বাম গণতান্ত্রিক জোটের হুঁশিয়ারি : দমন-পীড়ন করে গদি রক্ষা করা যাবে না

আগের সংবাদ

চার কারণে ভ্যাট আদায়ে বিপর্যয়

পরের সংবাদ

এত কেন বাড়ছে ওষুধের দাম

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ওষুধ হচ্ছে এমন রাসায়নিক দ্রব্য, যা প্রয়োগে প্রাণীদেহের স্বাভাবিক ক্রিয়া প্রভাবান্বিত হয়, যার আরোগ্য ও প্রতিরোধের ক্ষমতা আছে অথবা যা শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। যেহেতু অসুস্থতা হবে, অতএব উপশমের জন্য ওষুধ গ্রহণ করতেই হয়। তাই ওষুধ একটি অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্য। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো রপ্তানিকারক দেশে কাঁচামালের মূল্য কমলেও বাংলাদেশে ওষুধের মূল্য কমানো হয় না। ২০১৯ সালের ২২ জুলাই ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একটি নথি থেকে জানা যায়, এক হাজার টাকার কাঁচামাল দিয়ে ৫০ হাজার পিস ওষুধ তৈরি হলে একটি ওষুধের কাঁচামালের (সক্রিয় উপাদান) খরচ পড়ে দুই পয়সা। বাজার ঘুরে দেখা গেল, নামিদামি ব্র্যান্ডগুলোর ওমিপ্রাজল ২০ মিলিগ্রাম ক্যাপসুলের প্রতি পিসের সর্বোচ্চ খুচরামূল্য গড়ে ৫ টাকা। ২০১৯ সালের ২২ জুলাইয়ের মাসখানেক পরে বিশ্ববাজারে ওমিপ্রাজল ৮.৫ শতাংশ পেলেট নামক কাঁচামালটির দাম ৪ ডলার কমে প্রতি কেজি ৮ ডলার হয়েছে বলে ওষুধ প্রশাসনের নথি থেকে জানা গেছে। সেই দামে আনা কাঁচামাল দিয়ে বানানো একেকটি ওষুধে সক্রিয় কাঁচামালের পিছনে খরচ পড়েছে দেড় পয়সারও কম। কিন্তু ২০১৯ সালের পর ওমিপ্রাজল গ্রুপের ওষুধের দাম কোম্পানিগুলো কমায়নি (দি রিপোর্ট ডট কম, ০১-০৪-২২) ওষুধের মূল্য নির্ধারণে ফার্মেসি ইন্ডাস্ট্রির প্রভাবের সুযোগ থাকায় বেড়ে যাচ্ছে মূল্য। অধ্যাপক ডা. রশিদ ই মাহবুব বলেন, ‘এসেনশিয়াল ড্রাগের বাইরে যে ওষুধ রয়েছে সেগুলোর মূল্য নির্ধারণ করে ওষুধ কোম্পানিগুলো। আর তারা সেটা করে থাকে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে। এই মূল্য নির্ধারণ করার সময়ে ফার্মেসি ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিরা সেখানে থাকেন। কিন্তু বিশ্বের অন্য কোনো দেশে ফার্মেসি ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিরা ওষুধের মূল্য নির্ধারণের সময় উপস্থিত থাকেন না (সোনালী নিউজ, ১৯-১২-১৬)।’
কাঁচামালের দাম বেড়ে গেলে সংশোধিত ব্লকলিস্ট দেখিয়ে ওষুধের দাম পুনরায় নির্ধারণের জন্য আবেদন করে কোম্পানিগুলো। কিন্তু কাঁচামালের দাম কমে গেলে ওষুধের দাম কমিয়ে পুনরায় নির্ধারণ করা হয় না। ১৯৯৪ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বলা হয়, এসেনশিয়াল ড্রাগ ছাড়া বাকি সব ওষুধের দাম নির্ধারণ করবে প্রস্তুতকারী কোম্পানি। আর তারাই সবকিছু ঠিক করে দিয়ে কেবল ভ্যাট দেয়ার জন্য ওষুধ প্রশাসন থেকে অনুমোদন নেবে। আইনের দুর্বলতা ও প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার অভাবে ওষুধের অযৌক্তিক মিশ্রণ দেখিয়ে মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ নেয়া। বাংলাদেশের কোনো কোম্পানিকে ওষুধের পেটেন্টের জন্য মোটা খরচ করতে হয় না। কাঁচামালও আমদানি করা হয় সস্তা দরে। শুল্ক ভ্যাটে সরকারি ছাড় মেলে। সামান্য কাঁচামাল দিয়ে বিপুল পরিমাণে ওষুধ তৈরির সুযোগ রয়েছে। সস্তা শ্রমিক কর্মচারী ও উৎপাদন খরচ কম। এছাড়া প্যাকেজিং পরিবহন খরচও কম। তারপরও ওষুধের দাম বাড়া অযৌক্তিক।
‘২০১৯ সালে প্রকাশিত ইবিএল সিকিউরিটিজের একটি গবেষণায় বলা হয়, ২০১৮ সালে বিপণন খাতে স্কয়ার খরচ করেছে ৯৯৬ মিলিয়ন টাকা, বেক্সিমকো ৪২৮ মিলিয়ন, রেনাটা ৩৩৮ মিলিয়ন, একমি ১৬৪ মিলিয়ন, ইবনে সিনা ৩২ মিলিয়ন টাকা। সরকারি সমীক্ষায় দেখা গেছে ওষুধ কোম্পানিগুলো তাদের মোট টার্নওভারের ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ ব্যয় করে বিপণন খাতে (ফক্স থ্রি ডট কম, ৩০ মার্চ, ২০২২)।’ বিপণনের কৌশল হিসেবে ডাক্তার রিচকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেয়া, যার কারণে বিশাল বহরের মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভদের উচ্চ বেতনে নিয়োগ দিতে হয়। আইনত ওষুধ কোম্পানি পণ্যের বিজ্ঞাপন দিতে পারে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুনিরউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘দেশে ওষুধের বিপণনে ওষুধ কোম্পানিগুলোর খরচ দিন দিন বাড়ছে এবং ওষুধের দামও সেই হারে বাড়ছে। আইনত ওষুধ কোম্পানিগুলো পণ্যের বিজ্ঞাপন দিতে পারে না। (ফক্স থ্রি ডট কম, ৩০ মার্চ, ২২)।’ আলোচনার সারমর্ম হিসেবে বলতে চাই যে, মূলত সরকার ও ওষুধ প্রশাসনের নির্লিপ্ততা এবং ওষুধ কোম্পানিগুলোর বাণিজ্যিক কৌশলগত ব্যয়বহুল বিপণনের কারণেই ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতএব এর প্রতিবিধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু পদক্ষেপ কাম্য।

ডা. হাসান শহীদুল আলম : লেখক ও চিকিৎসক, চট্টগ্রাম।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়