বাম গণতান্ত্রিক জোটের হুঁশিয়ারি : দমন-পীড়ন করে গদি রক্ষা করা যাবে না

আগের সংবাদ

চার কারণে ভ্যাট আদায়ে বিপর্যয়

পরের সংবাদ

ড. আকবর আলি খান আর নেই

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ শিক্ষাবিদ ড. আকবর আলি খান আর নেই। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। কয়েকদিন ধরে তিনি ঠাণ্ডাজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন।
পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, আকবর আলি খান বাড়িতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে জরুরি ভিত্তিতে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা জানান, হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়েছে।
পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, গতকাল রাতে আকবর আলি খানের মরদেহ এভারকেয়ার হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। আজ শুক্রবার সকাল ৯টার পর মরদেহ তার গুলশানের বাসায় নেয়া হবে। বাদ জুমা জানাজা অনুুষ্ঠিত হবে। এরপর তাকে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আকবর আলি খানের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছেন।
আকবর আলি খান ১৯৪৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এর পর কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি নেন। সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে

পেশাজীবন শুরু করা আকবর আলি খান ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হবিগঞ্জের মহুকুমা প্রশাসক (এসডিও) ছিলেন। সেসময় সক্রিয়ভাবে মুজিবনগর সরকারের সঙ্গে কাজ করেন তিনি। এজন্য পাকিস্তান সামরিক সরকার তার বিচার করে। তার অনুপস্থিতিতেই তাকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। স্বাধীনতার পর তিনি আমলা হিসেবে পেশাজীবনে প্রবেশ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশে আকবর আলি অর্থসচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আকবর আলি খান ২০০৬ সালে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা নিযুুক্ত হন। পরবর্তীতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়ার আশঙ্কায় তিনি তিনজন উপদেষ্টার সঙ্গে একযোগে পদত্যাগ করেন। তিনি রেগুলেটরি রিফর্মস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগের অসহযোগ আন্দোলনে আকবর আলি সমর্থন দেন। পাকিস্তান বাহিনীর আক্রমণ শুরু হলে তিনি হবিগঞ্জ পুলিশের অস্ত্র সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ করে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রাণিত করেন। মুজিবনগর সরকার তখনো প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় অনেক সরকারি কর্মচারিই লিখিত অনুমতি ছাড়া অস্ত্র যোগান দিতে অস্বীকৃতি জানান। ফলে আকবর আলি খান নিজ হাতে লিখিত আদেশ তৈরি করে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র, খাদ্য ও অর্থ যোগান দেয়ার আদেশ প্রদান করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য তহবিল তৈরি করতে ব্যাংকের ভল্ট থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা উঠিয়ে ট্রাকে করে আগরতলায় পৌছে দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্য যোগান দেবার জন্য গুদামঘর খুলে দেন এবং পরবর্তীতে আগরতলায় চলে যান। আগরতলায় যাওয়ার পর সহযোগীদের নিয়ে তিনি একটি পূর্বাঞ্চলীয় প্রশাসন গড়ে তোলার চেষ্টা করেন যার লক্ষ্য ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করা এবং একই সঙ্গে উদ্বাস্তু শিবিরে যারা আশ্রয় নিয়েছিল সেই শরণার্থীদের সহায়তা করা। প্রথমদিকে তাদের প্রচেষ্টা ছিল স্বনির্ভর। এপ্রিলে মুজিবনগর সরকার গঠিত হওয়ার পর মে মাসে তিনি যোগাযোগ শুরু করেন। জুলাই মাসে (১৯৭১) তাকে সরকারে যোগ দেয়ার জন্য কলকাতায় যেতে বলা হয় এবং সেখানে তিনি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ডেপুটি সেক্রেটারি বা উপসচিব হিসাবে পদস্থ হন। আগস্ট মাসে তাকে উপসচিব হিসাবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভ অবধি তিনি এই পদেই চাকরি করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়