বাম গণতান্ত্রিক জোটের হুঁশিয়ারি : দমন-পীড়ন করে গদি রক্ষা করা যাবে না

আগের সংবাদ

চার কারণে ভ্যাট আদায়ে বিপর্যয়

পরের সংবাদ

সুলতানা কামাল : মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির কাছে নতিস্বীকার করেছে সরকার

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : মানবাধিকারকর্মী ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সভাপতি এডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, রাষ্ট্র মানবাধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। এখন যারা ক্ষমতায় আছেন, তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ব্যবহার করছে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির কাছে সরকার নতিস্বীকার করেছে। তারা চেতনার বাইরে গিয়ে মৌলবাদীদের সঙ্গে আপসের নীতি অনুসরণ করছে। যে সরকার নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার বলে দাবি করে, তাদের কাছ থেকে আমরা এসব আশা করি না। পুলিশের ভূমিকার নিন্দা জানাতে জানাতে ক্লান্ত হয়ে গেছি।
সাতক্ষীরার নরেন্দ্র মুন্ডা হত্যা ও আদিবাসী ভূমি দখলের প্রতিবাদে ৯টি আদিবাসী ও নাগরিক সংগঠনের যৌথ আয়োজনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, আহত মুন্ডার গৃহবধূ রিনা মুন্ডা, মুন্ডাদের অধিকার সংরক্ষণ আন্দোলন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আশিক-ই-এলাহী প্রমুখ।
সুলতানা কামাল বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে

মানবাধিকার রক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে, কিন্তু তারা সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। মানবাধিকার, নারীর সমতা, ন্যায়বিচার ও পাঠ্যপুস্তকে সাম্য নীতি থেকে সরকার সরে যাচ্ছে। সব আদিবাসী সম্প্রদায়ের সঙ্গে ধর্ষণ, হত্যা, অত্যাচার, নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু এসব ঘটনার বিচার হয় না। সাতক্ষীরার নরেন্দ্রনাথ মুন্ডা হত্যা মামলার মূল আসামিরা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে, কিন্তু মানুষের মানবাধিকার রক্ষা করে না। রাষ্ট্র মানবাধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। দেশে আদিবাসীদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন এবং সম্পত্তি বেদখলের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন ঘটনায় পুলিশের ভূমিকার নিন্দা জানাতে জানাতে আমরা ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমরা চাই, পুলিশ নিজেদের দিকে ফিরে তাকাক। কেন সংবাদ সম্মেলন করে হত্যার বিচার চাইতে হবে? রাষ্ট্রের দায়িত্ব জাতি-ধম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মানবাধিকার রক্ষা করা। এসময় তিনি অবিলম্বে নরেন্দ্রনাথ মুন্ডা হত্যার আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচার এবং স্থানীয় মুন্ডা পরিবারগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ভুক্তভোগী ও মামলার বাদী ফনিন্দ্রনাথ মুন্ডা বলেন, গত ১৯ আগস্ট জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রভাবশালী ভূমিগ্রাসী মহলের হামলায় ১২ জন মুন্ডা নারী-পুরুষ আহত হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার চাচা নরেন্দ্রনাথ মুন্ডা মারা যান। জমিটি নিয়ে মামলা চলছে। আমরা বলেছিলাম, আদালতের রায় যা হবে তা মেনে নেব, তার আগে কিছু নয়। কিন্তু তারা তা না মেনে মারধর করে এবং ফসল নষ্ট করে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কেউ হামলার পর এগিয়ে আসেনি। ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ আমাদের উদ্ধার করে। তিনি বলেন, হত্যা মামলার ৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলেও প্রধান আসামি রাশিদুল ও এবাদুলকে এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে সরকারের কাছে ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে- অবিলম্বে নরেন্দ্রনাথ মুন্ডা হত্যার মূল আসামিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি নিশ্চিত করা, ধুমঘাট এলাকার মুন্ডাদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ১৯৫০ (৯৭) সালের রাষ্ট্রীয় প্রজাস্বত্ব আইন যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশেষ ব্যবস্থায় আদিবাসী মুন্ডাদের জমি ফেরত দেয়া, ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকার করা জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা, জেলা প্রশাসকের বিনা অনুমতিতে আদিবাসীদের যেসব জমি হস্তান্তর হয়েছে বা জাল দলিলের মাধ্যমে বেদখল হয়েছে সেসব দলিল বাতিল করা, মুন্ডাসহ সমতলের আদিবাসীদের জন্য সরকারের প্রতিশ্রæত ভূমি কমিশন গঠন করা, আদিবাসীদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করা প্রভৃতি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়