কোহলির সেঞ্চুরি : আফগানদের ওপর ঝাল মিটাল ভারত

আগের সংবাদ

ভারতের সাত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ঢাকায় আমন্ত্রণ : উত্তর-পূর্বের সঙ্গে সংযোগে গুরুত্ব

পরের সংবাদ

কাউনিয়ার নারীদের তৈরি টুপি যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গৌতম সরকার, কাউনিয়া (রংপুর) থেকে : কাউনিয়া উপজেলায় টুপি শিল্পের নীরব বিপ্লব ঘটেছে। এখানকার গৃহিনীদের হাতের তৈরি সুঁই-সুতোয় আলপনা তোলা টুপি এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে জাপানসহ ওমান, সৌদি আরব, কাতার, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে।
এতে করে গ্রামের সহায় সম্বলহীন হাজার হাজার নারী অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছেন।
জানা গেছে, গ্রামগঞ্জের নারীরা গৃহস্থালীর কাজ করার পর অবসর সময় শুয়ে বসেই কাটাতেন। অনেকেই সেলাই- ফোঁড়াইয়ের কাজ করলেও সেগুলোতে অর্থ উপার্জনের তেমন সুযোগ ছিল না। তাদের হাতে যখন থেকে টুপিতে নিপুন কারুকাজের সুঁই-সুতার সরঞ্জাম উঠেছে, তখন থেকেই তাদের দিন বদলানো শুরু হয়েছে। এখন তাদের আর শুয়ে-বসে গল্প গুজবে সময় কাটানোর সময় নেই। হাজারো নারী সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি পরিবারের বাড়তি উপার্জনের জন্য এখন হাতে তুলে নিয়েছেন টুপি তৈরির কাজ। সুঁই-সুতোয় তারা সারা বছর লাখ লাখ টুপিতে নানা রঙ্গের সুতোয় আলপনা তুলছেন। আর সেই টুপির সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশে।
কাউনিয়া উপজেলার শাহবাজ, থানাপাড়া, খোপাতি, হলদিবাড়ী, শহীদবাগ, হারাগাছ, রাজিব, গনাই, নিজপাড়া, মাঝিপাড়া, ঢুষমারা, হয়বৎখাঁ, নাজিরদহ, পল্লীমারী, গদাই, পাঞ্জর ভাঙ্গার, গোপীডাঙ্গা, প্রাননাথসহ ৪০টি গ্রামে এখন বছর জুড়ে নারীদের কর্মযজ্ঞ চলছে। কারো কোনো ফুরসত নেই। কখনো দাঁড়িয়ে কখনো বসে সারাদিন ব্যস্ত টুপি তৈরিতে।
কথা হয়, উপজেলার সাহাবাজ গ্রামের টুপি তৈরির কারিগর চার সন্তানের জননী স্বপ্না বেগমের সঙ্গে। তিনি জানালেন, একখণ্ড বসতভিটা ছাড়া অর্থ সম্পদ বলতে কিছুই নেই তাদের। একমাত্র উপার্জক্ষম দিনমজুর স্বামীর আয়ে তাদের ৬ জনের সংসার চলছিল না। সংসারে অভাব-অনটন যেন নিত্যদিনে সঙ্গি। এরপর অভাবের সংসারে সহযোগিতা করতে তিনি কাজের সন্ধান করতে থাকেন। একপর্যায়ে খুঁজে পান টুপিতে হাঁসু ও গুটির সেলাইয়ের কাজ।
তিনি জানান, প্রথমদিকে টুপিতে হাঁসু ও গুটির কাজ করতে কষ্ট হলেও এখন আর সমস্যা হয় না। এখন নিপুণভাবে এ কাজ শেষ করতে পারছেন। পাঁচ বছর ধরে টুপির কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার ভালোই চলছে। এখন তার সংসারে তেমন কোনো অভাব নেই। তিনি জানান, তার মতো প্রায় ২৫ হাজার নারী এখানে সুঁই-সুতোয় নিজেদের স্বপ্ন বুনে চলেছেন। আর সেই বুননে থাকছে বাহারি কারুকাজ।
এই কারুকাজ খচিত টুপি দেশের চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। মধ্যপ্রাচ্যের টুপির বাজার জয় করেছে বাংলাদেশের স্বপ্না, আম্বিয়া, ফিরোজা ও জাহানারাদের আঁকা স্বপ্ন। আর টুপিতে এ স্বপ্ন এঁকে দারিদ্র্যকে জয় করেছেন এরা। রাজেন্দ্র গ্রামের দিপালী রানী জানালেন, প্রায় চারবছর আগে সংসারে অভাব-অনটন ছিল তার নিত্যসঙ্গী। সংসারে অভাবের কারণে পরিবারের সবাইকে প্রায় উপাস তাদের থাকতে হতো। এরপর অভাবের সংসারে সহযোগিতার জন্য প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করি টুপি সেলাইয়ের কাজ। এখন টুপি সেলাইয়ের কাজ করে প্রতিমাসে আয় হচ্ছে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। তিনি বলেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে বাড়িতে নতুন ঘর উঠিয়েছি আর টুপি সেলাই করে ঋণের কিস্তি দিচ্ছি।
জানা গেছে, উত্তরের অবহেলিত রংপুরের তিস্তা নদীর তীরবর্তী কাউনিয়া উপজেলার শাহবাজ গ্রামের হাফেজ আবদুল আউয়াল মণ্ডল ২০০৩ সালে মাত্র ১৫ জন নারী নিয়ে গড়ে তোলেন এমএমসি নামের টুপির কারখানা। বর্তমানে এমএমসি টুপির কারখানাসহ আরো ৩টি টুপির কারখানা রয়েছে। কাউনিয়া উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রামের ২৫ হাজার দরিদ্র নারীরা টুপি তৈরির কাজ করে খুঁজে পেয়েছেন সুখের ঠিকানা।
এমএমসি কারখানায় তৈরি হয় দুই ধরনের টুপি। একটি টুপি তৈরিতে খরচ হয় ৫৫০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা। প্রতিটি টুপিতে ব্লক ছাপাতে ছয়জনকে মাসে বেতন দিতে হয় ১৮ হাজার টাকা। কারখানায় রয়েছে ৪০টি সেলাই মেশিন। ৩২ জন মহিলা ও ৮ জন পুরুষ টুপি সেলাইয়ের কাজ করেন। তারা টুপিপ্রতি মজুরি পান ২০ টাকা। কারুকাজ বা হস্তশিল্পের কাজ করেন ১৫০ জন। টুপিপ্রতি এরা পান ২০ টাকা।
এ ছাড়া টুপি সেলাই কাজে কারখানাটির অধীনে বাড়িতে বসে কাজ করছেন ২৫ হাজার নারী। কারখানা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাড়িতে বসে টুপিতে গুটি সেলাইয়ের কাজ করে একেকজন পান ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। তৈরি শেষে একেকটি টুপি বিক্রি হয় ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। কারখানার কর্মী খাদিজা, জহিদা, শাহাজাদি, সবুরা, কহিনুর, রোজিনা, সালমা, লাভলী, মর্জিনা, পেয়ারী, বিথী সুলতানা, রহমান, হাফিজুর রহমান জানালেন, দিনে তারা ৮-১০টি টুপি সেলাই করতে পারেন। এতে আয় হয় ১৬০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। শাহাজাদি, সবুরা, কহিনুর, রোজিনা ও মর্জিনা জানালেন, টুপিতে সুঁই-সুতা ও বকের কাজ করে ৪ হাজার টাকা বেতন পেলেও শান্তি এটাই, সংসারে দারিদ্র্য পরাজিত করে এখন তারা সংসারে অর্থের জোগান দিতে পারছেন।
কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল আউয়াল জানান, ওমানে পাকিস্তানি টুপির চাহিদা বেশি। এরপরই বাংলাদেশের স্থান। প্রথম দিকে তৈরি টুপি দেশীয় পাইকারদের মাধ্যমে তিনি মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি করতেন। ২০০৫ সাল থেকে নিজেই বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রপ্তানি করছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়