাঁ সূচক মত দেন। এরপরই তিনি বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বলে না তারাই মন্দির ভাঙে, প্রতিমা ভাঙে। যারা মন্দির ভাঙবে, প্রতিমা ভাঙবে, নারীদের অপহরণ করবে তাদের প্রতিহত করার ডাক দিয়ে তিনি বলেন, অধিকার আদায় করে নিতে হবে। এসময় তিনি সরকারি টাকায় মডেল মসজিদ নির্মাণের প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় মডেল মসজিদ হচ্ছে। মডেল মসজিদ নির্মাণে আপনার আমার হিন্দুদের টাকাও আছে। আমাদের দাবি হচ্ছে-মডেল মন্দিরও করতে হবে।
ঢাকা মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মনীন্দ্র কুমার দেবনাথ বলেন, যত বাধাই আসুক আমরা এই দেশের নাগরিক, এই দেশেই থাকব। এখনো আমাদের সংখ্যা ২ কোটির ওপরে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি তাহলে এখনো অনেক কিছু করা সম্ভব। সংগঠনের সাবেক সভাপতি শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার বলেন, সমস্যা অনেক। সমাধানও করতে হবে। আঘাত করলে প্রত্যাঘাত করতে হবে। সংগ্রাম করেই টিকে থাকতে হবে। মানসিকতায় দৃঢ়তা আনতে হবে।
ঢাকা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বরুন ভৌমিক নয়ন বলেন, যেখানে যে অসুর আছে সেখানেই সেই অসুরের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। চুপ করে ঘরে বসে থাকলে হবে না। চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক হিল্লোল সেন বলেন, গতবারের সাম্প্রদায়িক হামলা থেকে শিক্ষা নিয়ে আসন্ন দুর্গাপূজাকে কীভাবে নিñিদ্র নিরাপত্তায় পালন করা যায় তা নিয়ে

আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, এবার নির্বাচনের আগের বছর। কাজেই আসন্ন দুর্গাপূজায় যাতে কোনো ঝামেলা না হয় সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। সিলেট মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত বলেন, গত বছর মায়ের কপাল থেকে সিঁদুর মুছে দিয়েছিল ওরা। এবার যাতে এমনটি না হয় সে ব্যাপারে চোখ কান খোলা রাখতে হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রসন্ন কুমার কানু বলেন, গত বছর মাত্র ৩ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন করতে হয়েছে। এমন দিন দেখার জন্য আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করিনি। এমন ধারার পরিবর্তন চান তিনি। ফরিদপুর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ড. যশোদা জীবন দেবনাথ সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হয়ে দিল্লি ঘুরে এসেছেন। দিল্লির মানুষজন বাংলাদেশের হিন্দুরা কিভাবে আছে সেটি জানতে চায় বলে গতকালের বক্তৃতায় জানিয়েছেন তিনি। তার ফরিদপুরে এবার ৭৯০টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। সিলেট জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন ঘোষ বলেন, আশা করছি এবারের পূজায় গতবারের মতো কোনো ঘটনা ঘটবে না। নারায়নগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অরুণ কুমার সাহা বলেন, নারায়ণগঞ্জে হিন্দুদের সম্পত্তি বেহাত হয়ে যাচ্ছে। এগুলোর বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো সুরাহা পাওয়া যায় না। কুমিল্লায় ঘটনা ঘটে, বিচায় হয় না। এসব কারণে সাম্প্রদায়িক হামলা বেড়েই চলেছে। মুন্সীগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সমর কুমার ঘোষ বলেন, জাতীয় সংসদে আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ১৮ জন এমপি আছেন। তারা সেখানে কোনো কথা বলে না। তারা তো আমাদের প্রতিনিধি। তারা কথা বললে হয়ত বিচার প্রক্রিয়ায় গতি পেত। বিচার হলে মৌলবাদীরা এসব কাজ করতে আর সাহস পেত না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়