বাম গণতান্ত্রিক জোটের হুঁশিয়ারি : দমন-পীড়ন করে গদি রক্ষা করা যাবে না

আগের সংবাদ

চার কারণে ভ্যাট আদায়ে বিপর্যয়

পরের সংবাদ

রাহুলের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ : দলের ভাঙন নাকি মোদি ঠেকানোর কর্মসূচি?

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : কয়দিন আগেই দলের প্রবীণ নেতা গোলাম নবীসহ সিনিয়র দের দল ত্যাগের পরে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বেই ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ কর্মসূচি শুরু করল ভারতের শতাব্দী প্রাচীন রাজনৈতিক দল কংগ্রেস। বুধবার বিকেলে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও মূলত পদযাত্রা শুরু হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে। কন্যাকুমারী থেকে প্রায় ৩ হাজার ৫৭০ কি.মি দীর্ঘপথ পাড়ি দেবেন কংগ্রেস সমর্থকরা। তবে এই কর্মসূচিকে কটাক্ষ করে বিজেপি বলছে, রাহুল পাকিস্তানে গিয়ে কর্মসূচি করুক।
১৯৯১ সালে এখানেই রাহুলের বাবা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধীকে হত্যা করা হয়েছিল। বুধবার দলীয় কর্মসূচি শুরু করার আগে বাবার স্মৃতিসৌধে যান রাহুল। সেখান থেকেই যাত্রা করেন কন্যাকুমারীর উদ্দেশে। কর্মসূচি নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াংকা গান্ধী বলেন, আমরা ইতিবাচক রাজনীতি শুরু করতে যাচ্ছি। আমরা আপনাদের কথা শুনতে আসছি। আপনাদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব। আমাদের ভালোবাসার দেশকে আমরা জুড়তে চলেছি। আসুন ভারতকে আমরা একসূত্রে বাঁধি।
২০২৪ সলের লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখেই এই যাত্রার আয়োজন করেছে কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার যাত্রা শুরুর আগে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন রাহুল। দীর্ঘ পথে ১২টি রাজ্য ও দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল অতিক্রম করবেন তারা। প্রতিদিন গড়ে ২২ কিলোমিটার হাঁটার পরিকল্পনা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে শুরু হয়ে চলবে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। মধ্যে বিশ্রাম। তারপর ৩.?৩০ থেকে শুরু হয়ে চলবে ৬টা পর্যন্ত। যাত্রাপথে একাধিক জনসভা করবেন রাহুল।
যোগ দেবেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও। দলীয় ওয়েবসাইটে সরাসরি সম্প্রচার হবে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’। দলের বার্তা দিয়ে বাজানো হবে গান। কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা শশী থারুর বলেন, ‘ভারতের সংবিধানে ধারণ করা আদর্শ রক্ষায় নানাভাবে আমরা অস্তিত্বের সংগ্রামে রয়েছি। এই লংমার্চের বার্তা হলো আমরা হলাম সেই দলের, যে দলটি ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। কংগ্রেসের আরেক নেতা জয়রাম রমেশ বলেন, একইভাবে দলের প্রেরণাকে পুনরুজ্জীবিত করা।
২০১৪ সালে মোদি ভারতে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই কংগ্রেসের বিরামহীন পতন চলছে। পরপর দুটি সাধারণ নির্বাচনে বিজেপির কাছে ধরাশায়ী হয় দলটি। বিধানসভা ভোটে দেশটির ৪৫টি রাজ্যের ৪০টিই হাতছাড়া হয়। বর্তমানে ছোট্ট দুটি রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা দলটি কোন্দলে জর্জরিত। অনেকেই মনে করছেন, কংগ্রেস সম্মেলন-সংস্কার সবই করছে, নেই শুধু মোদি ঠেকানোর দিশা।
কংগ্রেস নিয়ে বিস্তর লেখালেখি করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জয়া হাসান। তিনি বলেন, দলটি আশা করছে, এই পদযাত্রা রাহুলের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে। এই লংমার্চ তাকে ফের জাতীয় নেতা হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টা বলেই মনে হচ্ছে।
এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আরও বলেন, ভারতীয় সমাজে যখন ব্যাপকভাবে মেরুকরণ করা হয়েছে, এমন সময়ে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার দিকে মনোনিবেশ করা একটি আবশ্যিক বার্তা। সবার উচিত এটাকে স্বাগত জানানো। তবে ভারতের বিশ্লেষকরা এই কর্মসূচিকে ঘিরে তেমন ইতিবাচক কিছু দেখছেন না। সাম্প্রতিক লংমার্চগুলোর ফলাফল ছিল মিশ্র। ১৯৮৩ সালে বিরোধীদলীয় নেতা চন্দ্র শেখর লংমার্চ কর্মসূচি করেছিলেন। এই পদযাত্রা থেকে কোনো রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করতে পারেননি তিনি। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ১৯৯০ সালের লংমার্চের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিজেপি নেতা এল কে আদভানি। মিনি ট্রাকে ১০ হাজার কিলোমিটার যাত্রার পরিকল্পনা করেন তিনি, যা দেখতে অনেকটা রথের মতো ছিল। অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির নির্মাণে সমর্থন জোগাতে এই লংমার্চের আয়োজন করা হয়। সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদকে বিজেপির কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডায় জায়গা করে দিতে আদভানির এই পদযাত্রা গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে ওঠে।
ব্রিটিশ শাসনকে উপেক্ষা করে ১৯৩০ সালে গুজরাটের পশ্চিম উপকূলে মহাত্মা গান্ধী ৩৮০ কিলোমিটার যাত্রা করেন। তার ওই যাত্রা এখন পর্যন্ত ভারতে সবচেয়ে ঐতিহাসিক লংমার্চ হিসেবে বিবেচিত হয়। গণমাধ্যম এই লংমার্চকে ‘মহাকাব্যিক ও পৌরাণিক’ বলে অভিহিত করেছিল।
তবে বিজেপি নেতা বৈজয়ন্ত পান্ডে বলেন, বর্তমানে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অন্যান্য জনসমাবেশের মাধ্যমে নতুন ধরনের বার্তা গ্রহণের প্রবণতা আছে। সে ক্ষেত্রে লংমার্চ শুধু তখনই সফল হবে, যখন নেতার ‘জনসম্পৃক্ততা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা’ থাকে।
অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মহেশ রঙ্গরাজনের মতো অনেকেই মনে করেন, রাহুল কী বার্তা দিচ্ছেন? মোদি ঠেকানোর কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছেন তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। অনেকেই মনে করেন, নাকি দলের ভাঙন ঠেকাতেই এই কর্মসূচি, শুধু সময়ই বলে দেবে রাহুলের এই দীর্ঘযাত্রা সফল নাকি ব্যর্থ হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়